পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] গাছা কঞ্চির ছড়ি লইয়া সবেগে তাহার পৃষ্ঠে কয়েক ঘ বসাইয়া দিয়া কহিলেন । “পাজি, নচ্ছার, ঘড়িটা শেষ করেছিস ।” বালক এতক্ষণ মুগ্ধনেত্রে ঘড়ির চাকার গতি নিরীক্ষণ করিতেছিল ; আচমকা বিষম আধাত পাইয়া কানাইলাল যন্ত্রণায় চীৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিল। মহেশ্বরী পূজায় বসিয়াছিলেন। শিশুর আর্তনাদ দূর হইতে তীরের মত র্তাহার বুকে গিয়া লাগিল। তিনি পূজা ফেলিয়া ছুটিয়৷ আসিলেন, শৈলবালা রান্নাঘরের উনানের উপর কড়া ফেলিয়া বাহির হইয়া আসিল । বলাই ও শান্তি থেল। ফেলিয়া সেখানে আসিয়া দাড়াইল । কানাই এমন করিয়া কাদিয়া উঠিল কেন তাহ জানিতে তাহার শিশুসার্থীদের মন চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছিল ! মহেশ্বরী দেখিলেন, বালকের পৃষ্ঠ দিয়া রক্তের ধারা বহিয়া চলিয়াছে । বেদনায় তাহার চোখ ফাটিয়া জল বাহির হইয়া আসিতেছিল, পুত্রের উপরে রাগট কোনোপ্রকারে ভাঙ্গা ঠেকাইয়া রাগিয়াছিল । নিৰ্ম্মমপুত্রের নিৰ্ম্মমত দ্বিগুণ করিয়া দেখাইয় তাহার অভিমানী যা শিশুর উপর নূতন অত্যাচার স্বরু করিলেন। তিনি সজোরে কানাইলালের কান টানিয়া ধরিয়া উঠানের একধিকৃ হইতে অন্যদিকে টানিয়া লইয়া যাইতে যাইতে বলিলেন, “যা, এখনি বের হু এবাড়ী থেকে, এটো পাত কখন স্বগে ধায় ? বের হ বলছি—নচেং ঐ কঞ্চি দিয়ে আমি আবার ছ’ঘা বসিয়ে দিচ্ছি। সেয়ান হয়েছিস্—ধা নিজের বাড়ী চলে’ ধ।” কানাইলাল কঁদিতে-ক্টাদিতে যখন স্থির হইল, তখন মায়ের আঁচল চাপিয়া ধরিয়াই কহিল, “মা, বড় জল ছে— আর কয়ূব না ; বাড়ী কোথায় মা ?” ● মহেশ্বরী তাহাকে দূরে ঠেলিয়া দিয়া আঁচল টানিয়া লইয়া তর্জন করিয়া কহিলেন, “বাড়ী তোর সাত চুলোয় । যা, ঐ ধরে গিয়ে বসবি। ঘর থেকে যদি বের হবি—মেরে খুন করব।” এই বলিয়া কানাইলাল যে-ঘরে থাকিত তিনি আঙল নাড়িয়া তাহাকে সেই ঘর দেখাইয়া দিলেন । অশ্রু মুছিতে-মুছিতে মানমুখে বালক তথায় যাইতে २ বামুন-বাগদী s উষ্ঠত হইলে তিনি আবার ছুটিয়া আসিয়া ধমক দিয়া বলিলেন, “নে—আর যেতে হবে না, দাড়া ।” বিস্মিত বালক স্থির হইয় দাড়াইল । মহেশ্বরী তখন মহা ব্যস্ত হইয়া সাবান ও জল লইয়া গিয়া বালকের ক্ষত-স্থান ধুইয়া পরিষ্কার করিয়া দিলেন। শৈলবালা ইতিমধ্যে কতকগুলি গাদাফুলের পাত হাতে রগড়াইয়া সরস করিল । মহেশ্বরী তাই ক্ষতস্থানে লাগাইয় একটা পটি বাধিয়া দিলেন ; এবং তাহাকে ধরে লইয়া গিয়া শয়ন করাইয়া, তিনি তাহার পাশ্বে ঝুকিয়া বসিয়া বাতাস করিতে লাগিলেন, ও ক্ষণে-ক্ষণে মাথায় হাতে পায়ে হাত বুলাইয়া যেন তাহার সর্বাঙ্গের বেদন মুছিয়া লইতে লাগিলেন । স্বখেন্দু আহারাদি করিয়া চলিয়া গেলে, শৈলবালা অন্নব্যঞ্জন লইয়। কতক্ষণ রান্নাঘরে বসিয়া রহিল । কিন্তু যখন কানাই বা তাহার শ্বশী কাহারও ধরের বাহিরে আসিবার সম্ভাবনা দেখিল না, তখন সে ভীতভাবে আস্তে-আস্তে মহেশ্বরীর কক্ষের নিকটে আসিল । এবং • চোরের মত দ্বারের কাছে দাড়াইয়া রহিল। এইরূপে কিছুকাল দাড়াইয়া থাকিবার পর সে বলিয়া উঠিল, “মা ! কানাই খাবে না ? ভাত বেড়েছি।” মহেশ্বরী তখন বাতাস করিতেছিলেন । বলিলেন, “যে-আঘাতটা লেগেছে, এবেলা আর ভাত দিয়ে কাজ নেই।” শৈল কহিল, “তবে তুমি এস, বেল ত কম হয়নি, কখন স্বান করবে—আর কখন বা খাবে ? মহেশ্বরী কহিলেন, “তুমি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে নেওগে, আমার দেরী হবে ।” শৈলবালা আরও কিছুকাল বসিয়া থাকিয়া চলিয়া গেল ; এবং স্বামীকে ডাকিয়া দিল । বালকের পৃষ্ঠে ক্ষত করিয়া দিয়া স্বখেন্দু বিশেধ অমৃতপ্ত ও লজ্জিত হইয়া পড়িয়াছিলেন । মায়ের কাছে তখনকার মত মুখ দেখাইতে র্তাহার সাহস হইতেছিল না, কিন্তু যখন শুনিলেন, তাহার,জননী তখনও পৰ্য্যন্ত আহার করেন নাই, তখন কলঙ্কিত হস্তখানি লইয়া