পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] মুখ বাকাইয়া কহিলেন, “দেখ দেখি কি করে গেছ । বামুন-পণ্ডিতের ঘর, তোমার এটো-কাটা কে ছোবে বলো ত ? পাতাটা ওদিকে ফেলে’ দিয়ে এস ; এই জল নাও, গোবর নাও এটোটা পেড়ে ফেলো । কানাই তাহার উপদেশ-মত সমস্ত করিল, কিন্তু সহসা নিষ্কৃতি পাইল না । ননদিনী দেখান,—এই ষে এখানে এটি রয়েছে। সেখানটা পাড়া হইলে, আর একখানে ; এইরূপে কানাইলের হস্তে সমস্ত ঢেকি-ঘরটা মাজা-ঘব হইয়া নূতন কলেবর ধারণ করিল। তার পর সে অব্যাহতি পাইল । বলাই শাস্তিকে একাকী পাইয়া কহিল, "দিদি, দেখলে কানাই-দাকে নিয়ে এরা কি-রকম করছে ? এইসকল দেখিয়া-শুনিয়া শান্তি অত্যন্ত কাতর হইয়া পড়িয়াছিলেন। সে বলিল, “কি করব ভাই ? ওকে দেখছি না অনিলেই ভালো ছিল। বলাই অভিমানের সুরে কহিল, ‘কেন, বড়-মা পারেন আর এরা পারে না ? তুমিও যেমন কিছু বলতে পারো না ? শাস্তি কহিল, ‘আমার কথা কে বা শুনবে ! বড়-মা এসকল শুনলে না জানি কি মনে করবেন। সঙ্গে একটা লোক নিয়ে নৌকা করে তোরা বাড়ী চলে’ যা ।” কানাই বাহিরের ঘরে আসিয়া সেই বেঞ্চের উপরেই শুইয়া পড়িল । সে ভাবিতে লাগিল—তাহার উচ্ছিষ্ট তাহার মহেশ্বরী-মা ভিন্ন বোধ হয় আর কেহ ছুইতে পারেন না। সে এমুনি অস্পৃশু হতভাগ্য। কিন্তু তরকারীগুলো একসঙ্গে একাকার করে’ না দিলেও ত পারিত ! তাহাতে কাহারো মর্য্যাদার ত হানি হইত না। বরং কানাই বোধ হয় ভালোভাবে না খাইতে পারিয়া এইরূপে নানা স্থানে নানা সংঘর্ষ উপস্থিত হইয়া একটা এলোমেলো অবোধ্য অভিজ্ঞতা কানাইলালের মনের মাঝে বোঝার মতন জমা হইয়া উঠিতে লাগিল । কেন যে এমন হইতেছে তাহা সে ভালো করিয়া বুঝিতে পারিল না। কিন্তু আঘাত ও অপমান যে নানাদিক্ দিয়া তাহার গায়ে আসিয়া লাগিতেছে তাহ অনুভব করিতে তাহার দেরী হইল না। বামুন-বাগদী ዓዓሉ© রাত্রিকালে শয্যার জন্ত কানাইলালকে একটি মান্থর ও একটি বালিশ দেওয়া হইল। সে ভূমিতলে মাদুরটি বিছাইয়া গায়ের র্যাপারখানি মুড়িম্বড়ি দিয়া শুইয়া পড়িল । কিন্তু যতই রাত্রির পরিমাণ বৃদ্ধি হইতে লাগিল, ততই শীতে তাহাকে র্কাপাইয়া-কাপাইয়া আড়ষ্ট করিয়া তুলিতে লাগিল। শেষ রাত্রে যে এমন অবসর হইয়া পড়িল যে, বাহিরে চাকরদের ধূমপানের জন্ত যে আগুনের মালসা রক্ষিত ছিল, যে তথায় আসিয়া তাহাই ক্রোড়ে লইয়া বসিল এবং র্যাপারখানির দুই-তিন জায়গায় দগ্ধ করিয়া তাহাতে শাস্তির শ্বশুরালয়ের স্বতিচিহ্ন চিরস্থায়ী করিয়া রাখিয়া দিল । এই বন্ধুহীন নিৰ্ম্মম গৃহ হইতে উড়িয়া পলাইয়া মহেশ্বরীর অঙ্কে স্থান লইবার জন্ম তাহার প্রাণ অফুক্ষণ আকুলি-বিকুলি করিতেছিল। পাছে শাস্তি কিছু মনে করে, এ-জন্ত সে মুখ ফুটিয়া কিছু বলিতে পারিল না। নীরবে সমস্ত নিৰ্য্যাতন সহ্য করিতে লাগিল, সমস্ত অপমান গায়ে মাখিয়া লইল । যেন এমনি আচরণ চিরকাল সকলেই তাহার সহিত করিয়া আসিয়াছে। ইতিমধ্যে মহেশ্বরী তাহাদের আনিবার জন্ত লোক ও নৌকা পাঠাইলেন । কানাই নৌকায় আসিয়া মুক্তি পাইল, বলাই লজ্জার দায় হইতে নিস্কৃতি লাভ করিল। কেবল শাস্তির মনট, কানাইলাল স্তুে-বাৰ্ত্তা বহন করিয়া লইয়া গেল, তাহা ভাবিয়া অশাস্ত হইয়া উঠিল। বটুকের বাড়ী পৌছিলে মহেশ্বরী কানাইকে নিকটে বসাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "দিদির বাড়ী আদর যত্ন কেমন ? দুঃখের কথা চাপা দিয়া কানাই কহিল, বেশ, ভালো।’ মহেশ্বরী হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভাত মেখে খাওয়াত কে ? তুই ত নিজে মেথে খেতেও জানিসনে। এমনি পণ্ডিত। কানাই কহিল, ‘আমি বুঝি আর মেখে-জুকে খেতে পারিনে ? বড়-মা, ভালো কথা, প্রথম দিন যা মজা হয়েছিল।’ “কি মজা হ’ল জাবার ?”