পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] দিতেছে —অন্যায় চিরদিনই কপটতার আবরণে সত্যের প্রাধান্য স্বীকার করে ! কিন্তু স্বাদেশিকতার একটা ভালো দিক্‌ আছে বলিয়া আমরা মনে করি এবং শুধু সেই অর্থেই আমরা উহাতে আস্থাবান। একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝাইবার চেষ্টা করিতেছি । যিনি আপন পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন এবং পরিবারস্থ প্রত্যেকের পরস্পরের মধ্যে পীভির বন্ধন রাথিতে চান অন্য পরিবারের সঙ্গে তাহার কোনো বিরোধ করিতে হুইবে এমন কোনো কথা নাই । তাহাকে শুধু দেখিতে হইবে যে, স্বপরিবারের প্রতি অত্যধিক প্রীতি দেশের কাজে তাহাকে যেন অমনোযোগী বা বিরোধী না করিয়া তোলে। পক্ষান্তরে তাহাকে সৰ্ব্বদাই মনে রাখিয়া চলিতে হইবে যে র্তাহার পরিবারের মঙ্গল দেশের অন্য সকলের মঙ্গলের সহিত জড়িত । একথা যেমন পরিবারের পক্ষে সত্য তেমুনি জাতীয় ব্যাপারেও সত্য। ন্যাশন্যালিজম বা স্বদেশের মঙ্গলের জন্য ঐকাস্তিকতা অর্থে ভিন্নদেশের স্ববিধা অসুবিধার সহিত সংঘাত নহে । আবার এক জাতির মঙ্গল অন্তজাতির মঙ্গলের উপর নির্ভর করে বলিয়া, অন্য জাতির ক্ষতি করিয়া স্বদেশের স্বার্থসাধন-চেষ্টা মূঢ়তা ও পাপ ছাড়া কিছুই নহে । বস্তুতঃ মানবিকতাকে যদি এক বিশাল সুন্দর প্রাসাদরূপে কল্পনা করা হয়, তাহা হইলে বিভিন্ন জাতিগুলি সেই প্রাসাদ-নিৰ্ম্মাণের ইষ্টক। স্বতরাং প্রাসাদটি দৃঢ় করিতে হইলে প্রত্যেকটি ইটই সুন্দর ও মজবুত হওয়া প্রয়োজন । যেমন আন্তর্জাতিক ব্যবহারে অন্য জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়া কোনো একটি-বিশেষ জাতিকে সমৃদ্ধ করা মূখত, তেমনি জাতি-গঠনেও অন্য সকল সম্প্রদায়কে অসুবিধায় ফেলিয়া কোনো-একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে প্রাধান্ত দিবার চেষ্টা করা মূর্খত মাত্র। গৃহনিৰ্ম্মাতা অপেক্ষা জাতি-গঠনকারীর কার্য্য অনেক আয়াসসাধ্য। গৃহ-নিৰ্ম্মাতার কাজ প্রাণহীন জড় লইয়া, ইষ্টক ও মালমশলাদির ইচ্ছা-শক্তি ভাব প্রবণতা বা উত্তেজনা নাই। আপনার ইচ্ছামত ইষ্টক বা মশলাদি লই কাজ আরম্ভ করা যায়। কিন্তু জাতিগঠনে যে জাতি-গঠন ও বিচার-বুদ্ধি Եթe (: SAA AAAAS AAAAA AAAA AAAA AAAAMAMAMS উপাদানগুলি লইয়া কাৰ্য্য করিতে হয়, তাহ চেতনাসম্পন্ন এবং তাহাঁদের প্রত্যেকেরই স্ব-স্ব অন্তভূতি আছে। এইরূপ উপাদান লইয়া স্থায়ী হৰ্ম্ম্য গঠন করা সহজ কাৰ্য্য নহে। কারণ, যদিও মানুষ দলবদ্ধ হইয়া থাকিতে ভালোবাসে বলিয়া মামুষে মামুষে আকর্ষণ আছে, তথাপি নান। কারণে মাতুষ পরস্পর-বিরোধী হইয়। দূরে থাকিতেও চায় । স্বার্থ, প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা, জাতীয়ত, ধৰ্ম্মমত বা কোনো সংস্কার, জাতিভেদ ইত্যাদি ঐ কারণগুলির মধ্যে কয়েকটি । সম্পূর্ণভাবে ঐ কারণগুলির উচ্ছেজ- O সাধন সম্ভবপর নছে এবং পরস্পরের স্বাতন্ত্রা বজায় রাখাও অভ্যন্ত অবিশ্বক বলিয়া জাতিগঠনকারীকে সৰ্ব্বদাই সাবধানে থাকিতে হুইবে, যেন বিকর্ষণী শক্তি আকর্ষণী শক্তি অপেক্ষা প্রবলভর না হয় এবং যেন দলবদ্ধ থাকিবার স্পৃহা সকল স্বাতন্ত্রীকে বিনষ্ট না করে । সকল ধৰ্ম্মেই প্রেম ও প্রীতি শিক্ষা দেয় ; সুতরাং ধৰ্ম্ম কি আস্তজাতিকতা কি স্বাদেশিকভ দুইয়েরই সহায় হওয়া উচিত ; কিন্তু কাৰ্য্যতঃ দেখি যে ধৰ্ম্মের পরার্থপরতার শিক্ষা মাত্র অল্প কয়েক জনকে দেশ, জাতি, বর্ণ ওঁ সম্প্রদায়গত ক্ষুদ্রতাকে পরিত্যাগ করিতে সাহাধ্য করিয়াছে। একই ধৰ্ম্মমতাবলম্বী বিভিন্ন দলে কেবল মাত্র জাতি বা সম্প্রদায় গত পার্থক্যের জন্য ভীষণ বিরোধের অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বর্তমান । এই কারণে প্রকৃত জাতি গঠনকারীর লক্ষ্য রাখা উচিত যেন তিনি ধৰ্ম্মবিশ্বাসের দোহাই পাড়িয়া কাৰ্য্য সাধন করিতে গিয়া ধৰ্ম্ম-বিশ্বাসের গোড়ামির দিকুটায় অধিক দৃষ্টি না দেম, কারণ এই গোড়ামিকে প্রাধান্ত দিলে বা বড় করিয়া দেখাইলে মানুষে-মামুযে বিরোধ ঘনাইয়া উঠে এবং ঘূণাবৃত্তি ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষণ করার প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায় । বস্তুতঃ জাতি গঠনকারীর উচিত মামুষের ধৰ্ম্মবিশ্বাসের কথা একেবারে না তোলা ; কারণ, তাহা হইলে যে মতগুলি কেবলমাত্র পরমত অসহিষ্ণুতা ও গোড়ামি প্রচার করে তাহীদের যথাযথ নিন্দ বা বিচার ভিনি যুক্তি যুক্ত মনে করিবেন না। অবশ্য আমরা নিখিল মানবীয় ধৰ্ম্ম ও নীতির আদর্শের কথা বলিয়া আবেদন করার বিরোধী নহি ।