পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] অনুসরণ করিয়া চলিতে পারিত তাহা হইলে ভারতবর্ষে গঠিত এই আহম্মদীয় সম্প্রদায় অচিরেই বিনষ্ট হইত। কেহ-কেহ বলিতে পারেন যে, ইউরোপের গোড়া খৃষ্টধৰ্ম্মাবলম্বী জাতিগুলির একতা ও কার্যকরী ক্ষমতা প্রচুরপরিমাণে বিদ্যমান; জাতিগঠনে গোড়ামি না ছাড়িলেও যে চলে ইহা তাহার প্রমাণ ; কারণ গোড়া খৃষ্টধৰ্ম্ম যদি জাতির একতসাধনে বিরোধী না হয়, হিন্দু বা মুসলমান ধৰ্ম্মই বা কেন বিরোধী হুইবে ? উত্তরে ইহা বলা যায় যে, ইউরোপের ধর্মের গোড়ামির সহিত রাষ্ট্রের যোগ নাই বলিলেও চলে। রাষ্ট্রব্যাপারে লোকে জাতি ও দেশের স্থবিধা-অস্থবিধাই গণনা করে। অর্থাৎ জাৰ্ম্মান, ফরাসী, স্কচ, ইংরেজ হিসাবেই রাষ্ট্রব্যাপার পর্য্যালোচিত হয়— রোমান ক্যাথলিক, লুথার-সম্প্রদায়, অ্যাংলিকান মেথডিষ্ট বা প্রেস্বিটারিয়ান হিসাবে নয়। আসলে, ধৰ্ম্মযাজক বা পেশাদার ধৰ্ম্মপ্রচারকদিগের ভিতর ছাড়া সকল-প্রকার গোড়ামি পশ্চিম হইতে লোপ পাইতেছে। গির্জার উপস্থিতির সংখ্যার উত্তরোত্তর হ্রাসই ইহার প্রমাণ । ইউরোপ যদি অদ্যাপি গোড়া হইত তাহা হইলে আজিও য়িহুদী ও বিধৰ্ম্মাদিগকে দগ্ধ করা হইত ; রোমান ক্যাথলিক য়িহুদী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের ভিতর প্রচুর বিরোধ দৃষ্ট হইত এবং সম্ভবত দাসত্ব প্রথা অদ্যপি থাকিভ। বস্তুতঃ আমরা ইহা চাই যে, যেন আমাদের ভবিষ্যৎ দেশবাসিগণ আশৈশব জীবনের কার্য্যক্ষেত্ৰ সৰ্ব্বভাবে বিস্তৃত দেখিতে শেখে। এই কারণে আমরা অসাম্প্রদায়িক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত দেখিতে চাই—যেখানে আমাদের বালকবালিকাগণ যে-কোনো ধৰ্ম্মাবলম্বী যেকোনো সম্প্রদায়ের সহপাঠীর সহিত মেলামেশা করিতে পারে। ইহাতে তাহাদের চরিত্রের সঙ্কীর্ণত বর্জিত হইবে, এবং তাহারা সকল-সম্প্রদায়-ভুক্ত লোকের মহত্ব ও প্রেমের আদর্শ উপলব্ধি করিয়া আপন সাম্প্রদায়িক গণ্ডীর বাহিরের লোককে৪ বিশ্বাস করিতে ও ভালোবালিতে সক্ষম হইবে। ইহারাই তখন পরম্পর কি অকৃত্রিম বন্ধু ও প্রতিবেশী হইবে ।

  • লোকে যাহাতে কতকগুলি গোড়া বিশ্বাস ও সংস্কার পরিত্যাগ করিতে পারে, তজন্ত আমাদিগের মধ্যে যথার্থ

জাতি-গঠন ও বিচার-বুদ্ধি

  • s سb

বিচারশক্তির উদ্রেক করা প্রয়োজন । প্রত্যেক বিভিন্ন সম্প্রদায়ে পৃথক্ভাবে এই বিচারবুদ্ধির বিকাশ ও চর্চা শৃহনীয়। প্রথম যখন হিন্দুসম্প্রদায়ে এই বিচারবুদ্ধি দেখা দিল, তখন র্যাহারা চিন্তাশীল তাহাদের কেহু-কেহ নিরীশ্বরবাদী, কেহ-কেহ অজ্ঞেয়বাদী, কেহ কঁৎমতাবলম্বী কেহ খৃষ্টিয়ান এবং কেহ বা ব্রাহ্ম হইয়া পড়েন, ক্রমশ: হিন্দুগোড়ামির প্রভাব এতদূর হ্রাস পাইয়াছে যে, হিন্দুদের মধ্যে অনেক লোকের বিশ্বাস ও সংস্কার সাধারণ হিন্দুধৰ্ম্মবিরোধী বলিয়া গণ্য হইতে পারে, অবশু চিন্তাশীৰ ও* বিচারপরায়ণ নরনারী দলে-দলে নিন্দ ও অত্যাচার সহ করিয়াছেন বলিয়া আজ হিন্দুধর্মের এই উন্নত অবস্থা দৃষ্ট হইতেছে। আমরা জানি যে মুসলমান-সমাজেও সংস্কারমুক্ত বিতারপরায়ণ লোক আছেন । কিন্তু ইহারা আজিও নিন্দা-গ্লানি ও অত্যাচারের সম্মুখীন হইতে তেমন প্রস্তুত নহেন। বর্তমানে মুসলমান-সমাজে মোল্লা ও মৌলানারা সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রভাবশালী। ইহারা সময়ে-অসময়ে ফতোয় বা প্রত্যাদেশ-পত্র জাহির করেন । এইসব • ফতোয়ার সহায়তায় অসহযোগ প্রচার ও কাউনসিল-প্রবেশের জুবিধা করিয়া লইবার জন্ত মুসলমানসমাজের রাষ্ট্রীয় নেতারা এইসকল লোকের ক্ষমতা ও প্রভাব অনেক বৃদ্ধি করিয়া দিয়াছেন। এইরূপ করিলে প্রকৃত জাতিগঠন সম্ভবপর হয় न1 ।। আমাদের মধ্যে এই বিচারবুদ্ধির প্রবর্তন, বৰ্দ্ধন ও সংরক্ষণ করিতে হইলে আমাদিগকে যথার্থ উদার জাতীয় শিক্ষার বন্দোবস্ত করিতে হইবে । অসাম্প্রদায়িক, যথার্থ স্বাধীন, সংস্কারমুক্ত শিক্ষায় কেবলমাত্র অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীন জাতীয় ও আন্তজাতিক মনের স্বষ্টি হইতে পারে । গবর্ণমেণ্ট অনুমোদিত বিদ্যালয়সমূহে আদর্শ শিক্ষা দেওয়া ন হইলেও কতকগুলি সংস্কার হইতে সে-শিক্ষায় মনকে বিমুক্ত রাখে। যদি নানা ভাবের জাতীয় বিদ্যালয়গুলিতে এবিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বিত হয় তাহা হইলে তাহাই প্রার্থনীয়। কিন্তু জাতীয় শিক্ষা বুঝাইতে হিন্দুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব গোড়ামিপূর্ণ শিক্ষাই বুঝিয়া থাকে। তথাকথিত জাতীয় বিদ্যালয়গুলিতে সরস্বতী এবং