পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রেমের কাহিনী স্ত্রী সুরেশচন্দ্র নন্দী তখনে সন্ধ্যা হয় নাই ; রক্তিম রবির শেষ রশ্মি তরুণীৰ ও সমুদ্র-তরঙ্গকে আবীর-রঞ্জিত করিয়া গড়াইয়া-গড়াইয়৷ পূৰ্ব্বদিকে ধীরে-ধীরে মিশিয়া যাইতেছিল। সমুত্র তীরবর্তী বুক্ষশাখায় প্রকৃতি-শিশুরা দিবসের শেষগান করিতেছে! গোধূলির এই মান প্রকৃতির কোলে বসিয়া আমরা কয়েক জন বন্ধুতে চাপান করিতে-করিতে প্রেমের গল্প—সেই পুরাতন মামুলী প্রেমের গল্প করিতেছিলাম। চারস-বিভোর কোনো বন্ধু প্রণয়িনীর অধরস্থধা পানের মতন চিত্ৰবিচিন্ত্রিত রজত-পিয়ালায় অধর স্পর্শ করিয়া চাপান করিতে-করিতে চা-রগলিত্ত সরসকণ্ঠে প্রেমের মাহাত্ম্য কীৰ্ত্তন করিতেছিল । সমুদ্রতীরবর্তী আইভি ভিলার উপকক্ষে বসিয়া আমরা গল্প করিতেছিলাম ; সেই কক্ষের জানাল দিয়া সমুদ্র-তরঙ্গলীলা দেখা যাইতেছিল। সমুদ্রশীকর-সম্পজ যুদ্ধ-মধুর বাতাস আমাদের ললাটের ঘর্শ্ব মুছাইতেছিল। দূরে—অতিদূরে—দক্ষিণ দিকে অতীতের সাক্ষী-স্বরূপ আকাশগাত্রম্পর্শী পৰ্ব্বতচূড়া সগৰ্ব্বে মস্তকোত্তলন করিয়া দাড়াইয়া রহিয়াছে। স্নান গোধূলির সহিত মানব-হৃদয়ের কি সম্বন্ধ আছে জানি না,তবে দিনের আলো যত মান হইয়া আসিতেছিল, আমাদের মনোমধ্যেও কি জানি কি-এক বিষণ্ণ উদাস ভাবের উদয় হইতে লাগিল । আমাদের চা-রসসিক্ত সরস কণ্ঠস্বর তখন সঙ্গেসঙ্গে নরম হইয়া আসিতেছিল। “প্রেম" শব্দটি ধীরেধীরে একবার পুরুষের উৎসাহপূর্ণ কষ্ঠে, পুনরায় নারীর কোমল কণ্ঠে বীণা ধ্বনির মতন ঝঙ্কত হইয়া কক্ষটিকে পূর্ণ করিয়া রাখিয়াছিল । “আচ্ছা, কাহারও প্রেম কি চিরস্থায়ী হয় ?” “ईशां, श्छ ।” বন্ধু জোফার উত্তেজিত-স্বরে বলিলেন—“না কখনই না—অসম্ভব। এ কখনও হ’তে পারে না,--আর জানে, • confra–” তৎক্ষণাৎ মহা তর্ক-যুদ্ধ বাধিয়া গেল। হেনরী সাইমন একখানি বুলেটিন-বিশেষ। সে সহরের সব খবর রাখিত। ৯ গভীরভাবে ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া অনেক উদাহরণ দিয়া বিশেষবিশেষ প্রেমের ঘটনার উল্লেখ করিয়া নিজ বক্তব্যকে আমাদের মনের মধ্যে গাথিয়া দিবার জন্ত হাতমুখ । নাড়িয়া অনর্গল বকিয়া যাইতে লাগিল । বন্ধু হেকৃতর লোকটি বড় ধীর ও শান্ত-প্রকৃতির ; “সে তর্কের ধার ধারিত না—বেশ সহজ শাস্তভাবে বলিল, "আচ্ছা হেনরী, অত বাজে তর্ক করে এমন জমকালে আডিডাটি মাটি করে লাভ কি ?—তা’র চেয়ে নিজ-নিজ প্রেমের কাহিনী বলে না শুনি ; তা হ’লেই বোঝা যাবে, কার প্রেমের কত বৎসর, কত মাস, কত ঋতু, কও দিনের মেয়াদ । তা’র পর তোমার তর্ক।” মুহূর্তে তর্কজালমুখরিত কক্ষ শাস্ত ভাব ধারণ করিল। সকলেই শাস্তভাবে নিজ-নিজ প্রেমের স্থতির দোলায় ছলিতে লাগিল । স্ত্রী এবং পুরুষের দুটি হৃদয়ের মিলন-রহস্তের কথা গভীর আবেগে উৎসাহের সহিত কণ্ঠনালী অতিক্রম করিয়া জিহবায় আসিয়া মিশিয়া যাইতে লাগিল। সকলেই নীরব। এদিকে ধীরে-ধীরে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়াছে ; সন্ধ্যার বায়ুম্পর্শে ধীরে-ধীরে এক-একটি নক্ষত্র ফুটিতেছে। সমুদ্র-তীরলগ্ন ফুলবাগানে শুক-মুকুল নয়ন মেলিতেছে ; মুকুল-অধরে হাসি ফুটিতেছে। ভূমধ্যসাগর বীচিবিক্ষোভশূন্ত—স্থির। লবণাম্বুরাশির উপর নক্ষত্র প্রতিবিম্বিত হইয়া যেন অসংখ্য হীরকখও জলজল করিতেছে। “দেখ, দেখ, ওকি ! চেয়ে দেখ । জর্জ তুপোর্টিন সন্ধ্যার এই নীরব গাম্ভীৰ্য্য ভঙ্গ করিয়া হাত তুলিয়া জাড়াইয়া চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল—“ওকি, দেখ, দেখ, চেয়ে দেখ ” সমুজের উপর দিঙমগুলের নীচে এক বৃহদাকার পুঞ্জীভূত ধূসরবর্ণ অপরিচ্ছন্ন স্তুপীকৃত বৰ