পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

५2२ চারিধারে তাকাই, বিশ্বয়ের সীমা থাকে- না। তার পর বুদ্ধা আবার পরিষ্কার ফরাসী ভাষায় কথা কহিল। আমি মহাবিস্মিত হইয়া বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করিলাম—“আপনি কি বর্গিকার লোক নন ? বৃদ্ধ বলিল—না, আমরাও আপনার মতন মহাদেশের লোক ; আমরা এস্থানে পঞ্চাশ বৎসরের উপর বাস করিতেছি । আমি আরও আশ্চৰ্য্য হইলাম, কেমন করিয়া তাহারা মহুষ্য-সমাগমশুষ্ক বিপৎ সস্কুল অরণ্য-মধ্যে বিগত পঞ্চাশ বৎসর ধরিয়া বাস করিতেছে। বৃদ্ধার সহিত যতই কথোপকথন করি, ততই আমার বিশ্বয় বাড়ে। কিছুক্ষণ পরে এক কৃষক আসিলে আমরা একত্রে আহারে বসিলুমি । আহাৰ্য্য দ্রব্য সামান্ত ; মহাদেশবাসী আমাকে এই সামান্ত আহার্ঘ্য দিবার সময় বৃদ্ধার মুখে চোখে একটি সঙ্কোচের ভাব দেখিয়া আমি মহা আনন্দের সহিত আহারে প্রবৃত্ত হইলাম। দেখিলাম বুদ্ধার আনন্দের সীমা নাই ; নারীচিত্তের কোমলতা-মাধুর্ঘ্য বৃদ্ধার জরাগ্রস্ত লোল মুখমঞ্চলেও ফুটিয়া লীন হইয়া গেল। আজ বহু যুগ পরে একজন মহাদেশবাসীকে অতিথিরূপে পাইয়াছে— অভ্যন্ত আদরের সহিত অতিথি-সৎকার করিয়াছে— এই আনন্দই বৃদ্ধার হৃদয়ে উছলিয়া উঠিতে লাগিল । “সামান্ত আহার অল্পক্ষণ পরেই শেষ হইয়া গেল ; আমি ঘরের দরজার নিকট গিয়া বসিলাম। আমার - মনের মধ্যে নানা চিস্তা জাগিতে লাগিল। এ কোথায় আসিলাম ? ইহার কাহার ? কেনই বা ইহারা মহাদেশ ছাড়িয়া এই দুর্গম অরণ্যে অসভ্য বৰ্ব্বর দ্বীপবাসীদের সহিত বাস করিতেছে ? রাত্রি যতই অধিক হইতে লাগিল—চারিধারের অন্ধকারই ততই ক্রমশঃ গাঢ় হইতে লাগিল। অরণ্য-মধ্যে হিংস্র জন্তুদের যাতায়াতের খস্থস শব্দ শোনা যাইতে লাগিল। জনহীন অরণ্যে অন্ধকার রাত্রিতে একাকী বসিয়া আমার মনের মধ্যে ঝিল্লির করুণ স্বর হৃদয়-তন্ত্রীর পর্দায় পর্দায় ঘা দিয়া করুণ তান তুলিতে লাগিল। আমি যেন স্বপ্ন দেখিতে লাগিলাম । বৃদ্ধা গৃহকৰ্ম্ম সারিয়া আমার নিকট আসিয়া বসিল। প্রবাসী-চৈত্র, ১৩৩১ [ २8* छां★, २ग्न थ७ নিজ মোড়াটি আমার সন্মুখবর্তী করিয়া বসিয়া বলিল,— ‘জাপনি, তা হলে ফ্রান্স থেকেই আসছেন " ই, আমি সখের ভ্রমণে বেরিয়েছি।” ‘আপনি তা হ’লে নিশ্চয় বরাবর আমাদের প্যারিস থেকেই আসছেন ? 'না, আমি স্তান্‌সি থেকেই আসছি।” o “স্তানসির কথা শুনিয়াই কেন জানি না বৃদ্ধার মুখেচোখে উত্তেজনার-কেমন-একটা যেন কি ভাব ফুটিয়া উঠিল। বৃদ্ধ আমার দিকে জিজ্ঞাস্ক-দৃষ্টিতে তাকাইয় সোৎসাহে বলিল, তা হ’লে স্থানসি থেকেই ? “ঘরের বাহিরে দরজার নিকট উপবিষ্ট বৃদ্ধ বধিষ্ণুটিকে অন্যান্য বধিরের মতনই জগতের স্থখ-দুঃখ-বোধশূন্ত দেখিলাম । "বধিরের দিকে তাকাইতে দেখিয়াবৃদ্ধ বলিল, “আপনি বলে যান-ওঁর জন্য অপেক্ষ করবার কোনো দরকার নাই, আগেই বলেছি, উনি একেবারে বধির । আমাদের কোনো কথাই উনি বুঝতে পারছেন না। কিছুক্ষণ অবনত-মুখে আঙ্গুলের নখ খুটিতে-খুটিতে বৃদ্ধ ধীরস্বরে বলিল,— 'আপনি তা হ’লে স্কান্‌সির সকল লোককেই চেনেন, কেমন ?”

  • ই্যা, প্রায় সকলকেই ।”

সকৌতুহল দৃষ্টিতে বৃদ্ধ বলিল—‘সান্ট এলিজ পরিবারকেও ", ‘হ্যা—খুব ভালো করে’ই জানি, তা’র যে আমার পিতার পরম বন্ধু।" ‘আচ্ছা,—ত হ’লে আপনার নামটি কি জানতে পারি ? - ‘আমি আমার পুরা নামটি বলিলাম। বৃদ্ধ আমার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকাইয়া রহিল। তার পর নত দৃষ্টিতে লোকে যেমন কোনো বিষয় চিন্তা করিতে-করিতে আপন মনে বকিতে থাকে, সেইরূপভাবে বিগত স্মৃতিকে জাগরিত করিয়া বুদ্ধা আপন মনে বলিতে লাগিল, ‘হ্যা, ই্য, আমার বেশ মনে পড়ছে ; আচ্ছা তা হ’লে ব্রিস মেয়েদের খবর কি ?’ • ‘তারা সকলেই মরে গেছেন।”