পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] আসিয় দেখিল গুরুমহাশয়ের হাতে পটি-বাধা । কপালে ভ্ৰ উঠাইয়া শিহরিয়া ক্ষান্ত বলিল, “উঃ, কি হ’ল, গুরু-মহাশয় ? হাতটা গেছে নিশ্চয় ? হু, আমি জানি গেছে, যা অসাবধান আপনি । এইজন্যে পাঠশালায় যাননি, না ? তা কি করে জানব ? আপনি যে আজকাল প্রায়ই যান না ; আমারই আসতে হয়। খুব কষ্ট হচ্ছে, না ? কি ওষুধ দেওয়া হ’ল ?” ক্ষান্ত খুব সন্তৰ্পণে প্রসঙ্কের হাতটা তুলিয়া লইল । প্রশ্নগুলির উত্তরের অপেক্ষায় প্রসল্পের মুখের পানে একটু চাহিয়া আবার জিজ্ঞাসা করিল, “খুব জালা করছে নিশ্চয় ?” একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া প্রসন্ন বলিল, “না, তেমন লাগেনি ।” ঠোট ফুলাইয়া ক্ষান্ত বলিল, “হ্যা, লাগেনি ; নিজের কষ্ট লুকোতে আপনি অদ্বিতীয়।” গুরু-মহাশয়ের কথা বিশ্বাস না হওয়ায় তাহার মাকে সে জিজ্ঞাসা করিল, “গুরু-মহাশয়ের খুব লেগেছে নাকি, জ্যাঠাইমা ?” স্নেহ-দৃষ্টিতে তাহার পানে চাহিয। তিনি বলিলেন, “হঁ্যা মা, লেগেছে বই কি ; ধী অসাবধান ছেলে ।” তিরস্কারপূর্ণ অথচ সহাস্যনয়নে ক্ষান্ত বলিল, “হ্যা, আমি ত বললুম—ঐরকম আপনার ।” আজই—এই একটু পূৰ্ব্বে যে দারুণ কথাটা প্রসন্ন শুনিল, তাহা তাহার নিতান্তই অসম্ভব বলিয়া বোধ " হ'লে তোমার কি ক্ষান্ত ?” - স্থার না হয় ? আমার হাত কেটে গেলে মার A —আপনার হত না ?—আপনিই বলুন না। ত/আমারও কি হাতটা জালা করবে ? হাঃ হাঃ, তা নয়। তবে মনে কষ্ট হয় । মা বলেন "-8 * چيچ چItaة ক্ষান্তর মুখের পানে চাহিয়া প্রসন্ন ভাবিতেছিল, “বিশু বলেছে বলে কি সত্যই বে করতে পারে ?—এরা এত গরীব, ওরা জমিদার—এ খালি আমায় একটু কষ্ট দেওয়া - প্রসয়ের হাত ক্ৰমে ক্রমে সারিয়া গেল। একদিন আমোদ ক্ষণঝর হাতটা ধরিয়া গলা নামাইয়া বলিল, ”

SDe S বাড়ীতে ঢুকিয়াই ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় হর্যোৎফুল্প হইয়া বলিতে লাগিলেন, “হাঃ হাঃ জমিদারী, খেয়াল আর কাকে বলে ? ওগো, শুনছ, আমাদের বিশুর আবার ? বলে ‘না, আমার বে'তে প্রসন্ন পুরুত হবে ; পুরোনো বন্ধু, ওর মনট তবুও খুশী হবে। আমায় বলে ‘ওকে এখন থেকে বড় বড় কাজে দিন, ঠাকুর-মহাশয় ; আমি বেশ টের পাচ্ছি কালে ও একজন মস্ত বড় পুরুত হবে।’ —ত প্রসন্নকে বেগ পেতে হবে না ; প্রায় সবই জানে ৷” প্রসল্পের বুকটা যেন ধসিয়া গেল। তবুও মনকে সাত্বনা দিল—এ-সবই দুষ্ট মি—তাহাকে ভয় দেখান। বিবাহের আর দিন নাই । জমিদার-বাড়ী উৎসবেব আয়োজনে দিন দিন গুলজার হইয়া উঠিতে লাগিল। ক্রমে পাড়াটাও সরগরম হইয়া উঠিল । প্রসন্ন নৈরাপ্তাহত মনটাকে সাহস দিতে লাগিল—“ওরে বিশু, আমি সব বুঝি।” ক্ষাস্ত আর আসে না । প্রসল্পের পাঠশালাও আর ঠিক চলে না, এক-একদিন সে যায়। ক্ষান্তর বাড়ীর পানে যে রাস্তাটা চলিয়া গিয়াছে সেই দিকে স-আশ নয়নে চাহিয়া থাকে । ছেলেরাও ঢিলা পাইয়া অনেকেই গরহাজির থাকে । যে কয়জন আসে—সংখ্যার অল্পত} বশতঃ ছুটি পায় । আর একদিন বাকি । বিকালে—সন্ধ্যার কাছাকাছি একটা “বক্ষমতী” হাতে করিয়া পীতাম্বর ও সত্যেন প্রসল্পের সহিত দেখা করিতে আসিল । লাল কালীতে দাগ দেওয়া একটা অংশ তাহার সামনে ধরিয়া সত্যেন বলিল, “বিশু একটা মস্ত কাজ করলে, - প্রসন্ন,— ‘বশ্বমতী’তে আমরা ছাপিয়ে দিলুম। সে যাই হোক , জমিদার-বাড়ীতে যে দাওটা মার্ছ তার অংশ দিচ্ছ কি না ?” প্রসল্পের মুখটা মলিন হইয়া গেল ; তবে আর সত্যই. আশা নাই। সত্যেনের হাতটা চাপিয়া ধরিয়া প্রসন্ন রুদ্ধ-কণ্ঠে বলিল, “সতু, আমি তোদের কি করেছি ভাই ? শুধু পাশ করে গিয়েছিলুক বলে এত অপরাধ ?” * ঐ বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়