১ধু সংখ্যা ] পূর্ণিমা রাত্রি। ধরণী-গগনের কানায় কানায় জ্যোংস্কার আলো ভরিয়া উঠিয়াছে—কোথাও এতটুকু ফাক নাই। মাঠের মধ্যে টাদের আলো স্বর্গের আভাসের মত কাপিয়া উঠিতেছে। দূরে দিক্চক্রবালে বনরেখা নিবিড়রহস্যময়। আরে নদীর জলে আলো পড়িয়া কাপিয়া কঁাপিয়া উঠিতেছে। বাতাসে গাছের পাতা মৃদুশকো কাপিতেছে, যেন ঘুমন্ত পৃথিবী স্বপ্নের ঘোরে কথা রলিবার চেষ্টা কুরিতেছে। শেফালির গন্ধ, বাশীর স্বর, নদীর কলতান আকাশ জুড়িয়া ভাসিতেছে । কুঠাং বাতাসে রামতনুর ঘরের জানলাট একটু খুলিয়া গেল। তাঙ্গ বন্ধ করিবার জন্ত রামতনু অতিকষ্টে উঠিয়৷ জানলার ধারে গেল। সহসা বাহিরে তাহার দৃষ্টি পড়িল —এক মুহূৰ্ত্তে তাহার মনে হইল যেন সে মুক্তি-সাগরের তীরে আসিয়াছে। এ কী আনন্দ । ঘরের ভিতরটিতে শোক-দুঃখ-ব্যথা-রোগের যন্ত্রণা ; অয়ি বাস্কিরে ওই টাদের আলোয় স্বগের কি স্বপ্ন মাপানো আছে । নদীর জলে কি অমৃত, তার কলতানে কি আহবান, বাতাসে কি পরশ, আহা আকাশে কি পুলক রামত অবাক ইয়া দেখিতে লাগিল দূরে কে একজন গান করিতেছে। একবার ভাবিল—ও মানুষ, না প্রেত ? হঠাৎ তাহার বুকের মধ্যে ছাং করিয়া উঠিল। কিন্তু তার পরের মুহূৰ্ত্তেই গানের ভাষা বুঝিল-গানের একটি পদ একটি ছেড়া ফুলের মত ভাসিয়া মাসিল—“ভার চাদের চোপে চমক হেনে যায় চলে ।” রামতন্তু একবার ভাবিল যাক্ট নামিয়া ওই শান্তিস্বর্গের মুন্দন-কাননে ; ওখানে রোগের জাল জুড়াইবার অমৃত আছে। কিন্তু জানলার লোহার গরাদে তাঙ্গাকে বাধা দিল । সূত্নসা • কল্পনার স্বপ্নরাজ্য কঠিন বাস্তবের ম্পর্শে চূর্ণ হইয়া গেল। এতক্ষণ জানলার কাছে দাড়াইয় আছে দেপিয়া রামত নিজেই অবাক হইল ; তাড়াতাড়ি ঈfমূল বন্ধ করিয়া দিয়া একবার ঘড়ি দেখিল ; তার পর একমাত্ৰ ঔষধ খাইয়। লেপ মুড়ি দিয়া শুষ্টয়া পড়িল . পরদিন সকাল-বেলা রামতঃ জাগিয়া ভাবিতে লাগিল কাল রাত্রির ঘটনা সত্য ন। স্বপ্ন ? যদি স্বপ্ন হয় তবে কী ঈক্ষণ স্বপ্ন ; নিশিভূতে পাওয়া একেই বলে । আর সত্য আরোগ্য-মান ইলে ইগর মপেক্ষ হাসির কাগুrঙ্গার হয় না। মাঝে இ ২১, মাঝে নিজের দুৰ্ব্বলতা স্মরণ করিয়া রামভক্ষু হালিতে লাগিল । এষ্ট-রকম ভাবনা-চিন্তার দোলায় দোলায়তার সকালটি কাটিয়! গেল। দুপুর-বেল সমস্ত প্রস্তরখানি তপ্ত রৌদ্রে স্বাত মনে হইতেছে যেন কোন স্বৰ্গীয় এক মধুচক্রের মধু ঝরিয়া পড়িতেছে—সমস্ত ধরণী তাই মধুর মনে হইতেছে। রামতনু জানলার ফাক দিয়া তাকাইয়া তাকাইয়া দেখিতে লাগিল—উদাস প্রাস্তব আকাশের শেষ পর্য্যন্ত শুষ্টয় পড়িয়া রহিয়াছে –রৌদ্রের রং কাচা সোনার মত ; আকাশের রং গভীর নীল ;–বনরাজি রৌদ্রতাপে গভীর খামবর্ণের মত দেখাইতেছে —মূতন ধানক্ষেতের সবুজটুকুর তুলন। নাই। মাঠের মধ্যে গরু চরিতেছে, রাখাল বটের ছায়ায় বসিয়া বাণী বাঙ্গাইতেছে, অদূরে যেখানে বর্গীর জলে ক্ষয় হইয়া কাকর বাহিব হইয়া পড়িয়াছে সেই রক্তবর্ণ অন্তর্বর ভূখণ্ডে রৌদ্র-মরীচিকা কঁাপিয়া কঁাপিয়া কি অসীম রহস্য আনয়ন করিয়াছে ! সেই রৌদ্রকরুণ শরং মধ্যান্সটির ছবি, দূরের খামায়মান বেণুবনের ব্যাকুল কম্পন যেন রোগ-র্যন্ত্রণা-ক্লিষ্ট অতিসাবধানী ওষ্ট রামতনুকেই ডাকিতেছে। রামতন্ত মুগ্ধনয়নে শয্যার উপর বসিয়া বসিয়া শরতের গেল। দেখিতে লাগিল । ক্রমে বেলা পড়িয়া পড়িয় সন্ধা হুইয়া অবশেষে রাত্রি আসিল । আঃ ! জ্যোংস্নাময়ী রজনী ! ঠাণ্ডা লাগিবীর ভয়ে রামতকুর ঘরের জানল। বন্ধ। সে ভাবিতে লাগিল জানলা খুলিয়া দিবে কিনা ? কিন্তু পাছে ঠাণ্ড। লাগে এই ভয়ে জানলা খুলিয়৷ দিল না। কত কি ভাবিতে ভাবিতে অবশেষে সে ঘুমাষ্টয় পড়িল । - রাত্রে জরের ঘোরে রামতনু স্বপ্ন দেগিল । যেন সে * একটা অন্ধকার ঘরে বন্ধ । ছোট ঘর। আলো বাতাস•. এত কম যেন তাহা কোন দুর্ভিক্ষ-পীড়িত রাজ্য হইতে সংগ্রহ করা হইয়াছে । ক্রমে মনে হইতে লাগিল যেন তাঙ্গার দম বন্ধ স্টয়া আসিতেছেঃ সেইখন ৰাতাসের জন্য চীংকার করিতেছে তখন রাশি রাশি ফ্লানেল কোট, কৰ্ম্মৰ্টার, ঔষধের শিশি, ডাক্তারের বিল ঝরিয়া পড়িতেছে। জলের জন্য ছাতি ফুটিয়া চীংকার করিতেছে, তখন এক • শিশি কুইনাইন-মিক্শ্চার—উঃ কি তিতো ! আক্টে যখন চাহিল তখন অন্ধকার—ঝুড়ি ঝুড়ি মন্ধকার, অমাবস্ত।
পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।