পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२ • রাত্রিব অন্ধকার, দিনের তালতলীৰ ঘুরঘুটি অন্ধকার, পোকার গর্ভের অন্ধকার, বটের ছায়ার অন্ধকার পড়িতে লাগিল। দূরে একটি আলো জ্যোংস্ক-রাত্রির তারার মত ক্ষীণ, ক্ষীণ দীপশিখার মত অল্পজ্জল। ক্রমে তার বড় হইতে লাগিল। অবশেষে রামতনুর মনে হইল সে একটি জানলার পাশে ঝাসিয়া দাড়াইয়াছে। তাকাইয়া দেপিতে পাইল বাহিরে জ্যোংস্কার আলোয় কত লোক খেলা করিয়া গান করিয়া বেড়াইতেছে। তাহদের কি আনন্দ : কি মুক্তি ! এমন সময় মনে হইল ঔষধের শিশিগুলি গড়াইয় গড়াইয়৷ তাহাকে আক্রমণ করিতে আসিতেছে। রাস্তা যেমন রোলারের ভারে সমান হইয়া যায়, তাহাকেও সেইরূপ করিবার ইচ্ছা। সে এক লাঙ্ক দিয়া যেন ঘরের বাহিরে আসিয়া পড়িল । বাহিরে লাফাইয়া পড়িরাষ্ট রামতন্ত্রর মনে হইল সে ফিভার-মিকৃশারের মস্ত বড় একটা নীল শিশির মধ্যে পড়িয়া গিয়াছে, সেই ঔষধের তলানি সবুজ, থিতানি সোনালি, আগুনের ফুলকির মতন তার বুদ্বুদ ! রামতন্থ আরামে তন্ত ঢালিয়া সেই ঔষধসমুদ্রে অবগাহন করিতে লাগিল। তার জরের জাল, অসুখের সন্তাপ যেন অমৃতস্বানে জুড়াইয়া গেল। রামতন্তু আরামে নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল—আঃ ! যেমন অম্লগ, তেমনি ঔষধ, তেমনি তার বোতল—সব বিরাট । ধন্বন্তরির ঔষধ-সমুদ্রের নীল বোতলে তার আজ আরাগাস্নান হইতেছে । তার এক সহপাঠী সানন্দে রামতন্ত্রর পিঠে বিরাশি সিঙ্কার ওজনে এক চড় বসাইয়া বলিল-আরামতঙ্গ, আজ হিমে মে! রামত জাগিয়া দেখে সে মুক্ত আকাশের তলে প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩১ { ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড দাড়াইয়।—জোংস্কাপ্লাবলে তার সৰ্ব্বাঙ্গ পরিশ্নতি হইয়া যাইতেছে। সে স্বপ্নাবিষ্টের মত কোট কন্ধটার খুলিয়৷ ফেলিয়া দিয়া এক সদর নির্জন মাঠের মধ্যে ছুটিয়া চলিয়া গেল। বাহিরে তখন পূর্ণিমার পূর্ণ টাঙ্গ সারা রাত্রির জাগরণে লাল রঙের হইয়া আকাশের সীমায় আসিয়া দাড়াইয়াছে। সে লালের বর্ণনা করা যায় না । জ্যোৎস্নাতে তারাগুলি দেগা যাইতেছে ন!—যেন তাহারা অরুণের রথের সাড়া পাইয়া এক কাক পাপীর মত উড়িয়া গিয়াছে। কেবল শুকতারাটি অতি অস্পষ্টভাবে আসন্ন-বিধবা রমণীর ভালে অন্তৰ্জ্জল সিন্দুরবিন্দুর মত জলিতেছে । ভোরের শীতল উত্তরে হাওয়াটি নুীর উপর দিয়া, ধামক্ষেতেয় উপর দিয়া, শিশিরের স্নিগ্ধ স্পর্শ বহিয়া, শিউলির গন্ধ মাগিয়া বহিয়া আসিতেছে। ঘাসে ঘাসে শিশির পড়িয়া কেমন হুন্দর ও স্নিগ্ধ দেগাইতেছে। রামতনু ভোর পৰ্য্যস্ত পাগলের মত মাঠে মাঠে পান-ক্ষেতে কাশবনে নদীর তীরে শিউলীতলায় ঘূরিয়া বেড়াইল। মুক্তির স্বাদ সে পাইয়াছে। দুপুর-বেলায় ডাক্তার রামতন্তকে দেখিতে আসিল । তাহার আর সে ভাব নাই—সে অনাবৃত অঙ্গে বসিয়া আছে, মূপে তাঙ্গার মুক্তির আভাস। ডাক্তার হাত দেখিয়৷ বলিল জর নাই, অমুখ সারিয়া গিয়াছে। অন্ত সকলে ডাক্তারের কাছে গত রাত্রির ঘটনা উল্লেখ করিয়া তাহাই শকুখ সারিবার কারণ বলিয়া নির্দেশ করিল। কিন্তু বিজ্ঞ ডাক্তার তাহা কানেই তুলিল না—কেবল মাথা নাড়িয়া বলিল—“বটে বটে ; যে ওষুধ দিয়েছিলাম, অশ্লখ না সেরে যায় কোথায় !" to ঐ প্রমথনাথ বিলী