পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা পরদিন প্রাতে কুঠার সকলেই শুনিল যে, মাহির ছেলুে হইয়াছে ; একে একে সকলেই তাহার নব-জাত পুত্রকে দেখিতে আসিল—বড় কাও একটু সময় করিয়া লইয়া মাহির ধাওড়ার সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। মাহির ছেলে কেমন হইয়াঁছে দেখিতে তাহার একটু কৌতুহল হইয়াছিল। সনাতন মাঝির স্ত্রী মাহিকে স্থতিকাগারে সাহায্য করিবার ভারটা স্বেচ্ছায় নিজেই লইয়াছিল, এবং হাসিমুখে সকলকেই সস্তান দেখাইতেছিল। বড় কাকে আসিতে দেখিয়া সে একটু চমকিত হইয়া উঠিল । তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে মাহির কোলে দিয়া বাহিরে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল—কি বটে রে বড়কা ? বড় কা বেশ প্রফুল্লমনেই আজ ছেলে দেখিতে আসিয়াছিল, সেইজন্য সে হাসি-মুখে বলিল—মাহির বেটা হয়েছে দেখতে আলম। ভিতর হইতে মাহি শঙ্কিতকণ্ঠে সনাতনের স্ত্রীকে লক্ষ্য করিয়া তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল,—না, না মেঝিয়ান, উয়াকে আমি ছেল্যা দেখাব না। কি গুণটুন আখুনি করে দিবেক । সয়তানটাকে তাড়াই দে। বড়কা ধাওড়ায় ঢুকিবার উদ্যোগ করিতেছিল ; থমকিয় সে দাড়াইয়া পড়িল, তাহার মনের সমস্ত সরসতা মাহির কথার আঘাতে একনিমিষে শুকাইয়া উঠিল। পুরাতন আক্রোশ আবার জাগিয়া উঠিল। সনাতনের স্ত্রীর দিকে একটা অনলবর্ষ দৃষ্টি হানিয়া দাতে ঠোট চাপিয়া বলিয়া উঠিল—উ কি কইছে রে ? দেখতে নাই দিবেক ? সন্মাতনের স্ত্রী তাহার সেই জলস্ত চোখ দুটার সম্মুখে কিরূপ একটু মুষড়াইয়া পড়িল। তথাপি বড় কার উত্তরে বলিল,--না, মাহি কইছে তুখে তাড়াই দিতে। য, তুই এখান হ’তে পালাই যা। 驗 তেমনইভাবে দাড়াইয়া থাকিয়া বড়কা পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল,-কেনে ? সন্তানের অমঙ্গলের আশঙ্কায় মাহির বুকের ভিতর দুরঘর করিতেছিল। বড়কাকে তখনও কথা কাটাকাটি করিতে দেখিয়া, সে চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল,— বলছি, তুই পাল, না হ’লে আখুনি আমি চেঁচায়ে সব স্বদেশী বাণী ԳՖ2 জড় করব আখন। তাদের কয়ে দিব, তুই আমাকে মাৰ্বতে আইছিল। তেখন মজাট দেখবি। বড়কার চোখদুটা দপদপ, করিয়া জলিতে লাগিল ; লোহার তারের মত তাহার হাতের শিরাগুলা শক্ত হইয়া উঠিল ; আরও এক পা অগ্রসর হইয়া সে ধাওড়ার ভিতর মাথাটা ঢুকাইয়া দিয়া ক্রুদ্ধ চাপা-কণ্ঠে বলিল,— দেখে লিস তবে । আমিও বড়ক মাঝি বটি —একটা পৈশাচিক ভাব তাহার মুখে-চোখে ফুটিয়া উঠিল। সে সয়তান ! আচ্ছা, তাই ভাল ! বড় কার ঝাকৃড়া মাথাটাকে আচম্বিতে ধাওড়ার ভিতর দেখিতে পাইয়৷ মাচি সভয়ে চীৎকার করিয়া উঠিল ; বড় কা ধীরপদে সেখান হইতে খাদের দিকে চলিয়া গেল । 橡 髒 橡 ঠিক তিন দিন পরের এক নিঝুম অন্ধকার রাত্রির কথা । রাত প্রায় দুটার সময় হঠাৎ একটা দমূকা হাওয়া মাহির ধাওড়ার টিনের দরজা লইয়া হুটোপুটি করার শব্দে তাহার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। পাশ্বেই আর-একখানি থাটিয়া বিছাইয়া সনাতনের স্ত্রী নিদ্রা যাইতেছিল ; মাহি একটা অজানিত অমঙ্গলের আশঙ্কায় সনাতনের স্ত্রীকে ডাকিয়া উঠাইল ও অভ্যাসমত ছেলেকে নিজের বুকের মধ্যে টানিয়া লইবার জন্য হাত বাড়াইল । সৰ্ব্বনাশ !—ছেলে! দুই পাশ, পায়ের দিকে, মাথার কাছে—সৰ্ব্বত্রই সে সেই অন্ধকারে খুজিতে লাগিল । এত বড় অমঙ্গল যে সে কল্পনাও করিতে পারে না। এতক্ষণ সে নীরব শঙ্কায় ব্যাকুলভাবে ছেলেকে খুজিতেছিল। হঠাৎ যেন তাহার অস্তরের সমস্ত ব্যাকুলতা, সকল আশঙ্কা মূৰ্ত্ত হইয়া ফুটিয়া উঠিল; সে একটা করুণ আৰ্ত্ত চীৎকার করিয়া উঠিল,—মূমি—আমার বেটা ? সনাতনের স্ত্রী স্বমিকে ইহার পূৰ্ব্বে ডাকিয়া দিলেও, তাহার ঘুমের ঘোর তখনও কাটে নাই ; সে খাটিয়াখানির উপর বসিয়া বসিয়া ঢুলিতেছিল। মাহির কথাগুলি ভাল করিয়া বুঝিতে না পারিলেও, যে আৰ্ত্ত চীৎকারটা মুমির কানের উপর আছাড় খাইয়া পড়িল, তাহাই যথেষ্ট ।