ԳՀ আপনি যে সুমিত্ৰাকে অপমান করতে পারেন, এটা বিশ্বাস করা সম্ভব নয় ।” e = রতন তিক্ত-স্বরে বললে, “ন, আমি সত্যিই তাকে অপমান করি-নি,—কিন্তু সে আজ আমাকে যে অপমান করেছে, তার ব্যথ। আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না!” পূর্ণিমা সচকিত-কণ্ঠে বললে, “রতন-বাৰু, আপনি কি বলছেন " রতন প্রথমটা চুপ ক’রে রইল। তার পর পূর্ণিমার মুখের পানে তাকিয়ে বললে,“পূৰ্ণিমা দেবী, আপনি আমার বন্ধু, আপনার কাছে আমি কোন কথা লুকোতে চাই না। সুমিত্রাকে আমি ভালোবাসি। আমি জানতুম, সেও আমাকে ভালোবাসে—এ-কথা আমি তার নিজের মুখ থেকেই শুনেছি। কিন্তু আজ সে আমাকে পথের একট। কুকুরের মত তাড়িয়ে দিয়েছে !" পুশিমা ঘাড় ষ্টেট করে নীরবে দাড়িয়ে রইল। রতন যেন নিজের মনেষ্ট ব’লে যেতে লাগল, “পূর্ণিমা দেবী, ছেলেবেল থেকেই আমি কেবল দুঃখের পর দুঃখের আঘাতই পেয়েছি। আজ এতদিন পরে আমি ভেবেছিলুম যে, জীবনে এবারের মত দুঃপের পালা বুঝি শেষ হ’ল। কিন্তু এখন দেখছি, বিধাত ব'লে যদি কেউ থাকেন, তবে আমার কপালে তিনি মুখ লেগেন-নি।" পুধিম আস্তে আস্তে বললে, “রতন-বাবু, আজকের দুঃখ দুদিন পরে হয় তো আর মনে থাকৃবে না । ভগবানের দয়ায় মানুষের শোক-দুঃখ ভোল্বার শক্তি আছে—আপনি এতটা বিচলিত হচ্ছেন কেন ? আজ আপনি অগাধ সম্পত্তির মালিক—" বাধা দিয়ে রতন উত্তেজিত-স্বরে বলে উঠল, “আপনিও আমার কাছে ঐ টাকার কথা তুলছেন! আগে আমি ধনীকে ঘৃণা কর্তুম, আজ থেকে টাকাকেও ঘূণা করতে শিখব। টাকার দাম কতটুকু, স্থমিত্র-দেবী ? অর্থ দিয়ে রাজ্য কেনা যায়, কিন্তু অর্থ দিয়ে কি জ্যান্ত হৃদয় কিনতে পারেন ? আমি চাই এক দরদী হৃদয়, তার বিনিময়ে আমার সমস্ত সম্পত্তি বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি ।” প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩১ [.২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড পূর্ণিমা মাটির দিকে 'চেয়ে প্রায়-অন্মুট-স্বরে বললে, “সুমিত্রাকে পেলেই কি আপনি সুখী হন ?” - রতন বিরক্তি-ভরে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললে, “৪ নাম আর আমার কাছে করবেন না।” পূর্ণিমা বললে, “আমি যদি তার কাছে গিয়ে আপনার কথা বলি—” —“ন, না, না ! টাকা দিয়েও হৃদয় কেনা যায় না, ভক্ষ ক'রে ও কেউ তা পায় না। ভিক্ষুকের মঙ্গন ত৷ গ্রহণ করতে আমি রাজি নই–এর জন্যে চিরদিন যদি হাহাকার করতে হয়, তাও স্বীকার। এমন মানুষকে আমি ভালোবাস্তে চাই না, যার হৃদয়ের উপরে আমার কোন দাবি নেই।” —“তবে স্থমিত্রার কথা ভুলে যান ।” --"র্হ্য। সেই চেষ্টাই করব, কিন্তু ভুলতে পার্ব কিনা জানি না । মাতুমের প্রাণ অবলম্বন খোজে,— কিন্তু দুনিয়ায় আমার ত কোন বন্ধুই নেই, কাকে অবলম্বন করে স্থমিত্রাকে আমি ভুলব, পূর্ণিমা দেবী ?” পূৰ্ণিমা ক্ষুব্ধ-কণ্ঠে বললে, “রতন-বাৰু, পৃথিবীতে সত্যিই কি আপনার কোন বন্ধু নেই? আমার বাবা, আর আমি কি আপনার বন্ধু হবারও অযোগ্য ? এ কথাটা অন্ততঃ আমাদের সামনে আপনি বলবেন না।” রতন অপ্রতিভ-ভাবে দৃষ্ট নত করলে। . পূর্ণিমা বললে, “আমাদের বন্ধুত্বের কোন নিদর্শনই আপনি কি পান-নি ? আমরা কি স্বার্থের জন্তে—” বাধা দিয়ে, পূর্ণিমার একখানি হাত চেপে ধরে আবেগ-ভরে রতন বললে, “মাপ করবেন পূর্ণিমা দেবী, মাপ করবেন। আমার কথায় বিষ আছে, তাই নিজের অজান্তেই আত্মীয়কেও আমি পর ক'রে ফেলি। আপনার যে আমার কত-বড় বন্ধু, সে কথা আমার মুখ প্রকাশ করতে না পারলেও, আমার বুক ভালে-রকমেই জানে।” মানুষের হাতের স্পর্শে কি শক্তি আছে জানি না, কিন্তু তার দ্বারা প্রায়ই মনের গোপনত প্রকাশ পায়। রতনের হাতে হাত রেখে পূর্ণিমা বুঝলে, সে মিথ্য বলছে না 1......... - হঠাৎ রাস্তার ধারের জানুলার নীচে একখানা গাড়ী
পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।