পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলঙ্কার শ্ৰীঅমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ "নাভি কা সুগন্ধ মৃগ নহা জান । "ত ব্যাকুল হোই ” তfরণ দেখে তাহার চারিদিক যুগন্ধে আমোদিত, সারা বন গন্ধে ভরিয়া গিয়ছে । হরিণ গন্ধে মাতেীয়ার; হইয়া পনের চারিদিকে, ঝোপের এদিক-ওদিক অন্বেষণ করে ; বুঝিতে পারে না সে—এ মধুর প্রাণ-মাতান গন্ধ কোথা হইতে আসিল । গন্ধের আকর যে তাঁহারই মধ্যে বিরাজ করিতেছে, তাতারই অভ্যন্তরস্থ কত্ত্বরীর গন্ধ যে তাঁহারই আশপাশ সৌরভে মাতাইয়া তুলিয়াছে—অজ্ঞান হরিণ বেচারা তাহ বোঝে নাই ; তাই সে চারিদিকে এমন করিয়া ব্যাকুল হইয়া চুড়িয়া বেড়াইতেছে। সকল যুগে সকল অবস্থায় মানুষ সৌন্দর্ঘ্যের উপাসক । সে সৌন্দর্যের অন্বেষণে চিরজীবন ঘুরিয়া বেড়ায় । মানুষ পৃথিবীতে জন্মায়, সেখানে সৌন্দৰ্য উপলব্ধির জন্ত কিছু দিন সুখ-দুঃখ ভোগ করে, হাসে-কাদে, এই করিয়৷ মৃত্যুকে বরণ করে। কিন্তু যত দিন সে পৃথিবীতে থাকে, সৌন্দর্যের আকর্ষণে মুগ্ধ হইয় তাহারই সন্ধানের জন্ত ধন, ঐশ্বর্য্য, সুখ, যশ, প্রতিপত্তির মধ্যে সৌন্দর্য্যের অন্বেষণে সে ছোটে । সৌন্দর্যের জন্ত সে লালায়িত, কিন্তু জানে না সে, তাহার সেীনার্যোপলব্ধি কিসে হইবে । অথচ তাহার নিজের মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যাহাকে পাইবার জন্ত সে নিরবধি অসহ দুঃখকষ্ট সহ করিয়াও বাচিয়া থাকিতে চায়। নিজের অজ্ঞাতসারে নিশ্চয়ই সে এমন একটা কিছুর আস্বাদ পাইতেছে যাহাকে ছাড়িয়া থাকা তাহার পক্ষে অসম্ভব। তাহাকে সেই অজ্ঞাত বস্তুর জন্ত আগ্রহাম্বিত হইয়াই যেন চিয়া থাকিতে হইবে। কিন্তু সৌন্দর্ঘ্যের আকর যে তাহারই মধ্যে মানুষ তাহা না বুধিয়া সংসারের আবর্তে নিরস্তুর ঘুরিয়া মরিতেছে। আপনার শরীর ও মনের আশ্রয়ে সে যে-সকল অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছে, যত দিন স তাহদের নিগৃঢ় মৰ্ম্ম ও চূড়ান্ত অর্থ আবিষ্কার করিতে না পারে তত দিন সে বাহসৌদর্যোর অন্বেষণে ঘুরিয়া বেড়ায় । যখন তাহা আবিষ্কার করিবার জন্ত মানুষের প্রাণ আকুল হয়, তখন সে এই বিশ্বসমস্তার নিৰ্বিরোধ মীমাংসার জন্ত প্রস্তুত হইতে প্রবৃত্ত না হইয়া থাকিতে পারে না । ফলে জীবের চরম লক্ষা কি তাহীরই অনুসন্ধান করিতে থাকে। কিন্তু যত দিন বাহসৌন্দর্যের প্রতিষ্ঠা সাহা তাহা লাভ করিবার সৌভাগ্য মানুষের না-হয়, তত দিন সে বাহসৌন্দয্যের পশ্চাতে পশ্চাতে ছুটয় থাকে। এই বহিঃসৌন্দর্য্যভাবপ্রণোদিত হইয়াই, একদিকে নিজের মতিবুদ্ধি এবং অন্যদিকে সমাজের প্রচলিত রুচির অনুবর্তী হইয়া মানুষ বরাবর চলিয়া আসিয়াছে। সমাজের সঙ্গে তাহার একটা সম্বন্ধ আছে, এ-কথা সে কখনও ভোলে নাই । তাহার নিজের দায়িত্বের কথাও তাঁহাকে ভাৰিতে হইয়াছে । আবার সঙ্গে সঙ্গে তহিকে দশ জনের এক জন হইয়া থাকিতে হইবে,—সুতরাং তহকে বাচিয়া থাকিতে যে হইবে তাহীও সে উপলব্ধি করিয়াছে । বাচিয়া থাকিতে হইলে নানা বাধাবিঘ্ন অন্তরায়ের হীত হইতেওঁ আত্মরক্ষা করিতে হইবে। শরীরে কোন ব্যাধি না হয় এবং পারিপার্থিক ও দৈব ঘটনা হইতে তাহার সুখ-স্বাচ্ছল্যের কোনরূপ ব্যাঘাত না ঘটে তজ্জন্ত তাহাকে চেষ্টা করিতে হইবে। এইজন্ত প্রথম প্রথম মানুব আভিচারিক তন্ত্রে নানা ধৰ্ম্মানুষ্ঠান করিতে লাগিল। অঙ্গে রক্ষা-কক ধারণ . করিল। ক্রমশঃ তাহার মধ্যে তাহার সুপ্ত সৌন্দর্যবোধ জাগিয়া উঠিল। দেশকালপাত্রানুসারে আত্মরক্ষণ ও সৌন্দর্য্যপ্রকাশের প্রচেষ্টা হইতে রক্ষা-কবচগুলি ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করিল। স্ত্রীপুরুষভেদে তাঁহাদের তারতম্য হইল। শনৈ: শনৈঃ অলঙ্কারের সৃষ্ট হইল। বিবাহিত ও অবিবাহিতের পরিচ্ছদের পার্থক্যের সঙ্গে সঙ্গে অলঙ্কারেরও পার্থক্য ঘটিল। ব্যক্তিগত রূচি এবং সমাজের প্রচলিত ক্লচির প্রভাব অলঙ্কারকে নানা রূপ প্রদান করিল।