পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবরী শ্ৰীস্বর্ণলতা চৌধুরী মাকুইসের গৃহে সেদিন উৎসব। শিকারের সময় আসিয়া পড়িয়ছে, তাই এই উৎসব। সান্ধাভোজ শেষ হইয় গিয়াছে, টেবিলের উপর এখন শুধু ফুল আর নানাজাতীয় ফল সাজান । টেবিলের চারি ধার ঘিরিয়া অনেকগুলি মানুষ বসিয়া গল্পগুজব করিতেছিলেন, তাহীদের ভিতর এগার জন প্রসিদ্ধ শিকারী, এক জন ঐ স্থানের ডাক্তার এবং বাকি অ’ট জন মহিলা । মহিলাদের মধ্যে সকলেই তরুণী । গল্পট হইতেছিল প্রেমের বিষয়। দেখিতে দেখিতে তর্ক বধিয়া গেল, মে, যথার্থ প্রেম জীবনে একবারই মাত্র অনুভব করা সম্ভব, না একাধিক বার । জীবনে একবার মাত্র যথার্থ ভালবাসিয়াছেন, এমন অনেক লোকের দৃষ্টাত্ত দেওয়া হইল, আবার এমন অনেকের কাহিনীও শুনা গেল র্যাহীর বহুবার ভালবাসিয়াছেন, অথচ সকলবারেই সমান প্রগাঢ়ভাবে । পুরুষ অতিথিরা সকলেই প্রায় একমত দেখা গেল । তাহারা বলিলেন, ভালবাসা রোগের মত, উহা এক ব্যক্তিকেই বহুবার আক্রমণ করিতে পারে। প্রেমের পথে বাধা ঘটিলে উহাতে মৃত্যু হওয়াও অসম্ভব নয়। মহিলাদের কিন্তু মত দেখা গেল অন্ত প্রকার । তঁহদের মত অবশ্য বেশীর ভাগ কাব্য পাঠ করিয়া গঠিত, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাহাতে খুব বেশী ছিল না। তঁহার বলি.লন, যথার্থ প্রেম মাত্র জীবনে একবার অনুভব করা যায়। উহা ঠিক বজ্রপাতের মত ব্যাপার, মানুষের জীবনে একবার উহা আসিয়া পড়িলে জীবনকে একেবারে দগ্ধ ও শূন্ত করিয়া দিয়া যায়, উহার ভিতর আর ভালবাসার স্বপ্ন মাত্রও প্রবেশ করিতে পারে না । মাকুইস মহোদয় নিজে বহুবার প্রেমে পড়িয়াছেন, সুতরাং তিনি মহিলাদের মতের বিরুদ্ধে উত্তেজিত ভাবে তর্ক করিতে লাগিলেন । তিনি বলিলেন, “আপনার আমার কথা বিশ্বাস করুন, মাম্বব অনেকবার ভালবাসিতে পারে এবং সমস্ত মনপ্রাণ দিয়াই পারে। আপনারা অনেক ব্যক্তির কাহিনী বলিলেন র্যাহারা হতাশ প্রণয়ে কাতর হইয়া আত্মহত্যা করিয়াছেন। তাহার উত্তরে আমি শুধু এই বলতে পারি, নে, তাহার ঐ ভুলট না করিলে ঐ প্ৰেমব্যাধি হইতে আরোগালাভ করিতেন, এবং অবার বহুবার প্রেমে পড়িতেন । প্রেমিকের সঙ্গে মাতালের বিশেষ একটা সদৃষ্ঠা আছে। একবার মদ খাওয়া ধরিলে যেমন বার-বর না থাইয়া থাকিতে পারা যায় না, তেমনি একব'র প্রেমে পড়া শুরু করিলে, বার-বার প্রেমে পড়া আনিবাৰ্য্য ।” সকলে মিলিয়া তথন বুদ্ধ ডাক্তারকে সালিশ মাfনয়া র্তাহার মত জিজ্ঞাসা করিলেন। ডাক্তার পূৰ্ব্বে পারিসে ব্যবসায় চালাইতেন, এখন শহর ছাড়িয়া মাকুইসের জমিদারীতে বাস করিতেছেন । তিনি বলিলেন, “এবিষয়ে আমার যে কোনো একটা পাক মত আছে তা নয় । তবে আমি একটি প্রেমের ইতিহাস জনি, যাহা পঞ্চান্ন বৎসর সমানভাবে টিকিয়াছিল, এক দিনের জন্তও যাহার ভিতর কোন ব্যতিক্রম দেখা যায় নাই।” মাকু ইসের পত্নী অনন্দে করতালি দিয়া উঠিয়া বলিলেন, “কি সুন্দর । এই ভাবে ভলিবস পাওয়া মুখস্বপ্নের মত মনোহর। পঞ্চম বৎসর ধরিয়া এইরূপ ভালবাস যে-পুরুষ পাইয়াছে, সে বাস্তবিকই সুখী, জীবনে সে-ই যথার্থ আনন্দ পাইয়াছে।” - ডাক্তার হাস্ত করিয়া বলিলেন, “আপনি ঠিক কথাই বলিয়াছেন, যে-ব্যক্তি এই ভালবাসা লাভ করিয়াছিল, সে পুরুষই বটে। সে পুরুষটির নাম করিলেই আপনার তাহকে চিনিতে পরিবেন। সে প্রযুক্ত গুকে, এই স্থানের ঔষধবিক্রেতা । স্ত্রীলোকটিকেও চিনিতে পারিকেন । প্রতি বৎসর চেয়ার মেরামত করিতে যে স্ত্রীলোকটি আপনার বাড়ি অসিত, আমি তাঁহারই কথা বলিতেছি ।