পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SR.b〜 প্রতোক বৎসরই সে এখানে ফিরিয়া আসিত। শুকের পাশ দিয়া চলিয়া যাইত, কিন্তু তাহার সঙ্গে কথা কহিতে সাহস পাইত না । শুকে তাহার দিকে একবার চাহিয়াও দেখিত না । এই মানুষটিকে ঐ যৌবনোন্মুখী বালিকা পাগলের মত ভালবাসিতে আরম্ভ করিল। মরিবার আগে সে আমায় বলিয়ছিল, “ডাক্তার, আমি অন্ত কোন পুরুষের দিকে এ-জীবনে চাহিয়া দেখি নাই, জগতে আর কোনো পুরুষ মানুষ যে আছে, তাহাই আমার মনে হইত না ।” কিছুদিন পরে তাহার পিতামাতা উভয়েই মারা গেল । মেটে তাহদের ব্যবসা চালাইতে লাগিল। দুইটি প্রকাও বড় বড় কুকুর সংগ্ৰহ করিয়া রাখিল, তাহাদের ভয়ে কেহ আর উহার কাছে অসিত না । এক বৎসর সবে সে গ্রামে প্রবেশ করিতেছে, এমন সময় দেখিল একটি যুবতী তাহার প্রিয়তমের হাত ধরিয়া ঔষধের দোকান হইতে বহির হইতেছে। যুবতী শুকের পত্নী, অল্পদিন হইল তাহদের বিবাহ হইয়াছে। এখানে টাউন-হলের পাশে একটি ছোট পুকুর আছে, সন্ধ্যারাত্রে ভগ্নহৃদয়া নারী তাহীর মধ্যে বীপাইয়া পড়িল । কিন্তু আত্মঘাতিনী হওয়াও তাঁহার অদৃষ্টে ছিল না। একটা মাতাল পথে ঘুরিতে ঘুরিতে তাহাকে দেখিতে পাইল, এবং টানিয়া তুলিল । কয়েক জন লোক ধরাধরি করিয়া তাহাকে গ্রামের একমাত্র ঔষধালয়ে বহন করিয়া লইয় গেল। গুকে ড্রেসিং গাউন পরিয়া তাহার তত্ত্বাবধান করিতে নামিয়া আসিল । তাঁহার ভিজা কাপড় ছাড়ান হইল, গা ঘষিয়া গরম করা হইল। যেন তাহাকে চিনিতে পারে নাই, এমন মুখ করিয়া যুবক বলিল, “তুমি কি পাগল হয়েছ ? এরকম বোকামী আর কখনও ক'রে না।” এই কয়টি কথাতেই ঐ হতভাগিনীর সমস্ত জালাযন্ত্রণা যেন জুড়াইয়া গেল। প্রিয়তম তাহার সহিত কথা বলিয়াছে । বহুদিন ধরিয়া ইহারই আননো সে দিশেহারা হইয়া রহিল । যুবক ডাক্তার তাহার শুশ্রষার জন্ত টাকা লইতে রাজী হইল না, যদিও নারী টাকা দিবার জন্ত অত্যন্ত আগ্রহ দেখাইয়াছিল। এই ভাবেই তাহার জীবন কাটিয়া চলিল। চেয়ার ~শা করিতে করিতে সে গুধু নিজের প্রিয়তমের স্বপ্ন প্রবাসী; ఎని83 দেখিত। প্রত্যেক বৎসর গ্রামে আসিয়া সে তাহাকে দেখিা যাইত। অনর্থক দোকানে গিয়া, টাকা দিয়া নানা রকম ঔষধ কিনিত ঘাহাতে সে তাহার কাছে যাইতে পারে, তাহার সঙ্গে কথা বলিতে পারে, এবং তাহাকে কিছু টাকা দিতে পারে। আমি গোড়াতেই বলিয়ছি, এই বসন্তকালে ঐ নারীর মৃত্যু হইয়াছে। এই দুঃখভরা জীবনকাহিনী বলা শেষ করিয়া সে আমাকে ও পুরোহিতকে অনুরোধ করিয়া গিয়াছে, যেন তাহার চিরজীবনের সঞ্চিত অর্থ আমরা তাহার ভালবাসার একমাত্র পাত্রের হাতে পৌছাইয়া দিই। তাহকে দিবার জন্তই সে কেবল অর্থ সঞ্চয় করিত। কাজ করিবার তাঁহার আর অন্ত কোনো উদ্দেশু ছিল না । নিজে ভাল করিয়া আহাঁর পর্যন্ত সে করিত না, পাছে তাহার সঞ্চিত অর্থ অধিক না হয়। তাহার মৃত্যুর পর কিছু টাকা হাতে পাইলে শুকে একবার অন্ততঃ তাহাকে স্মরণ কfরবে, এই ছিল তাহার আশা । আমাদের হাতে সে দুই হাজার তিন শত সাতাশ ফ্র" দিয়া গিয়াছিল। তাহার শেষনিশ্বাস পড়িবার পর আমি তাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্ত সাতাশ ফ্র? পুরোহিতের হাতে দিয়া বাকি টাকা লইয়া চলিয়া আসিলাম । পরদিন দুপুরবেলা আমি টাকা লইয়া শুকের বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইলাম স্বামী-স্ত্রী সবেমাত্র তখন মাধ্যহিক আহার শেষ করিয়া দুখানি চেয়ারে মুখোমুখি হইয়া বসিয়া আছে । দুই জনেরই বেশ গোলগল চেহারা, টক্‌টকে রং এবং সস্তুষ্ট মুখের ভাব । ঘরথানি গন্ধদ্রব্য ও ঔষধের সৌরভে ভরপুর। তাহারা তাড়াতাড়ি আমাকে বসিতে আসন দিল । আমি বসিয়া নিজের বক্তব্য বলিত আরম্ভ করিলাম । আবেগে আমার গলা ভারি হইয়া আসিয়াছিল, আমার ধারণা ছিল, কাহিনীটি গুনিয়া তাহারা কাদিয়া ফেলিবে। শুকে ষেই বুঝিতে পারিল, যে, ঐ দরিদ্র। ভিখারিণীর ষ্ঠায় স্ত্রীলোক, য়ে ভাঙা চেয়ার মেরামত করিা নিপাত করিত, সে তাহাকে ভালবাসিতে সাহস করিয়াছিল, রাগে তাহার মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হই উঠিল। তাহার রকম দেখিয়া বােধ হইতে লাগিল নি ঐ হতভাগিনী