পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘বৃহৎ-সংহিতায় নারী শ্ৰী ভ্রমর ঘোষ, এম-এ বরাহমিহিরকৃত বৃহৎ-সংহিতা মনোযোগ সহকারে পীঠ করিলে স্বতঃই একটি কথা মনে প্রতিফলিত হয় যে এ-যাবৎ “স্ত্রী-বৃত্তাস্ত” সংগ্রহণের নিমিত্ত বে-সমস্ত শাস্ত্রকারের সহিত তাহদের গ্রন্থের মধ্য দিয়া পরিচয় হইয়াছে, তন্মধ্যে বৃহৎ-সংহিতাকার বরাহমিহিরের ন্যায় নির্ভীক ও স্পষ্টবক্ত অতি বিরল । ঋগ্বেদে নারী সম্বন্ধে বিশেষ করিয়া কিছু বলা হয় নাই, কারণ ইহা কতকগুলি ঋক্ বা স্তুতির সমষ্টি মাত্র । তবে ইহার বিষয়বস্তু হইতে অনুসন্ধান দ্বারা আমরা নারীসম্বন্ধীয় তথ্য কতকটা বাহির করিয়া লইতে পারি। মনু, অত্রি, বিষ্ণু, হরীত প্রভৃতি বিংশতি সংহিতাকারগণের শাস্ত্রে এবং অন্তান্ত পরবর্তী শাস্ত্রে আমরা স্ত্রীলোক-সম্বন্ধীয় বিশেষ সারগর্ভ বিবরণ প্রাপ্ত হই। উক্ত-সংহিতাগুলির কতকগুলি অধ্যায়ে সম্পূর্ণভাবে এবং কতকগুলি অধ্যায়ে আংশিকৰূপে নারীবিষয়ক আলোচনা আছে ; কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, তাহার অধিকাংশ স্থল পাঠ করিলেই একটা ভাব সকলের মনে জাগে যে, নারী সৰ্ব্ববিষয়েই পুরুষ হইতে হীনতর ও কূটম্বভাবা । এক-একটি সংহিতায় অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে স্ত্রীলোকগণের নিকট হইতে আত্মরক্ষা ও তাহদের দুষ্টসংসর্গ-দোয হইতে মুক্তির উপায় ও সংস্ক'র বিবৃত রহিয়াছে। সমাজে এতাদৃশ বিরুদ্ধ ভাব স্ত্রী-সমাজের পক্ষে বিশেষ সম্মানসূচক নহে। কি কি কারণে সমাজে স্ত্রীলোকের স্থান অবনতির স্তরে ধাবিত হইল, ইতিহাস-পাঠে তাহা জানা যায়। বৈদেশিক আক্রমণ ভারতের গৌরবময় ইতিহাসে কলঙ্কলেপন করিয়াছে ও খুব সম্ভব বৈদেশিক ; সংসর্গেই ভারতীয় জাতীয়তায় তখন অবনতি আনয়ন করিয়াছিল । উধি প্রবেশ সৰ্ব্বপ্রথম ভারতবর্ষে যখন ੋਂ করিল, তখন ভারতের স্তায় হসভা দেশ পৃথিবীতে বিরল। অপরাপর দেশ ভারতীয় সভ্যতার তুলনায় এক রূপ অসভ্য ছিল বলিয়াই ধরা হয় । এই সকল অপেক্ষাকৃত অসভ্য জাতির অনুন্নত চিন্তাধারা ধীরে ধীরে ভারতের কৃষ্টিতে প্রবেশ করিল ; সমাজে অল্পবিস্তর পরিবর্তন ঘটিতে লাগিল। বৈদেশিকগণের লোলুপ দৃষ্ট হইত রক্ষা নিমিত্ত সমাজে অবরোধপ্রথার স্বল্প ও তৎসঙ্গে অল্পবিস্তং স্ত্রীলোকগণকে সন্দেহের চক্ষে দেখা যাইতে লাগিল এই সন্দেহের বিষময় ফল এককালে স্ত্রীজাতির গৌরব অ.ঙ্গ অল্পে হরণ করিল । সমাজসংস্কারকগণও র্তাহাদের স্ববুদ্ধিপ্রণোদিত শাস্ত্রাfদর সাহায্যে স্ব স্ব মতবাদ প্রচার করিতে লাগিলেন । ঋগ্বেদের কালে যে সময়ে আমরা স্ত্রী-পুরুষের সমন অধিকার দেখিতে পাই, সে সময়ও স্ত্রীলোককে পুরুষ হইতে হীন করা হইয়াছে। ঋগ্বেদে ঋযিকৃত ঋকেও আমরা দেখিতে পাই যে স্ত্রীলোকগণের স্বভাব নাকি “হিংস্র বৃকের তুলা (“সলাবৃকাণাং হদয়াণ্যেতা” ঋং ১০ । ৯৫ । ১৫) ; তাহীদের হৃদয় স্নেহ ও প্রেমবর্জিত ( “ন বৈ স্ত্রৈণানি সখ্যানি” ) এবং তঁহাদের মন শাসনের অযোগ্য (“স্ক্রিয়া অশাস্যং মনঃ” খং ৮। ৩৩ । ১৭)। ঋগ্বেদে স্ত্রীঋষি কর্তৃক রচিত (অৰ্থাৎ দৃষ্ট —'খুষয়ে মন্ত্রদ্রষ্টারঃ' ) কতকগুলি ঋক্ আমরা দেখিতে পাই ; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তাহীদের রচিত ঋকে কোনস্থানেই তো পুরুষের নিন্দা নাই। মানুষ হিসাবে স্ত্রী-পুরুষ উভয়রেই কতকগুলি দেয ও গুণ বৰ্ত্তমন আছে যাহা স্বাভাবিক, কিন্তু সেই সকল দোষ-গুণসমন্বয়ে গঠিত মানব যে হঠাৎ শ্রেণীভেদে কেহ কাহারও অপেক্ষ উচ্চতর অথবা নিম্নতর হইতে পারে ইহা বুৰঞ্জ না। শাস্ত্ররংগ প্রায় সকলেই পুরুষ ছিলেন, সুতরাং শাস্ত্রসমূহ ৷ে পক্ষপাতিত্ব-দোষে দুষ্ট কথা অস্বীকার করিবার কোনই কারণ নাই। এ-যাবৎ সমাজের বুকে এবংবিধ অন্তায় ও পক্ষপাতিত্ব-দুষ্ট শাস্ত্রের নীতি অবলম্বন করিয়া নারীগণের প্রতি অত্যন্ত অন্তর আচরণ করা হইয়াছে। বরাহমিহিরন্থ