পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২০ ক্ষে প্রবাসী ; § বোনবিকে লইয়া যান ত নবদুর্গ একটু বিশ্রাম করিয়া বাচেন । মাসীর কাছে কান্নাকাটি করিয়া একখান চিঠিই লিথিয়া ফেলিলেন তিনি। - মালীম চলিয়া আসিতে লিখিলেন। যাইবার খরচ অবহু পাঠাইলেন না । বড়মানুষের গৃহিণী বলিয়া আমীরমহলে নবদুর্গার এত নামডাক ছিল, tহাকেও যে আবার পথ-খরচা পাঠাইতে হইবে তাহা কেহ ভাবিতেও পারিত না। নযদুর্গ সামান্ত কিছু টাক মাত্র লইয়া আসিতে পারিয়াছিলেন, তাহা হইতেই কিছু ভাঙিয়া যাইবার ব্যবস্থা করিলেন। বড় মামাতে৷ ভাইয়ের একটি শু্যালক, প্রায় বারো মাসই দিদির বাড়িতে অতিথি থাকিত, সে বিনী-খরচায় কলিকাতা বেড়াইয়া আসিবার লোভে র্তাহাকে লইয়া যাইতে রাষ্ট্ৰী হইল । ভাজ দু-জন বলিলেন, “ তা ঠাকুরবি ঘুরে এস দিনকতক । এখন এক জায়গায় মন বসতে দেরি লাগবে ।” নবদুর্গ থার্ড ক্লাসে চড়িয় কলিকাতায় আসিয়া পৌছিলেন। মাসীর একটি ঘরজামাই ছিল, সে খাইতদাইত, এবং স্ত্রী দু-কথা শুনাইয়া দিলে শাশুড়ীর কাছে গিয়া নালিশ করিত । শাশুড়ীরও তাহার উপর বিশেষ স্নেহ ছিল। এই জামাতাটিকেই তিনি নবদুর্গাকে অভ্যর্থনা করিবার জন্ত ষ্টেশনে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন । নবদুর্গ নামিতেই ছেলেটি অগ্রসর হইয় তাহাকে টিপ করিয়া একটা প্রণাম করিল। বলিল, “আমি আপনাকে সেকেণ্ড ক্লাসে খুজে খুজে হয়রান, আপনি যে -থার্ড ক্লাসে আসবেন তা জানব কি ক’রে ?” ছেলেটির বুদ্ধির দৌড় দেখিয়া কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইয়া নবদুর্গ বলিলেন, “আর কি সেকেণ্ড ক্লাসে চড়বায় দিন আছে ভাই ?” মাসীর ঘরজামাই আবার বুদ্ধির পরিচয় দিয়া বলিল, “ত হ’লে ঘোড়ার গাড়ীই একথানা ডাকি ?” নবদুর্গ বলিলেন, “তাই ডাক ৷” কলিকাতায় বহু দিন পূৰ্ব্বে একবার আসিয়াছিলেন, তার পর এই । শহরটা আশ্চর্যাঁ, একেবারে বদলাইয়া গিয়াছে, কিছুই আর চিনিবার উপায় নাই। বিরাট রাজধানীর বিচিত্র দৃপ্ত দেখিতে দেখিতে তিনি নিজে দুর্ভাগ্যের ভাবনাযুদ্ধ ভুলিয়া গেলেন । মৗসী তাহাকে আদর করিয়াই গ্রহণ করিলেন তাহার বৈধব্যের শোকে বেশী যে কান্নাকাটি করিলেন ন তাহাতে তিনি একটু বাচিয়াই গেলেন। এখানকার ঘর দুয়ার ভাল, কলের জল আছে, তরি-তরকারি, দুধ-বি, ফর মিষ্টান্ন অনেক রকম পাওয়া যায়, তাহার ক্লিষ্ট দেহ-মন এক যেন প্রফুল্লই বোধ হইতে লাগিল । স্বান করিয়া, নিজে কাপড় কাচ ছাড়া আর বেশী কিছু করিতে হইল না । মার্স বেশ শক্ত আছেন, রান্নাবান্না নিজেই করিতে পারেন বাড়িতে আর এক জন আত্মীয়া বিধবা আছেন, তিনি করেন। নবদুর্গা খাইয়া-দাইয়া সুস্থির হইয়া বেশ এ ঘুম দিয়া উঠিলেন। সন্ধ্যায়ও এখানে জলখাবারের এলাf রকম আয়োজন। ক্ষীর, লুচি, রসগোল্লা কত কি । দু-একটা দিন ভালই কাটিল । নবদুর্গা কালীঘাট দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়, পরেশনাথের মন্দির সব বেড়াইঃ আসিলেন । মাসীর মেয়ে রাজলক্ষ্মী হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল “fদদি ক-দিন আছ এখানে ?” নবদুর্গ বলিলেন, “দেখি ভাই, কত দিন থাকতে পারি ” রাজলক্ষ্মী কি যেন বলিতে গিয়া থামিয়া গেল নবদুর্গ চিন্তিত হইয়া উঠিলেন। এখনই এ প্রশ্ন কেন মসীমা কিছু বলিয়াছেন নাকি ? সারারাত ভাবিয় সকালে উঠিয়াই নিজের বাক্স হইতে খুব সুন্দর একখান জরির চৌখুপি শাড়ী বাহির করিয়া রাজলক্ষ্মীর ঘরে গিয় হাজির হইলেন । রাজলক্ষ্মী তখন সবে উঠিয়া বসিয়া কোলের ছেলেটাবে পিটাইতেছে। তাহার ছেলে একটি, মেয়ে একটি। মেে ত মায়ের ধারেও ঘেষে না, দিদিমার কাছেই থাকে ছেলেটার নিতান্ত এখনও খাদ্ধের জন্ত মায়ের উপর নির্ভ করিতে হয়, কাজেই তাহার রাজলক্ষ্মীর কাছে থাব ছাড়া উপায় নাই। তা হতভাগা ছেলের জালায় রাষ্ট্রে কি দু-দও ঘুমাইবার উপায় আছে ? চ্য, চ্য, চা, চিলে মৃত চীৎকার তাহার মুখে লাগিয়াই আছে।