পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ একাদশী

  • S

নবদুর্গার হাতের শাড়ীখানা দেখিয়া রাজলক্ষ্মী হঠাৎ মীর থামাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘ওমা, এ শাড়ীখানা করি গা বড়দি ? ভারি জেল্লা ত কাপড়খানার ” নবদুর্গ বলিলেন, “এই আমারই কাপড় ভাই । একবারমাত্র পরেছি, তারপর তোলাই ছিল । কাল ভাবলাম কাপড়খানা তোকে মানবে ভাল, তা পরা কাপড়—” রাজলক্ষ্মী তাহীর মুখের কথা কাড়িয়া লইয়। বলিল, “ওমা তাতে কি হয়েছে ? তুমি আমার নিজের মায়ের পেটের বোনের মত, তোমার পর কাপড় পরব, তাতে আবার কথা কি ?” বলিতে বলিতে ছে" মারিয়া কাপড়খানা তুলিয়া লইল । নবদুর্গ তাহার ছেলের সহিত ভাব জমাইবার একটু চেষ্টা করিলেন, কিন্তু সকালে উঠিয়া চড় থাইয়াই তাহার মেজাজ খারাপ হইয়া গিয়াছিল, সে প্রাণপণে হাত-পা ছুড়িতে আরম্ভ করিল । রাজলক্ষ্মী বলিল, “ও হতভাগাকে ছুয়ে না, ও একেবারে মানু্য না । তোমার অনেক কাপড়-চোপড় আছে না বড়দি ?” নবদুর্গ বলিলেন, “পাড়াগেয়ে মান্য ভাই আমরা, আমাদের কতই বা থাকবে ? তবু দু-চারখান আছে।” রাজলক্ষ্মী বলিল, “খাওয়া-দাওয়া চুকে যাক, তার পর গিয়ে তোমার কাপড় দেথব এখন । আমি বাপু ভাল শাড়ীর বেজায় ভক্ত। তা যেমন কপাল, দেয় কে ? খেতে যে পাচ্ছি তাই ঢের । সেই বিয়ের সময় মা যা দুদশখানা দিয়েছিল, তাই নেড়েচেড়ে দিন কটছে।” নিজের বাক্স ডেক্স লোকের সামনে খুলিতে নবদুর্গার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না । নিজের দৈন্ত সৰ্ব্বসমক্ষে প্রকাশ করিয়া লাভ কি? তাহারা সকলে ভাবে তিনি প্রচুর ধনরত্বের অধিকারিণী, ভুল করিয়াও ভাবুক না কিছুদিন । দুপুরবেলা ঠিক রাজলক্ষ্মী তাহার কাছে আসিয়া হাজির । হতভাগা ছেলে সবেমাত্র ঘুমাইয়াছে, এখন খানিকক্ষণ তাহার সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত । নবদুর্গ শুইয়াছিলেন, উঠিয়া বসিলেন। রাজলক্ষ্মী বলিল, “আহা, উঠছ কেন ? চাবিটা আমায় দাও না বড়দি, আমিই বাক্স খুলে দেখি ” বড়দির তাঁহাতে আরও অমৃত । তিনি উঠিয়া বসিয়া বাক্স খুলিয়া এক একথান করিয়া সব শাড়ী জামা বাহির - جS میت- لا 8 করিতে লাগিলেন । বন্ধ্যা নারীর জিনিষ, অতি পরিপাটি করিয়া যত্নে রাখা, কিছুই নষ্ট হয় নাই। এক একখানা করিয়া তিনি বাহির করিতে লাগিলেন, বেনারসী, আনারসী, ঢাকাই, বালুচরী, বিষ্ণুপুরী গরদ, শাস্তিপুরের কাপড়, ফরাশডাঙ্গার কাপড়, টাঙ্গাইলের কাপড় । লোভে রাজলক্ষ্মীর চোখ দুইটা জল্‌জল্‌ করিতে লাগিল । বলিয়া বসিল, “এত সব কাকে দিয়ে যাবে বড়দি ? সতীনপো বেীদের ? নিজের ত কিছু একটা আপনার বলতে নেহ ?” নবদুর্গ বলিলেন, “ও মুখপুড়ীদের দিতে গেলাম কেন ? ওরা আমার কে ? যারা দুঃখের দিনে আমায় দেখলে না তারা যদি আপন ত পর কে ?” শাড়ীগুলি বেীরা পাইবে না তাহা ত বুঝা গেল, কিন্তু কাহারা যে পাহবে তাহা ত কিছুই বুঝা গেল না। রাজলক্ষ্মী খানিক চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, “গহনার বাক্সটা কোথায় রেখে এসেছ বড়দি ঐ ছিদাম-দাদীর বিয়েতে তোমার সেই যে সতিনহর আর চুড়জোড়া দেখেছিলাম, তা এখনও আমার চোখে ভাসছে। এমন গড়ন আজকাল আর বড় দেখা যায় না।” নবদুর্গ ইচ্ছা করিলেই একটা মিথ্যা কথা বলিতে পারিতেন । কিন্তু কে যেন মনের মধ্যে র্তাহার ধিক্কার দিয়া উঠিল । ছিঃ, কি হইবে মিথ্যা কথায় লোক ভুলাইয়া ? তিনি দরিত্র, দরিদ্র বলিয়াই তাহাকে লোকে জানুক । বলিলেন, “গহনার বক্স আর কি আছে ভাই আমার ? যাদের জিনিয তাদের কাছেই আছে।” রাজলক্ষ্মীর চোখ দুইটা প্রায় স্বস্থান ছাড়িয়া কপালের মাঝামাঝি উঠিয়া গেল । গালে হাত দিয়া বলিল, “ওম, কোথায় যাব। গায়ের গহনা ক-খানাও খুলে নিয়েছে গ৷ ” নবদুর্গার ইচ্ছা করিতে লাগিল উঠিয়া চুটিয়া পালান। এ-সব কথা যেন তাহার কানে ছুচ ফুটাইতে থাকিত। কিন্তু কিছু না বলিয়াই বা উপায় কি ? বলিলেন, “সে সবই বড়গিল্পীর গহনা যে, তার ছেলে-বেীয়ে ছাড়বে কেন ?” রাজলক্ষ্মী বলিল, “ওম, তাহলে তোমার কি ব্যবস্থা ক’রে গেল বুড়ে ? একেবারে পথে বসিয়ে গেছে নাকি ?” মাসী এবং র্তাহার সেই আশ্রিত বিধবাটিও ইতিমধ্যে