পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চীনের কৃষি ও কৃষক-পরিবার শ্ৰীদেবেন্দ্রনাথ মিত্র ভারতবর্ষের মত চীনও কৃষি-প্রধান দেশ । ইহার লোকসংখ্যা মোটামুটি চল্লিশ কোটি ; তন্মধ্যে শতকরা আশী জন লোক চায-বস করিয়া জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করে । প্রকৃতপক্ষে চীন দেশের কথা ভাবিতে গেলে ইহার ক্ষমতাশালী সম্রাটদের কথা, জ্ঞানী ব্যক্তিদিগের কথা, রাজনীতিবিশারদদিগের কথা কিংবা যুদ্ধবিদ্যা-অভিজ্ঞ পণ্ডিতদিগের কথা মনে আ স না ; প্রথমেই মনে আসে সেই দেশের অসীম পরিশ্রমশীল ও অদ্ভুত মিতব্যঞ্জী বিপুল কৃষকশ্রেণীর কথা । আমাদের দেশের কুঘকদিগের মত চীন দেশের কৃষকদিগেরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোত, তাহদের কৃষি-পদ্ধতিও ভারতের কৃষি-পদ্ধতির মতই অতি পুরাতন, কষিধস্বদিও সাবেক ধরণের ও নিতান্ত সাধারণ রকমের । গর্দভ-চালিত ডল্‌না, কাঠের লাঙ্গল, ১৩ ইঞ্চি প্রশস্ত কোদালীই তাহীদের প্রধান কৃষি-যন্ত্র ; তাহীরা বিদেশী রাসায়নিক সারের ধার ধীরে না ; নিজেদের প্রস্থত সরহ তাহাঁদের প্রচুর শস্ত উৎপাদনে সাহায্য করে । বাস্তবিক চীন দেশের কৃষকের নিজেদের অসীম পরিশ্রমের ও অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞানের দ্বারা কি উপায়ে তাহাঁদের বিপুল জনসংখ্যার গ্রাসাচ্ছাদন নিৰ্বাহ করে, তাহার বিবরণ পড়িলে আশ্চর্য হইয়া যাইতে হয়। কিছু দিন পূৰ্ব্বে আৰু ব্রিজ, বেতারের সাহায্যে চীন দেশের কৃষক ও কৃষক পরিবারের একটি সুন্দর ও শিক্ষাপ্রদ বিবরণ দিয়াছেন । অধ্যাপক টনি চীন দেশের কৃষকদিগের ভীষণ গোঁড়ামি সম্বন্ধে মন্তব্য করিয়াছিলেন ; তিনি বলিয়াছিলেন যে, চীনের কৃষকেরা তাহদের কৃষি-পদ্ধতিতে নুতন কোন উন্নত প্রণালী প্রচলন করিতে একেবারেই নারাজ। কিন্তু আৰু ব্রিজ, বলেন যে, উহাদের এইরূপ * গোড়ামি ও নুতন কোন কৃষি-প্রণালীর প্রবর্তনের অনিচ্ছার যথেষ্ট কারণ আছে ; তিনি বলেন, আমরা তাহাদিগকে কি শিথাইতে পারি? তাহারা চার হাজার বৎসর ধরিয়া তাহদের পুরুষানুক্রমিক পরীক্ষিত কৃষিপদ্ধতি অবলম্বন করিয়া বিশেষ সফলতার সহিত চাযবাস করিয়া আসিতেছে। সংবাদপত্রের ভাষায় বলা হয়, “চীন দেশের অতি বিপুল জনসংখ্যা” (China's teening millions ) ! চীনের কৃষকের কিরূপে এই বিপুল জনসংখ্যার আহার যোগায় তাহার মোটামুটি আভাস জানিলেও বিস্মিত হইতে হয় । উত্তর-চীনের অন্তর্গত সান্টং প্রদেশের ৭ বিঘা আয়তনের একটি রুষিক্ষেত্র হইতে সেই দেশের একটি পরিবারের বার জন লোক, একটি গরু, একটি গাধা এবং দুইটি শূকরের খাদের সংস্থান হইয়া থাকে। এই হিসাব হইতে দেখা যায় যে, সেখানকার ১২০ বিঘা জমি ১৯২ জন লোকের আহার যোগাইতে পারে, অর্থাৎ কৰ্ষিত জমির প্রতি বর্গ-মাইলের দ্বারা ৫০৭২ জন লোক প্রতিপালিত হয়। অপর একটি কৃষিক্ষেত্র, যাহার আয়তন ৫ বিঘা মাত্র, তাহা দ্বারা একটি পরিবারের দশ জন লোকের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হয় ; এই হিসাব হইতে দেখা যায় যে, কৰ্ষিত জমির প্রতি বর্গ-মাইলে ৩৮৪০ জন লোক প্রতিপালিত হয় । চীন দেশ এইরূপ হাজার হাজার ছোট ছোট কৃষিক্ষেত্র আছে ; এই ছোট ছোট কৃষিক্ষেত্রগুলিই তাহীদের মালিকদিগকে খাওয়া-পরার অভাব হইতে এত দিন বঁাচাইয়া রাখিয়ছে । আচাৰ্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাহার “মরুভূমিতে সোনা ফলন” প্রবন্ধে চীন দেশের কৃষকদিগের আয়ের যে হিসাব দিয়াছেন তাহাতে দেখিতে পাওয়া যায় যে, উহারা বৎসরে এক একর জমি হইতে ১৬০ হইতে ২• • ডলার পর্য্যত্ব উপায় করে ; এক ডলারের মূল্য তখন প্রায় ৩ টাকা ছিল, তাহা হইলে দেখা যাইতেছে এক বিঘা