পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հգ ՀՀ পর একটি করিয়া অবিশ্রামে যেন তাহার মাথার উপর ভাঙিয়া পড়িতেছে ; তুই কানের কাছে ঝম ঋম করিয়া কিসের যেন শব্দ হইতে লাগিল, তাহার শ্বাসরুদ্ধ হইবার মত হইল। মনে হইল তাহার মাথার উপরে কালীদহের ক্ষুদ্র বুকে যেন প্রলয়ের তাণ্ডব আরম্ভ হইয়াছে, গাছপালা উপড়াইয়া বায়ুবেগে তৃণখণ্ডের মত ছুটতেছে, দালান কোঠা ভাঙিয়া-চুরিয়া সশব্দে কালীদহের জলে পড়িতেছে, প্রবল ভূকম্পনে কালীদহের অথৈ জলরাশি বিষম বেগে র্তাহাকে লইয়া শৃঙ্গে উৎক্ষিপ্ত হইতেছে— প্রাণভয়ে কীৰ্ত্তিনারায়ণ জল হইতে মাথা তুলিলেন, চারিদিক নিস্তন্ধ, নিঝুম, কালীদহের জলরাশি আগেকার মতই কাকচক্ষুবৎ স্বচ্ছ, স্থির । প্রেততাড়িত ব্যক্তির ন্তায় কীৰ্ত্তিনারায়ণ জল হইতে উঠিয়া পড়িলেন, তাহার সর্বাঙ্গ কঁাপিতেছিল । তার পর তিনি কি করিলেন, কি কি ঘটনা ঘটিল সে সকলের কোন পরিষ্কার স্মৃতি তাহার নাই । মনে হইল যেন বিশ্বের ঘুম তাহার দুই চক্ষুতে ভর করিয়াছে, চেতনা আচ্ছন্ন করিয়াছে। সেই অদ্ধযুমঘোরে অতি অদ্ভূত, বিচিত্র ঘটনাবলী তিনি প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন । পিতামহ তাহার হাত ধরিয়া এক অন্ধকার, অজ্ঞাত পুরীতে লইয়া গেলেন-বায়ুহীন, স্যাৎসেতে, দুৰ্গন্ধ বাষ্পপূর্ণ পথ সেই পুরীতে যাইবার । সেখানে একটি বেদীর সম্মুখে স্তিমিত প্রদীপালোকে তাহাকে নতজায় হইয়া বসিতে হইল, পিতামহ হাতে সরু চুড়ির মত কি একটা পরাইয়া দিলেন । তার পর কোথা হইতে অজস্র আলো ঋরিয়া পড়িল, তিনি দেখিলেন এক জন শ্বেতবস্ত্রভূষিত স্ত্রীলোক আঁচলের চাবি দিয়া একটা রুদ্ধ কক্ষের দ্বার খুলিয়া ফেলিল। পিতামহের সঙ্গে সেই কক্ষে প্রবেশ করিয়া তিনি দেখিলেন দেয়ালের সঙ্গে গাথা অনেকগুলি লোহার সিন্ধুক । পিতামহের ইঙ্গিতে সেই স্ত্রীলোকটি সিন্ধুকগুলি একে একে খুলিতে লাগিল, ভিতরের বিপুল ধনরাশি দেখিয়া তঁহার দুই চোক ঝলসিয়া গেল ; ধীরে ধীরে তাহার চেতনা লুপ্ত হইতে লাগিল। চেতনা সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত হইবার পূৰ্ব্বমুহূৰ্ত্তে সেই স্ত্রীলোকটির মুখ তিনি দেখিতে পাইলেন—সে পিতামহের পরিচারিক ব্ৰজদাসী ! - তার পরের কোনও ঘটনা কীৰ্ত্তিনারায়ণের আর স্মরণ করিয়া নিকানো প্রাঙ্গণটি তকতক করিত। ఎనిES নাই । ভৌতিক ঘটনা বলিয়া ব্যাপারটিকে তিনি উড়াইয়া দিতেন, কিন্তু হাতের সেই অষ্ট ধাতুর বালা স্মরণ করাই দিল যে-অভিজ্ঞতা তাহার লাভ হইয়াছে তাহা অস্তু আশ্চৰ্য্য, ভীতিজনক হইলেও মিথ্যা নয়। সেই বিপুঃ অগণিত ধনরাশি যাহা তিনি দেখিয়াছিলেন তাহা ত: পিতামহের, তাহার নিজেরই পৈতৃক সম্পদ । সেই গু ধনরাশির কথা মনে পড়িয়া, উহা এক দিন তাহারই হইt মনে করিয়া কীৰ্ত্তিনারায়ণের দুই চক্ষু অস্বাভাবিক উজ্জ্ব হইয়া উঠিল। হঠাৎ একটা কথা মনে উদিত হইতে তিনি চমকিয়া উঠিলেন—এই বিপুল অগণিত ধনর:ি যেখানে আবদ্ধ রহিয়াছে তাহার চাবি ব্ৰজদাসীর হাতে ! এত লোক থাকিতে ব্ৰজদাসীর হাতে কেন চাবিগুঃি দিয়াছেন ? কে সে ? কেন তাহার উপর এতখানি বিশ্বাস ? সে যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে ? ব্রজদাস পরিবারের পরিচারিকা হইয়াও কেন সকলের উপরে কর্তৃত্ব করে ? গুজব পিতামহের সঙ্গে তাহার গুপ্ত, অবৈধ সম্পর্ব আছে । থাকুক গুপ্ত, অবৈধ সম্পর্ক, তাই বলিয় এক জন ইতরজাতীয়া স্ত্রীলোককে এত বিশ্বাস । এ-সকল কথা ভাবিতে-ভাবিতে র্তাহার মনে বিজাতীয় জিঘাংসা-প্রবৃত্তি জাগিয়া উঠিল । কীৰ্ত্তিনারায়ণের মনে পড়িল না কি অসমসাহসের সঙ্গে ব্ৰজদাসী পিতামহের রোষবহ্নি হইতে অস্তঃপুরিকাদিগকে রক্ষা করিয়া থাকে, কি ভাবে বৃদ্ধ পিতামহের সমস্ত সেবাশুশ্রুষার ভার কেবল ব্ৰজদাসী বহন করে, কি অগাধ স্নেহে কোলে পিঠে করিয়া তাহাকে সে মানুষ করিয়াছে, সকল আবারঅত্যাচার সহিয়াছে । পাঁচ বৎসর বয়সের পর হইতে ভোজনের সময় ছাড়া কীৰ্ত্তিনারায়ণের অন্দরে যাইবার হুকুম ছিল না। পিতামহের সঙ্গে যে সময়টা তাহাকে থাকিতে হইত না সে সময়—দিবসের অধিকাংশ সময়—কাটাইবার জন্ত তাহার তিনটি সঙ্গী ছিল ব্ৰজদাসী, বৃদ্ধ লাল সিং ও লাল সিংহের স্ত্রী। রায়-বাটীর সংলগ্ন বৃহৎ উদ্যানের এক পাশ্বে ছুইটি কুটীরে বৃদ্ধ লাল সিং ও তাহার স্ত্রী বাস করিত। পরিষ্কার প্রাঙ্গণের একদিকে র্যাশের আড়ায় একটি পিতলের খাচা বুলিত,—