পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*পীষ । 4চায় ছিল একটি সুন্দর ময়না । স্বৰ্য্যোদয়ের বহু পূর্বেই ময়নাটি পরিষ্কার মানুষের কণ্ঠে ডাকিত “জয় সীতাপতি,” “জয় সীতাপতি” । তার পরেই সে চেচাইত—“বুড়ীমা, ও বুড়ীমা, ওঠ, ওঠ ।” বৃদ্ধ লাল সিং “জয় সীতাপতি" “জয় সীতাপতি” বলিতে বলিতে কুটীরের বাহিরে অসিত, আসিয়া ময়নাটিকে একটু আদর করিত। তার পর মুখহাত ধুইয়া প্রাঙ্গণের অপর দিকে অবস্থিত ছোট বাগানটুকুর তদ্বির করিত। চারি দিকে বtথারির বেড়া-দেওয়া সুন্দর ছবিখানির মত বাগানটি, বেড়া জড়াইয়া উঠিয়াছে তরুলত, ছোট ছোট লাল ফুলে অপরূপ তাহার শোভা । একদিকে একটি নাতিবৃহৎ স্থলপদ্ম গাছ, ফিকে গোলাপী রঙের বড় বড় ফুলে গাছ ভরিয়া থাকিত । অপর কোণে একটি শিউলী গাছ, শরৎকাল আসিবার বহুপূৰ্ব্বেই গাছের তলা শিউলী ফুলের আস্তরণে ঢাকিয়া ঘাইত। সন্ধ্যাবেলা শিউলীর মৃদুগন্ধে ছোট কুটারখানি আমোদিত হইত। তার পরেই খানিকটা জায়গায়—বড় বড় ভূট্টার গাছ, সারি সারি লঙ্কা ও বেগুনের চরি৷ লাগানো, গাছগুলির অজস্র ফলন দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইতে হইত । বালক কীৰ্ত্তিনারায়ণ তক্তকে প্রাঙ্গণের মধ্যে একটি ছোট বেতের মোড়ায় বসিয়া খেলা করিত। “বুড়ীমা, ও বুড়ীমা, ও ওঠু” ময়নাকে এ বুলি সে-ই শিখাইয়াছিল। ভূট্ট পাকিলে লাল সিংহের স্ত্রী আগুনের মালসায় সেঁকিয়! fদত আর বেতের মোড়ায় বসিয়া বালক কীৰ্ত্তি মহা আহাদের সহিত তাহ খাইত। মাঝে মাঝে ব্রজদাসী আসিয়া লাল সিংহের স্ত্রীকে বকিয়া-ঝকিয়া অৰ্দ্ধভক্ষিত ভুট্টা বালকের হাত হইতে কাড়িয়া লইত । ক্ষুদ্ধ বালক কিল-চড় মারিয়া আঁচড়াইয়া কামড়াইয়া ব্ৰজদাসীকে বিপর্য্যস্ত করিয়া দ্বিত ; যত ক্ষণ বৃদ্ধ ঘর হইতে একটি সরের নাড়, আনিয়া হাতে না-দিত তত ক্ষণ তাহার রাগ পড়িত না । নাড় হাতে লইয়া ব্ৰজদাসীর কোলে চড়িয়া “বুড়ী মা যাই বলিয়৷ হাসিতে হাসিতে সে চলিয়া যাইত । সেই কীর্কিনারায়ণ আজ বড় হইয়াছে। বৃদ্ধ লাল৷ সিং দেখা হইলেই তাহাকে নমস্কার করে। শুধু ব্ৰজদাসীর ব্যবহারে কোন পরিবর্তন হয় নাই। যুবক কীৰ্ত্তিকে বকাঝকা করিতে সে আজও কিছুমাত্র ভয় পাইত না। من صدج 8 কীৰ্ত্তিনগরায়ণ \ථAL যুবক কীৰ্ত্তিনারায়ণ আগেকার মতই কসরৎ করিতেন, ঘোড়ায় চড়িতেন, বন্দুক লইয়া দলবল সঙ্গে শিকারে যাইতেন । র্তাহীর গতিবিধিতে অনেকখানি স্বাধীনতা দেওয়া হইয়াছিল,--আন্দরে গিয়া ইচ্ছামত সময় কাটাহঁতে আর কোন নিষেধ ছিল না । কিন্তু তাহার মনের নিভৃত কোণে অহরহ এই চিন্তা জাগিয়া থাকিত ধে রায়-পরিবারের বিপুল ধনরাশি একটি ইতরজাতীয় স্ত্রীলোকের হাতে রহিয়াছে । ব্ৰজদাসীর সংসারে কেহ ছিল না । সাত বছর বয়সের সময় দূর গ্রামের স্বজাতীয় নয় বৎসরের একটি বালকের সঙ্গে তাহার বিবাহ হইয়াছিল। এক বৎসরের মধ্যে সে বিধবা হইল। তাহার বৃদ্ধ মায়ের মৃত্যু হইবার কিছুদিন পূৰ্ব্বে পনের বছর বয়সের সময় সে রায়-পরিবারে চাকুরী করিতে আসে ; সদ্যবিপত্নীক ভৈরব রায়ের বয়স তখন ত্রিশ। ক্রমে ক্রমে সে বৃহৎ রায়পরিবারের প্রকৃত গৃহিণী হইয়া উঠিল । স্বল্পভাষিণী, শাস্ত, মৃদুস্বভাবা ব্ৰজদাসীকে দেখিলে কেহ কি বলিয়া মনে করিতে পারিত না—করিতও না । কৰ্ত্তার সঙ্গে সম্বন্ধ ধরিয়া সকলে জাহাকে ডাকিত, ব্যবহারও সেইরূপ করিত। দুই পুরুষ পূৰ্ব্বে বঙ্গদেশের পল্লী-অঞ্চলের সন্ত্রাস্ত ঘরে এই ব্যাপার নিত্যনৈমিত্তিক ছিল, কাহারও চোখে ইহা বিসদৃশ ঠেকিত না, ইহা লইয়া পরিবারের কাহারও গত্ৰিদাহ হইত না । নামে পরিচারিকা হইলেও এই শ্রেণীর পরিচারিকারণ পরিবারের আত্মীয়া বলিয়া গণ্য হইত, পরিবরিক সকল বিষয়ে তাহারাও মতামত প্রকাশ করিত। যেমন অকৃত্রিম স্নেহ তাহারা সকলকে বিলাইত তেমনই স্নেহ নিজেরাও পাইত। বুদ্ধি-বিবেচন, স্বভাব ও কাৰ্য্যদক্ষতার গুণে কেহ কেহ যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারিণীও হইত। ব্ৰজদাসী ছিল এই শ্রেণীর স্ত্রীলোক । ব্যবহারগুণে সকলকেই সে বশীভূত রাখিয়াছিল। কৰ্ত্তার মুখস্বাচ্ছল্যের বিধান যেমন তাঁহাকে না-হইলে চলিত না, কৰ্ত্তার পিতৃহীন পৌত্রকে মানুষ করিবার কাজেও সেইরূপ তাহাকে না-হইলে চলিত না . কীৰ্ত্তিনারায়ণ এই ব্ৰজদাসীর কোলে-পিঠে চড়িয়া মামুব হইয়াছিল, মিজের মায়ের সঙ্গে তাহার বিশেষ সম্পর্ক