পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ নৃত্যধৰ্ম্ম ৪২১ আছে, কিন্তু পূর্ণভাবে ইহার অনুবাদ করিতে কেহই সমর্থ হন নাই। ইহার যে-সকল অনুবাদ প্রচলিত আছে, তর্কের ধতিরে তাহা নির্ভুল ধরিয়া লইলেও, প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, ইহর }হায্যে কেহ উচ্চ শ্রেণীর নৰ্ত্তক, গায়ক বা অভিনেতা হইতে পারে কি ? প্রথমে নৃত্যে অঙ্গ-ভঙ্গীর কথাই ধরা যাক । পুস্তকে বহু প্রকরণের উল্লেখ আছে—কিন্তু বিশদ বিবরণের একান্ত অভাব। ইহা যেন দুরূহ শব্দাদির অর্থসংগ্রহ। মুদ্রাপ্রকরণে আদর্শের নাম এবং হস্ত-বিষ্ঠাসের প্রক্রিয়ার উল্লেখ আছে, কিন্তু শিল্পীকে অনেক জিনিষই কল্পনা করিয়া লইতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রধান প্রধান অঙ্গুলিবিয়াসের নির্দেশ থাকিলেও অপরাপর অঙ্গুলিসম্পর্কে কেনই উল্লেখ নাই। একই মুদ্রা বহু তাবের দোতক । তখন অঙ্গুলিবিষ্ঠাসের নির্ণয় করা বড়ই দুরূহ। অন্ধুলিসমূহ পরস্পর সংলগ্ন করিয়া প্রসারিত করতল পতাক-হস্ত । এই পতাক-হস্ত নিম্নলিখিত ভাব প্রকাশ করে বলিয়া উল্লেখ আছে— ক্ৰোধ, প্ররোচনা, উল্লাল, গৰ্ব্ব, আত্মম্ভরিতা, অগ্নি, পুষ্পবৃষ্টি, অভিশাপ, অনুমতি, উপটৌকন, ঘাস, ভূমিতে ছড়ানো জিনিষপত্র, লুকায়িত বস্তু, গুচ্ছ, আত্মগোপন, ঝড়, ঢেউ, উৎসাহ, মহৎ ব্যক্তি, তরবারির আঘাত, পক্ষসঞ্চালন, শ্বাসপ্রশ্বাস, ধৌত করা, পরিষ্কৃত করা, নমনীয় করা, চূর্ণ করা, পৰ্ব্বত উত্তোলন, উন্মাচন। কখন কিরূপ ভঙ্গীত এই পতাক-হস্ত রক্ষা করিতে হইবে, তাহার কোনই উল্লেখ নাই । অপর দিকে একই ভাব প্রকাশাখ বহু প্রকার মুদ্রার বিধান আছে । সঙ্গীতরত্নাকর, নাট্যশাস্ত্র, চিলাপ্পতিকরম, হস্তলক্ষণপ্রদীপিকা, অভিনয়দৰ্পণ প্রভৃতি পাঠ করিল ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, সৰ্ব্ববাঁদিসম্মত কোন সঙ্কেত নাই। মালাবারে কটু, কথাকলি, উত্তম তুল্লাল প্রভৃতি মৃত্য প্রাচীন পদ্ধতির অনেকটা অনুরূপ, কিন্তু ইহাদের মধ্যেও বৈষম্য অনেক । ত্রিবঞ্জামে কথাকলিতে এক ভঙ্গী যে ভাব প্রকাশ করে হয়ত ইহা কোচিনরাজ্যে কেরল কলমওলয় ভিন্ন ভাৰ প্ৰকাশ করে। নীয়ৰ অভিনয়ে 効・ - .» هسيه আখ্যানবস্তু হয়ত এক, অন্তর্নিহিত গূঢ় ভাব কিংবা অভিপ্রায় একই, কিন্তু প্রদর্শনে অনৈক্য জাজ্বল্যমান । ইহাতে এই প্রমাণ হয় যে কোন এক বিষয়ে দুই জনে একমত না হইতেও পারে ; সামাজিক রীতিনীতি, যুগ, পরিপার্থিক অবস্থা, একই ভাবের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দান করে। ইহা হইতে এই সিদ্ধান্ত হয় যে, একই ভিত্তি হইতে গতি আরম্ভ হইলেও এবং একই ধৰ্ম্মভাবে অনুপ্রাণিত হইলেও কাল, রাষ্ট্রশাসন এবং ধৰ্ম্মোৎসাহে ইহার পরিবর্তন ও পরিবদ্ধন ঘটিয়াছে। সুতরাং প্রাচীন নৃত্যের নিষ্কলঙ্ক স্বরূপ সম্ভবপর হইলেও পুনঃপ্রবর্তন সমীচীন নহে । কারণ কালধৰ্ম্মে আমাদের রুচির যথেষ্ট পরিবর্তন হইয়াছে। প্রাচীন ধৰ্ম্মবিশ্বাস আমরা আর অবনতশিরে স্বীকার করি না। স্মরণাতীত যুগের প্রভাবান্বিত পদ্ধতি এখন আর আমাদিগের সন্তোষবিধান করিতে পারে না । প্রাচীন যুগে যেমন, বর্তমানে আর তেমন ভাবে মৃত্যের সন্ত্রম নাই। এখন নৃত্যে চিত্তরঞ্জনেরই প্রয়াস, রসকলার বাণী দ্বারা লোকের মনোবৃত্তির উন্মেষসাধন নহে । রসকল প্রগতিশীল, ইহা স্বজনক্ষম। প্রকৃতির সীমাহীন আয়তন ইহার সাম্রাজ্য, কল্পনার গতিতে ইহার অনুভূতি, অনুধাবন-ক্ষমতায় ইহার সাধন, মানবদেহ ইহার কৰ্ম্মক্ষেত্র, অঙ্গসঞ্চালনে ইহার বিকাশ। প্রাচীন কাহিনী ও উপকথা এবং ভাবপ্রকাশের বিধিবদ্ধ প্রণালী আমাদের যাত্রাস্থান, প্রগতির বিস্তৃত বীথিক আমাদের সীমাবদ্ধ পথ, আদর্শের পরিপূর্ণতা আমাদের লক্ষ্য । বর্তমান যুগের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ইহাকে পুনরায় গঠন করিতে এবং বর্তমান যুগের সৌন্দৰ্য্যঞ্জন দ্বারাই ইহার বিচার করিতে হইবে। এই জন্ত চাই আমাদের বাবতীয় নৈপুণ্য ও সৌকর্যের প্রয়োগ। আমরা চাই মৃতদেহে প্রাণসঞ্চার ; যুগুধৰ্ম্মকুণ্ঠী প্রেম ও শক্তি বলেই তাঁহ