পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8^● ఎని8ు হইয়া বহুকাল হইতে নির্বিববাদে বাস করিত। ছোটনাগপুরের মুণ্ডাদের কিংবদন্তী এইরূপ যে পুরাকালে ছোটনাগপুরের মালভূমিতে 'অম্বরীদের একটি মুদূর বিচ্ছিন্ন দলের বাস ছিল ; যখন মুগুর গঙ্গার—পরে শেfণ-নদের—উপত্যক হইতে ক্রমে ক্রমে বিতাড়িত হইয়া ছোটনাগপুরের মালভূমিতে প্রবশ করে তখনও এই অমুরদের এখানে পূর্ণ প্রভাব । ছোটনাগপুরের ধাত্য প্রবার নিৰ্ম্মাণ ও প্রচলন এই অসুরদের দ্বারাই হয়, কিংবদন্তী এইরূপ। তাম্র-যুগের এবং পুরাতন লৌহ-যুগের যে-সব নিদর্শন এথানে পাওয়া যায়, জনশ্রীতি এই যে সেগুলি এই অসুরদের নিৰ্ম্মিত। এই জন্তই তাঁহাদের পরবর্তী কালের যে মুগুiভাষাভাষী অসভ্য জাতি এখানে এখনও আছে এবং আকরজাত ধাতু (ore ) হইতে লোহা-গলানো পেশা অবলম্বন করিয়াছে তাহাদিগকে অসুর’ নামে অভিহিত করা হয় ; বস্তুত:, তাহীদের সঙ্গে ছোটনাগপুরের তামযুগের অম্বরদের কোন জাতিগত সম্বন্ধ আছে এরূপ মনে হয় না। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, ঋগ্বেদে অমুর জাতির সঙ্গে আৰ্য জাতির দীর্ঘকালব্যাপী সংঘর্ষের উল্লেখ আছে। ছোটনাগপুরের তাম্র-যুগের অম্বরের সম্ভবতঃ তাঁহাদেরই সুদূরবিক্ষিপ্ত একটি বিচ্ছিন্ন শাখা। ঋগ্বেদে অন্তরদিগকে *শিশ্ন দবাঃ' বলা হইয়াছে ; সাধারণত: পণ্ডিতেরা *শিশ্ন দবাঃ' শব্দের অর্থ করেন "লিঙ্গ-উপাসক” । ছোটনাগপুরের অমুরদের ধ্বংসাবশেষগুলিতে প্রস্তর-লিঙ্গ ও অনেক পোড়ামটির লিঙ্গ-প্রতীক পাওয়া যায়। সে যাহা হউক, সম্ভবতঃ নব প্রস্তর-যুগ হইতে লৌহ-যুগের প্রারম্ভ পৰ্য্যস্ত এখানে এই তথাকথিত অনুর জাতির প্রভাব ছিল ; মুণ্ডদের কিংবদন্তী এইরূপ সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁহার বস্তুগত প্রমাণও পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া ধায়। আবার ঐ যুগে প্রাপ্ত প্রস্তরাস্ত্র প্রভৃতির দুইএকটিতে মৌর্য্য-যুগের ধ্বজস্তম্ভ বা ‘লাট’ এবং মৌর্য্য প্রস্তর-মুঠির পালিশের অনুরূপ মন্থণ ও চিকণ পালিশ দৃষ্ট হয়। ঐ পালিশ যদি প্রস্তরবিশেষের স্বাভাবিক পালিশ না হয় তাহা হইলে মৌর্য-যুগের ঐ শিল্প-বৈশিষ্ট্য পূৰ্ববৰ্ত্তী প্রস্তর-তাম্র-যুগের দান বলিয়া অনুমিত হইতে পারে । অবসর-মত ছোটনাগপুরের প্রাগৈতিহাসিক কালের সমাধিস্থানগুলি ও আবাসস্থানের ধ্বংসাবশেযগুলি খনন ও অন্বেষণ করিয়া পুরাতন ও নূতন প্রস্তরযুগের, মিশ্র প্রস্তর ও তাম-যুগের ও অবিমিশ্র তাম্র-যুগর অস্ত্রশস্ত্র, অলঙ্কার ও তৈজসপত্রাদির কিছু কিছু নিদর্শন পাইয়াছি ; তাহার অধিকাংশই পাটনার সরকারী যাদুঘরে রক্ষিত व्याघ्न ] পূৰ্ব্বই বলিয়াছি, তাম্র ও টিনের সংমিশ্রণে যে ব্রোঞ্জ ধাতু প্রস্তুত হয় ইউরোপে বিমিশ্র তাম্র-অস্ত্রের পরিবর্তে সেই ব্রোঞ্জের অস্ত্রাদিই বেশী পাওয়া যায়। টিনের খনি ভারতে তেমন বেশী নাই। সেই জন্ত সম্ভবতঃ ভারতে ব্রোঞ্চ-যুগের পরিবর্তে তাম-যুগ প্রচলিত ছিল। তবে ছোটনাগপুরের এবং ভারতের অন্ত কোন কোন স্থানে ব্রোঞ্জে নিৰ্ম্মিত তৈজসপত্র কিছু কিছু আবিষ্কৃত হইয়াছে। ছোটনাগপুরে এমন কি একটি ব্রোঞ্জের কুঠার-ফলকও পাইয়াছি । ইহা বর্তমান পাটনার সরকারী যাদুঘরে আছে । ভারতের আর কোথাও ব্রোঞ্জের অস্ত্র আবিষ্কারের কথা আমার জানা নাই। যদি এগুলি সেকালে ভারতের বাহির হইতে আমদানী হইয়া থাকিত, তাহা হইলে ছোটনাগপুরের সঙ্গে প্রাগৈতিহাসিক যুগে বহিজগতের যোগ ছিল বুঝিতে হুইবে। যদিও পাণ্ডবদের দিগ্বিজয়যাত্রীর পথে ছোটনাগপুর সম্ভবতঃ বাদ পড়িয়ছিল, তথাপি বাহিরের সঙ্গে ছোটনাগপুরের যোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হইয়াছিল এরূপ মনে হয় না ।*

  • বিগত ২২শে কাৰ্ত্তিক (রাচি ) হিমু ফ্ৰেণ্ড ইউনিয়ন ক্লাব সাহিত্যসন্মিলনায় বার্ষিক অধিবেশনে অভ্যর্থনী-সমিতির সভাপতির অভিভাষণ ।