পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

移*の অল্পমনস্ক হয়ে কখন ভাবছি, স্বারবাসিনীর আখড়া থেকে সেই ভোরেযে আমি চুপি চুপি পালিয়ে এসেছিলাম—কাউকে না জানিয়ে, মালতীকে ত একবার জানালে পারতাম— মালতীর ওপর এতটা নিষ্ঠুর আমি হয়েছিলুম কেমন ক’রে । ওকথা চেপে ধাই—মন থেকে ঝেড়ে ফেলবার চেষ্টা করি। আগে যতটা কষ্ট হ’ত এসব চিস্তায় এখন আর ততট হয় না, এটা বেশ বুঝতে পারি । মালতীকে ভুলে থাকি— কিছুদিন পরে আরও যাব। এক সময় যে অত কাছে এসে দাড়িয়েছিল সে আজ সপ্তসিন্ধুপারের দেশের রাজকন্তার মত অবস্তিব হয়ে আসছে । হয়ত এক দিন একেবারেই ভুলে যাব । জীবন চলে নিজের পথে নিজের মজ্জিমত—কারও জন্তে সে অপেক্ষা করে না । মাঝে মাঝে মনে আনন্দ আfসে-যখন ভাবি বহুদিন আগে রাঢ়ের বননীল দিশ্বলয়ে ঘেরা মাঠের মধ্যে যে-দেবতার স্বপ্ন দেখেছিলুম তিনি অমায় ভুলে যান নি। তারই সন্ধানে বেরিযেছিলাম, তিনি পথও দেখিয়েছেন । এই অনুদার রুদ্ধগতি জীবনেও তিনি আমার মনে আনন্দের বাণী পাঠিয়েছেন । এতেও ঠিক বলা হ’ল না । সে আনন্দ যখন আসে তখন আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি, তখন কি করি, কি বলি কিছু জ্ঞান থাকে না—সে এক অল্প ব্যাপার। আজও তাই ঠিক হ’ল । আমি হঠাৎ পথের ধীরে একটা ঝোপের ছায়ায় নেমে পড়লুম গাড়ী থেকে । তন্ন চৌধুরী বললে— ও কি, উঠে এস তনু চৌধুরী জানে না আমার কি হয় মনের মধ্যে এ-সব সময়ে, কারও সাহচর্য্য এসব সময়ে আমার অসহ্য হয়, কারও কথায় কান দিতে পারি নে—আমার সকল ইঞ্জিয় একটা অনুভূতির কেন্দ্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ে— একবার চাই শালিখর ছানাগুলো খাদ্যকণা খুটে খাচ্ছে যেদিকে, তাদের অসহায় পক্ষভঙ্গিতে কি যেন লেথা আছে— একবার চাই তিসির ফুলের রঙের আকাশের পানে—ঝলমল প্রভাতের স্বৰ্য্যকিরণের পানে, শস্যগুমিল পৃথিবীর পানে— কি রূপ । এই আনন্দের মধ্যে দিয়ে আমার দ্বিজত্ব, এক গৌরবসমৃদ্ধ, পবিত্র নবজন্ম । মনে মনে বলি, আপনি আমায় এ-রকম করে নেবেন ની, আমায় সংসার করতে দিন ঠাকুর । দাদরি ছেলেমেয়ের, "প্রবাসী ;} S38పి বৌদিদি আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে ওদের অল্পের জন্তে, ওদের আমি ত ফেলে দিতে পারব না! এখন আমায় এ-রকম নাচাবেন না ! বৈকালের দিকে পায়ে হেঁটে গানোপুরের হাটে পৌঁছলাম। তনু চৌধুরী আগে থেকেই ঠিক করেছে আমার মাথা খারাপ । রাস্তার মধ্যে নেমে পড়লাম কেন ওরকম ? ফিরবার পথে সন্ধ্যার রাঙা মেঘের দিকে চেয়ে কেবলই মনে হ’ল ভগবানের পথ ওই পিঙ্গল ও পাটল বর্ণের মেঘপৰ্ব্বতের ওপারে কোনো অজানা নক্ষত্রপুরীর দিকে নয়, র্তার পথ আমি যেখান দিয়ে ইটিছি, ওই কালু-গাড়োয়ান যে পথ দিয়ে গাড়ী চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে—এ পথেও ৷ আমার এই পথে আমার সঙ্গে পা ফেলে তিনি চলছেন এই মুহূৰ্ত্তে—আমি আছি তাই তিনিও আছেন। যেখানে আমার অসাফল্য, সেখানে তারও অসাফল্য, আমার যেখানে জয়, সেখানে তারও জয় । আমি যখন সুন্দরের স্বপ্ন দেখি, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের আদর করি, পরের জন্তে থাটি—তখন বুঝি ভগবানের বিরাট শক্তির সপক্ষে আমি বাড়িয়েছি—বিপক্ষে নয় । এই নীল আকাশ, অগ্নিকেতন উল্কাপুঞ্জ, বিদ্যুৎ আমায় সাহায্য করবে। বিশ্ব যেন সব সময় প্রাণপণে চেষ্টা করছে শিব ও সুন্দরের মধ্যে নিজের সার্থকতাকে খুঁজতে, কিন্তু পদে পদে সে বাধা পাচ্ছে কি ভীষণ । বিশ্বের দেবতা তবুও হাল ছাড়েন নি—তিনি অনন্ত ধৈৰ্য্যে পথ চেয়ে আছেন । নীরব সেবারত সুর্য ও চন্দ্র আশায় আশায় আছে, সমগ্র অদৃগুলোক চেয়ে আছে—আমিও ওদের পক্ষে থাকব । বিশ্বের দেবতার মনে দুঃখ দিতে পারব না । জীবনে মানুষ তত ক্ষণ ঠিক শেখ না অনেক জিনিষই, যত ক্ষণ সে দুঃখের সন্মুখীন না-হয় । আগে ম্রোতের শেওলার মত ভেসে ভেসে কত বেড়িয়েছি জীবন-নদীর ঘাটে ঘাটে—তটপ্রাস্তবত্তী ষে মহীরুহটি শত স্মৃতিতে তিলে তিলে বৰ্দ্ধিত হয়ে স্নানার্থিনীদের ছায়াশীতল আশ্রয় দান করেছে—সে হয়ত বৈচিত্র্য চায় নি তাঁর জীবনে— কিন্তু একটি পরিপূর্ণ শতাব্দীর স্বর্য তার মাথায় কিরণ বর্ষণ করেছে, তার শাখা-প্রশাখায় ঋতুতে ঋতুতে বনবিহঙ্গদের কৌতুক বিলাস কলকাকলী নিজের আশ্রয় খুজে পেয়েছে