পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

gb= R সম্রাটের নাম আরব্ধ হইয়াছে—“আল মুলতান, আল, আদিল ।” মুদ্রার কিনারা এবং চতুক্ষেণের চারি বাহুর মধ্যে যে চারিটি কক্ষ আছে, তাহাতে মুহম্মদের চার-ইয়ারের নাম, যথা “আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলি” লিখিত আছে । দ্বিতীয় পুষ্টেও লেখার বিস্তাস প্রথম পৃষ্ঠেরই মত । “হাকিম? 3. "তাইফুর” “বন্ধু' o কিনারার চারিটি কক্ষে সুলতানের নামাংশ উৎকীর্ণ, যথা— “ফরিদ । আল দুনিয়া । ও আলদিন । আৰু আল মুজঃফর ।” পড়িবার কালে ইহার উচ্চারণ হয়—“আসসুলতান আলদিলু ফরিদুদ নিয়াউদ্দিন আবুল মুজঃফর ” পরে চতুক্ষেণের অভ্যন্তরে রাজার আসল নমি, তাহার রাজত্বে স্থায়িত্বের জন্ত প্রার্থন এবং সনাঙ্ক আছে, যথা—“শের শাহ আস-সুলতান খলমুল্লাহ, মুল্কহ ৯৪৫ ” ইহার পরে আধার দেবনগর অক্ষরে সম্রাটের নাম আছে—“ত্র শের শাহী।” মুসলমানঅধিকারের আদিযুগে মুসলমান সুলতানগণ মুদ্রায় পারসীর সঙ্গে সঙ্গে দেবনাগর অক্ষরেও নিজেদের নাম লিখিতেন । বহুকাল অবধি এই প্রথা লুপ্ত ছিল । শের শাহ আবার এই প্রথার প্রবর্তন করেন এবং শের শাহ-বংশীয় প্রত্যেক স্বলতানই এই হিন্দুর মনোরঞ্জক প্রথা মানিয়া চলিয়াছিলেন । মোগল-বংশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথা আবার অদৃষ্ঠ হয় । শের শাহের এই মুদ্রটি ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে কত বড় পরিবর্তনের স্থচক, তাহা মুদ্রতত্ত্ববিৎ মাত্রেই জানেন । মুদ্রাটি প্রায় নিখুৎ গোলাকার,—উপাদান বিশুদ্ধ রৌপ্য—অক্ষরগুলি সুস্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন এবং সর্বারকমেই ইহা মুদ্রানিৰ্ম্মাণ-শিল্পের অতি উৎকৃষ্ট নিদর্শন । বাংলায় সুলতানগণের মুদ্রা লইয়া যাহারা নাড়াচাড়া করিয়াছেন এবং উহাদের পাঠোদ্ধার করিয়া ঐতিহাসিক সত্যের প্রতিষ্ঠা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন তাহদের নিকট এই মুদ্রাটি অপ্রত্যাশিত সম্পদের মত । গঠন-নৈপুণ্য এবং পরিচ্ছন্নতায় প্ত প্রবচনস্ট ఏSD8S বাংলায় মুলতানগণের মধ্যে একমাত্র ফখরুদিন মুবারক শাহের মুদ্রা শের শাহের মুদ্রার সহিত উপমিত হইতে পারে। পরবর্তী সুলতানগণের কাহারও মুদ্রাই বিশেষ প্রশংসনীয় নহে । শের শাহের পূর্ববর্তী হুসেনী সুলতানগণের অধিকাংশ মুদ্রাই গঠন-পারিপাট্যহীন । তাহার উপরে আবার এক বিষম বিপদ জুটিয়াছিল । এই সুলতানী আমলে মুদ্রণ জাল হইতে আরম্ভ করিয়াছিল,— জালিয়াংগণ ভিতরে তাম৷ ভরিয়া উপরে কৌশলে পাতলা রূপার পাত দিয়া মুদ্রা তৈয়ার করিয়া তাহ থাটি রৌপ্যমুদ্রা বলিয়া চালাইতে আরম্ভ করিয়াছিল । তাই টাকা ভাঙাইবার সময় পোদারগণ ছেনি দিয়া পাচ সাত স্থানে না-কাটিয়া আর কোন টাকা ভাঙাইয়া দিত না । ফলে মুদ্রগুলির এমন দুৰ্দ্দশা হইত যে উহাদের সন, তারিখ, টাকশালের নাম ত পড়া যাইতই না, কোন রাজার মুদ্রা তাহ ঠিক করিতেই গলদঘৰ্ম্ম হইতে হইত ! এই ত গেল বাংলার সুলতানগণের মুদ্রার অবস্থা । দিল্লীর সুলতানগণ মিশ্র ধাতুর মুদ্রার (Billion Coins) প্রচলন করিয়াছিলেন—সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়ে ঐ মুদ্রারই প্রচলন বেশী ছিল। এই মুদ্রাগুলিতে কতখানি সোনা আছে বা কতখানি রূপা আছে, সাধারণ লোকের পক্ষে তাহা স্থির করা প্রোয় অসম্ভব ছিল । কাজেই ওজনে সমান হইলেও কোন মুদ্রার মূল্য কি, পোদারগণই তাহার নিৰ্দ্ধারক ছিল । ইহাতে জনসাধারণের যে কি পরিমাণ অসুবিধা হইত, তাহ সহজেই অনুমেয় । শের শাহ বিশুদ্ধ স্বর্ণে, বিশুদ্ধ রৌপ্যে এবং বিশুদ্ধ তাম্রে মুদ্র প্রচলিত করিয়া নিমেষে এই সমস্ত গলদ দূর করিয়া দিলেন। আর শের শাহের মুদ্রাকে জনসাধারণ এবং পোদ্দারগণও কি পরিমাণ সন্ত্রম ও শ্রদ্ধার চোথে দেখিত তাহার প্রমাণ এই যে আমি শের শাহের শত শত মুদ্রা পরীক্ষা করিয়াছি, কিন্তু পোদারের ছেনি-কাটার দাগ উহাদের প্রায় কোনটিতেই এযাবৎ দেখি নাই । পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, ডক্টর কানুনগো তাহার শের শাহ’ নামক পুস্তকে (পৃ. ২০৬ এবং পরবর্তী ) ৯৪৬ হিজরী সনকে শের শাহের সিংহাসন-আরোহণের বৎসর বলিয়া নিৰ্দ্ধারিত করিয়াছিলেন । এই মুদ্রার সনাঙ্ক হইতে