পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপচয়-নিবারণে রসায়ন-বিদ্যা শ্ৰীপুলিনবিহারী সরকার, এমএসসি অনেক মনীষীর মতে মানুষের অভাববোধ জন্মাইয়া দেওয়া মানেই তাহাকে সভ্য করিয়া তোলা। পক্ষান্তরে যেজাতির প্রয়োজন যুত বেশী, সে-জাতি তত সভ্য। ভগবানের প্রথম সৃষ্ট মানব-দম্পতি হইতে আরম্ভ করিয়া বিংশ শতাব্দীর অতি আধুনিক নরনারীর সাজসজ্জা, বসনভূষণ, আহার-বিহার প্রভৃতির ক্রমোন্নতির ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে হহা অনেকটা সত্য বলিয়াই মনে হয় । জ্ঞানের প্রথম উন্মেযে স্বষ্টিকর্তা মানুষকে অভিশাপ দিয়াছিলেন— মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া তহিকে পেটের অন্ন সংগ্ৰহ করিতে হইবে । মানব-জ্ঞানের পরিধি তার পর অনেকখানি বৃদ্ধি পাইয়াছে—বিধাতার অভিসম্পতিও সেই অনুপাতে কঠোরতর হইয়াছে । শুধু মস্তকের নয়, সৰ্ব্বশরীরের ঘৰ্ম্মে কেবল পদযুগল নয়, নিম্নস্থ ধর্ণীতল সিক্ত করিয়াও আজ মানুষ দুই বেলা দুই মুঠ খাবার জোগাড় করিতে পারিতেছে না। জ্ঞানবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতা হয়ত উন্নতির প্রায় চরম সীমায় পৌঁছিয়াছে নতুবা চারিদিকে এত হাহাকার, এত অসন্তোষ, এত মারামারি কাটাকাটি কেন ? তারপর, মা-ষষ্ঠীর কৃপীয় “পুত্ৰকল্প বস্তার মত” নামিয়া আসিয়া সমগ্র ধরণীতল ছাইয়া ফেলিতেছে—এক শতাব্দীতে পৃথিবীর লোকসংখ্যা ৬০ হইতে ২০০ কোটতে আসিয়া দাড়াইয়াছে। জন্মনিরোধের প্রতি রুচিবাগীশদের প্রবল বিতৃষ্ণ, শাস্তিকামী মহাপুরুষদের পৃথিবী হইতে যুদ্ধ-বিগ্রহ চিরতরে বিদূরিত করিবার প্রাণপণ চেষ্টা, উন্নত চিকিৎসাশাস্ত্রের সাহায্যে মানবের মৃত্যুহার হ্রাস ও নবযৌবন-বিধান প্রভৃতির ফলে পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়িতেছে। পেটের তাড়নায় কলম্বসের আবির্ভাব হইয়াছে ইদানীং অনেক—কিন্তু আমেরিকা আর কোথায় ? অতি দুর্গম মেরুপ্রদেশদ্বয়ও fizt? ( Peary) s EtxNTAR (Amundsen) ættfrfa করিয়া গিয়াছেন । স্থানবৃদ্ধির একমাত্র উপায় গ্ৰহাস্তরে চলিয়া যাওয়া—আকাশযান মঙ্গলগ্রহযাত্রা সুগম করিবে কিনা, আর করিলেও, সে ছোট তরীতে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ঠাই হইবে কিনা, কে জানে ? তাই বর্তমান যুগের মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সমস্তা—পুনরায় অসভ্য হওয়া নয়, অজ্ঞান-তিমিরে ফিরিয়া গিয়া পূৰ্ব্বপুরুষ-কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করাও নয়—সমস্যা আজ, জাতি-ধৰ্ম্ম-নিৰ্ব্বিশেষে সকলের গ্রাসাচ্ছাদন ও মুখস্বাচ্ছল্যের ব্যবস্থা করা । জ্ঞানবৃক্ষের ফলভক্ষণহেতু সে দুঃখের উৎপত্তি, জ্ঞানের চর্চা ও পরিবর্দ্ধন দ্বারাই তাহার প্রতিকার করিতে মান্য বদ্ধপরিকর। তারই ফল আজিকার জ্ঞান-বিজ্ঞান ললিতকলার অতভূত বিকাশ । উন্নত কৃষি, পণ্যোন্নতি ও অপচয়-নিবারণ দ্বারা এই কঠোর সমস্যার কথঞ্চিৎ সমাধান হইতে পারে। বলা বাহুল্য, এই ত্ৰিবিধ উপায়ের মূলে রসায়ন-বিস্কার জ্ঞান। অপচয়-নিবারণে রসায়ন-শাস্ত্র কতখানি সাহায্য করিয়াছে এবং তাহর ফলে নিতান্ত তুচ্ছ ও অব্যবহার্য্য দ্রব্য হইতে কেমন যুদৃশু ও মুল্যবান জিনিষ প্রস্তুত হইয়া দেশের ধনবৃদ্ধি ও বেকার-সমস্ত দূর করিতেছে, এই প্রবন্ধে তাহাই সংক্ষেপে আলোচিত হইবে। 德 আলকাতৃরার সঙ্গে আমাদের সকলেরই পরিচয় আছে। বর্ণের ঔজ্জলো, স্ত্রীণের তীব্রতায়, অঙ্গরাগের যোগ্যতায়— এক কথায়, রূপে-রসে-গন্ধে-স্পর্শে জিনিষটি একেবারে অনবদ্য । যেখানে নগর আলোকিত করিবার জন্ত পাথরকয়লা গ্যাসে পরিণত করা হয় সেই গ্যাসের কারখানায় এবং লৌহ প্রভৃতি ধাতু প্রস্তুত করিবার জন্ত যেখানে কাঠ কিংবা পাথর-কয়লা আংশিক পুড়াইয়া কোক তৈয়ারী হয় সেই কোক-ওভেনে এই রূপে-গুণে অতুলনীয় বস্তুটি একান্ত অবাঞ্ছিত (by-product)রূপে প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় । কারখানার মালিকগণ ইহা কি ভাবে এবং কোথায় ফেলিয়া দিয়া নিস্কৃতি পাইবেন কিছুদিন আগেও তাহ ভাবিয়া পাইতেন না। আলুকাত্রার সদগতির কথা তাহদের কল্পনায়ও আসিত না—কেহ ইহা লইতে