পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৯২ স্বীকৃত হইলে তাঁহাকে বরং কিছু দিতেও আপত্তি ছিল না। কিন্তু রসায়ন-শাস্ত্রের কৃপায় আজ ইহা মানুষের অনেক কাজে লাগিতেছে। আলুকাতর হইতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যে-সব মুল্যবান জিনিষ প্রস্তুত হইতেছে তাহার শুধু তালিকা দিলেই পাঠক-পাঠিকার ধৈর্যাচুতি ঘটবার আশঙ্কা আছে । তাই মাত্র অতিপ্রয়োজনীয় কয়েকটি দ্রব্যের উল্লেখ করা গেল । বায়ু-বিহীন পাত্রে আলকাতৃর উত্তপ্ত করিলে কঠিন ও তরল কতকগুলি যৌগিক দ্রব্য পাওয়া যায়—যেমন বেনজিন (benzene), কাৰ্ব্বলিক এসিড, কাপ ক্লিন, ক্রিয়োজোট টোলুইন ( toluene), য়্যানথ,সিন (anthracene) ইত্যাদি। প্রায় অৰ্দ্ধেকট পীচরূপে পাত্রের তলদেশে পড়িয়া থাকে । রাস্তনিৰ্ম্মাণ-কার্য্যে ও ‘বি:কট’ (briquette) তৈয়ারী করিতে ইহা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত কেরোসিনের খনি সংখ্যায় খুব বেশী নয়, কিন্তু পাথর-কয়লা অনেক দেশেই প্রভূত পরিমাণে আছে । অধুনা শুধু যান-বাহন হিসাবেই নয়, অষ্টান্ত অনেক কাজেও মোটর ব্যবহৃত হইতেছে। ফলে পেট্রোল-সমস্তা জটিল হইয়া উঠিয়াছে। আমেরিকা ও ইউরোপে পেট্রোলের সহিত বেনজিন মিশ্রিত হইয়। মোটরের ইন্ধন-রূপে ব্যবহৃত হইতেছে। পোষাক-পরিচ্ছদ জলে না ভিজাইয়া অত্যুল্পকাল মধ্যে পরিষ্কার করিতে বেনজিন ধথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজন হয়। ইহাকে ‘ড্ৰাই ক্লিনিং’ বল । ন্তাপথেলিন জিনিষটির সহিত আমরা অনেকেই পরিচিত—পোকার উপদ্রব নিবারণ করিতে স্থাপপেলিনগুটিকা আমরা কাপড়ের ভ'জে রাখিয়া দিই। কিন্তু ইহার চাহিদা সবচেয়ে বেশী হয় কৃত্রিম রং প্রস্তুত করিতে। বেনজিন ও য়্যানথুসিনও সেজন্ত দরকার হয়। বাজারে যত রকম রং দেখিতে পাওয়া যায় তাহার অধিকাংশ আলকাতর হইতে প্রস্তুত । যে-সকল রঙের স্থায়িত্ব, ঔজ্জ্বল্য ও মনোহারিত্ব সম্বন্ধে একবাক্যে প্রথম শ্রেণীর প্রশংসাপত্র দিবেন আমাদের তরুণীরা—শাড়ী ব্লাউজের রং পছন্দ করিতে যাহাদের ঘৰ্ম্মাক্ত কলেবর হইতে হয়, অতি-কুৎসিত আলকাতরা হইতে সেই সকল রঙের উৎপত্তি শুনিয়া তাহারা হয়ত নাসিক কুঞ্চিত করিবেন। ( creosote ), "প্রবাসীত ఏ38ఏ আরব্য-উপন্যাস-বর্ণিত আলাদিনের প্রদীপ ব্যতীত অন্ত কোন উপায়ে যে ইহা সম্ভব হইতে পারে জনসাধারণকে তাহা বিশ্বাস করান শক্ত । জাৰ্ম্মানী ও ইংলণ্ডের স্ববৃহৎ বহুসংখ্যক রঙের কারখানায় শত সহস্ৰ লোক কাজ করিয়া জীবিক উপার্জন করিতেছে । লক্ষ লক্ষ টাকার রং বিক্ৰী করিয়া দেশ সমৃদ্ধ হইতেছে । জীব-রসায়নের ( Organic Chemistry ) BafēH HUR HÚst celoftstf: নানাবিধ যৌগিক পদার্থ মানবের রোগ-নিবারণে ব্যবহৃত হইতেছে । ক্ষত আরোগ্য করিতে ও সাপ মারিতে আমরা কাৰ্ব্বলিক এসিড, ব্যবহার করিয়া থাকি । ইহা রোগের বীজাণুনাশক। ফিনাইল জিনিষটি কাৰ্ব্বলিক এসিডজাতীয় কতকগুলি পদার্থের সংমিশ্রণ মাত্র । ঘরবাড়ি, নর্দমা পরিষ্কার করিতে ফিনাইল নিত্য ব্যবহৃত হয় । এ-সকলই আলুকাতুর হইতে উৎপন্ন হয় । উপদংশের একমাত্র মহৌষধ স্তলিভার্সন ( অথবা ৬০৬) এবং অনিদ্রা-নিবারক নানা প্রকার ঔষুধও আলকাতর হইতে তৈয়ারী হয় । সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার-দুনিয়ার মিষ্টতম জিনিফ স্যাকেরিনও আলকাতর হইতে প্রস্তুত হইতেছে । ইহা চিনি অপেক্ষণ অন্ততঃ ৫০০ গুণ বেশী মিষ্ট। বহুমুত্র রোগীরা চিনি হজম করিতে পারে না—প্রায় সমস্তটা প্রস্রাবের সহিত অপরিবর্ধিত অবস্থায় নির্গত হয় । অথচ দৈনন্দিন আহারে মিষ্টি ছাড়া চলে না । স্যাকেরিন তাহাদিগকে এ বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছে। গত মহাযুদ্ধে বিবিধ বিস্ফোটক ও বিষাক্ত গ্যাস অপৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহৃত হওয়ায় যুদ্ধ দীর্ঘকাল স্থায়ী হইয়াছিল । এই বৈজ্ঞানিক যুদ্ধের সুবিধাও অনেক । তাই ভবিষ্যৎ কালে যুদ্ধে ( যদি সত্যই যুদ্ধ কখনও আবার বাধে) এই সকল দ্রব্যের প্রচুরতর প্রয়োজন হইবে বলিয়া মনে হয়। আলুকাতর হইতে প্রস্তুত নানা রকম যৌগিক পদার্থ হইতেই অধিকাংশ বিযুক্তি গ্যাস ও বিস্ফোটক তৈয়ারী হইয়াছে। গত যুদ্ধের সময় এক ইংলওই আলুকাতর হইতে ৩,০০,০০০ টন টি. এন. টি. (T, N.T.) এবং পিকরিক এসিড উৎপন্ন করিয়াছিল। টোলুইন হইতে টি. এন. টি. এবং কাৰ্ব্বলিক এসিড হইতে পিক্‌রিক এসিডের জন্ম। ছেলেদের নানা প্রকার খেলনার উপাদান ব্যাকেলাইট (backelite )—ইহা কাৰ্ব্ব-এসিড সন্থত ।