পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রশতিক দৃষ্টি-প্রদীপ ১৭ কথাও নয়—বিশেষ ক’রে যখন হিমালয় আমাদের সকল লেখাপড়া শিখলে না কিছু না, দাদা যেন কেমন হয়ে অভাবই পুর্ণ করেছিল আমাদের ছেলেবেলাতে । গিয়েচে । লোকে কি বলবে সেই ভাবনাতেই আকুল। এখানে সকলের চেয়ে আমার ভাল লেগেচে বৌদিদিকে। আমি বৌদিদির ধরণের মেয়ে কখনও দেখি নি। যা তা জিনিষ দিয়ে বৌদিদিকে খুশী করা যায়, যে-কোন ব্যাপার যত অসম্ভবই হোক না কেন—বৌদিদিকে বিশ্বাস করানো যায়, খুব অল্পেই ভয় দেখানো যায়—ঠকিয়ে কোন জিনিষ বৌদিদির কাছ থেকে আদায় করা মোটেই কঠিন নয়। অথচ একটি সহজাত বুদ্ধির সাহায্যে বৌদিদি ঘরকল্প ও সংসার সম্বন্ধে দাদার চেয়েও ভাল বোঝে, বড় কিছু একটা আশা কখনও করে না, ভারি গোছালো, নিজের ধরণে ঠাকুরদেবতার ওপর ভক্তিমতী। কেবল একটা দোষ আমার চোথে বড় লাগে—নিজে যে-সব কুসংস্কার মানে, অপরকেও সেই সব মানতে বাধ্য করবে। অনেক ব্যাপারে দেখলাম ভাবট এই রকম, আমার সংসারে যত ক্ষণ আছ তত ক্ষণ তোমায় মনতেই হযে, তার পর বাইরে গিয়ে হয় মেনে না-হয় না-মেনে । কড়া কথা ব’লে নয়, মিনতি অনুরোধ ক’রে মানবে। কড়া কথা বলতে বৌদিদি জানে না—টকের ভ"জ নেই কোথাও বৌদিদির স্বভাযে, সবটাই মিষ্টি । সপ্তাহ দুই পরে ওদের ওখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আসবার সময়ে দাদা বললে—শোনু জিতু, আটধরার বাড়ি সম্বন্ধে কি করা যাবে, তুই একটা মত দিম । ছোটকাকীমা ঠিকই বলেচেন-ওবাড়ি আমরা ছাড়বে না। আর একটা কথা শোনু, একটা চাকরি দেখে নে, এরকম ক’রে বেড়াল নে । তোর বৌদিদি বলছিল এই বছরেই তোর একটা বিয়ে দিয়ে দিতে । ত র পর দুভায়ে ঘরবাড়ি করি আtয়, দু-জনে মিলে টাকা আনলে ভাবনা কিসের সংসার চালাবার ? সংসারটা বেশ ড়ে তুলতে পারবে এখন। আর দ্যাখ, পয়সা রোজগার তে না পারলে, ঘরবাড়ি না থাকলে কি কেউ মানে ? ঞ্জের বাড়ি কোথাও একখানা থাকা চাই, নইলে লোকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। দাদার শুধু সংসার আর সংসার। আর লোকে আমার ম্বন্ধে কি ভাবলে জা-ভাবলে তাতেই বা আমার কি ? ති) দাদার ওই সব ছাপোষা গেরস্থালী-ধরণের কথাবার্তায় আমার হাসি পায়, দাদার ওপর কেমন একটা মায়াও হয়। ভাবলুম, কোথায় যাওয়া যায় ? কলকাতায় গিয়ে একটা চাকুরি দেখে নেবো ? দাদা যদি তাতেই সুখী হয়, তাই না-হয় করা যাক। আমি নিজে বিয়ে করি আর নাকরি, ওদের সংসারে কিছু কিছু সাহায্য করা তো যাবে ? নৈহাটির কাছে অনেক পাটের কল আছে, কলকাতার না গিয়ে সেখানে গেলে কেমন হয় ? পাটের কলে শুনেচি চাকুরি জোটানো সহজ। কিন্তু শেষ পর্য্যস্ত কলকাতাতেই এলাম। মাস দুই কাটল, একটা মেসে থাকি আর নানা জায়গায় চাকুরির চেষ্টা করি। কোন জায়গাতেই কিছু জুবিধে হয় না। R এক দিন রবিবারে বারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ধরে বেড়াতে বেড়াতে অনেক দূর চলে গেছি, দমূদমীও প্রায় ছাড়িয়েচি, হঠাৎ বড় বৃষ্টি এল। দৌড়ে একটা বাগানবাড়ির ঘরে আশ্রয় নিলাম। ঘরটাতে বোধ হ’ল বহু দিন কেউ বাস করে নি, ছাদ ভাঙ, মেজের সিমেন্ট উঠে গিয়েচে । বাগানটাতেও জঙ্গল হয়ে গিয়েচে । একটা লোক সেই ভাঙা ঘরে বারানাটাতে শুয়ে ছিল, বোধ হয় ক'দিন থেকে সেখানে সে বাস করছে, একটা দড়ির আলনায় তার কাপড়-চোপড় টাঙানো । আমায় দেখে লোকটা উঠে বস্ল, বললে—এসে বসে বাবা। বেশ ভিজেচ দেখচি বৃষ্টিতে ? বসে । লোকটার বয়েস পঞ্চাশের ওপর, পরনে গেরুয়া আলখেল্লা,দাড়ী-গোপ কমানে। আমায় জিগ্যেস করলে— তোমার নাম কি বাবা ? বাড়ি এই কাছাকাছি বুঝি ? নাম বললাম, সংক্ষেপে পরিচয়ও দিলাম । * বললে—বাবা, ভগবান তোমায় এথানে পাঠিয়েচেল আজ । তুমি বসে, তুমি আমার অতিথি। একটু মিষ্টি খেয়ে জল খাও— - আমি খেতে না চাইলেও লোকটা পীড়াপীড়ি করতে