পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ সাহিত্যের ভাষা ও বস্তু (RSS) ভাষা শিক্ষণ দিতে গেলে পদে পদে হোচট খাইতে হয় না । শব্দের বানান-প্রণালীতেও বৈচিত্র্য ইহার মধ্যে তত খানি নাই, যত খানি আছে আমাদের আধুনিকতম বাংলা ভাষার মধ্যে। তবে ভাষার এই রূপটি লইয়া তুমুল তর্ক হয় না লিথিয়াছি বটে, তাই বলিয়া ছোটখাট তর্ক যে নাই তাহা নহে । এ ভাষায় যত ক্ষণ প্রবন্ধ রচনা করা হইবে, তত ক্ষণ কোনো ভাবনা নাই, কিন্তু গল্প বা উপস্তাস লিখিতে গেলেই মহা গোলযোগ বাধিয়া যায় । গল্প-উপন্তাসের পাত্রপাত্রীর কথা কহিবেন কোন ভাষায় ? যদি লেখ্য ভাষায় বলেন তাহা হইলে পড়িতে ভাল লাগে না, যথেষ্ট বাস্তবসদৃশ (realistic) হয় না । যদি কথ্য ভাষায় বলেন তাহা হইলে কোথাকার কথ্য ভাষা ব্যবহার করিবেন ? কলিকাতার ভাষা হইবে, না ঢাকার ভাষা হইবে এই লইয়া বিবাদ বাধিয় যায়। এক্ষেত্রে তর্ক করিয়া কিছু স্থির করা অসম্ভব, কারণ মানুষের মন তর্কের যুক্তিকে স্বীকার করে না, নিজের ইচ্ছাকেই প্রাধান্ত দেয় । সুতরাং এক্ষত্রে মহাজনগণ যে পথে গমন করিয়াছেন, তাহাই গ্রাহ, এই নীতির অনুসরণ করাই নিরাপদ । সাহিত্যের বস্তু লইয়াও চিস্ত করিবার দিন আসিয়াড়ে । পাশ্চাত্য জীবনযাত্রার প্রভাব আজি বাঙালীর মনকে বিশেষরূপে বিচলিত করিয়াছে দেখা যাইতেছে । সাহিত্যে, শিল্পে, চিত্রকলায় সৰ্ব্বত্র পাশ্চাত্য চিন্তার স্রোত আমাদের সনাতন যাহা-কিছু ছিল তাহা ভাসাইয়া লইয়া যাইবার উপক্রম করিয়াছে। এতটাই কি সঙ্গত ? ইহাকে বাধা দিবীর কোনো চেষ্টাই কি করিতে হইবে না ? এখন চিত্রকর আঁকিতেছেন ভিনাসের ছবি, কবি লিখিতেছেন আর্টিমিস্ (Artemis)S CHCrA ( Helen ) TTC IfTS, sts এবং উপস্তাসে নায়ক-নায়িকীর ভুল বা ঠিক ইংরেজী ভাষায়, মধ্যে মধ্যে ফরাসী ভাষায়, কথা বলিতেছেন এবং তঁহাদের চালচলনে, সাজসজ্জায়, এমন-কি প্রসাধন-দ্রব্যগুলির উৎকট বিজাতীয় নামে সকলকে চমক লাগাইয়া দিবার প্রোণপণ প্রয়াস করিতেছেন । আনন্দের বিষয় যে, এইরূপ আজগুবি সাহিত্য এখন পর্য্যস্ত একটি বিশিষ্ট দলের মধ্যেই আবদ্ধ আছে, দেশব্যাপী মহামারী রূপে দেখা দেয় নাই । কিন্তু মহামারী উপস্থিত হইবার পূৰ্ব্বে যেমন সতর্ক নগরবাসী প্রতিষেধক সেবন ও টীকা লইবার ব্যবস্থা করিয়া নিজেদের রক্ষা করিবার চেষ্টা করেন, আমাদেরও সেইরূপ প্রেতিষেধকের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন হইয়াছে । কিন্তু পাশ্চাত্যের মোহে ভাসিয়া যাওয়ার বিপদ যতখানি, কেবল মাত্র প্রাচ্যকে আঁকড়াইয়া বসিয়া থাকিয়া, দুই চোখ বুজিয়া বাহিরের যাহা-কিছু, সমস্তই ঠেলিয়া ফেলিয়া দিলে, তাহাতেও বিপদ কম নয় । আমাদের দেশ স্বভাবতই রক্ষণশীল, নুতন সমস্ত-কিছুকেই অতি সন্দেহের চক্ষে দেখা আমাদের অভ্যাস । সাহিত্যের ভিতরেও এই অন্ধতার পরিচয় যথেষ্টই পাইতে হয় । সুতরাং ইহাকে সমর্থন করিবার চেষ্টা করা সকল দিক দিয়া দেখিতে গেলে নিরাপদ নয় । দেশ-বিদেশের সমস্ত জিনিষ সমান আদরে গ্রহণ নাকরিয়া তাহার ভিতর হইতে সার জিনিষটুকু গ্রহণ করিয়া লইতে পারিলে সৰ্ব্বাপেক্ষ ভাল হয় । কিন্তু সে ক্ষমতা আমাদের আছে কই ? বহিরের স্রোতকে আমরা এত ভয় করি নে, তাহকে ঠেকাইয়া রাখিবার চেষ্টায় নিজেদের ভাষার ও সাহিত্যের স্রোতটির চারিদিকে মাটির বাধন দিয়া তাহাকে পম:র পরিণত করিতেও আমাদের বাধে না । ফলে বাহিরের বিশ্বের সহিত সকল সম্পর্ক আমাদের দূর হইয়া যায়, সাহিত্যের সজীবতা নষ্ট হয় এবং সাহিত্য জীবনের প্রতিরূপ না হঠয়া শ্মশানের ছবি হইয়া দাড়ায় । এক্ষেত্রে কি করা কর্তব্য তাহ প্রত্যেক সাহিত্যসেবীকে ভাবিয়া দেখিতে হইবে। আপন খেয়াল-খুশীতে মানুষ লেখে বটে, কিন্তু সাহিত্যিকের ব্যবসায়ে দায়িত্বও আছে অনেকখানি । সাহিত্যই যে সবসময় জীবনকে অনুসরণ করিয়া চলে তাহা ত নয়, জীবনও মধ্যে মধ্যে সাহিত্যকে অনুসরণ ও অনুকরণ করিতেছে । তাহার দৃষ্টাস্ত ভিন্নদেশেও দেখা গিয়াছে, আমাদের দেশেও একেবারে দেখা যায় নাই, এমন নয় । রবীন্দ্রনাথ “গোরা” লিথিবীর আগে, “গোরার” মত ভাষায় কোনো যুবককে কথা কহিতে আমরা শুনি নাই, বা তাহার মত দৃষ্টিতে ভারতবর্ষকে দেখিতেও কোন মানুষকে দেখি নাই। সুচরিতা বা ললিতার মত মেয়েও যে ঘরে ঘরে দেখা যাইত তাহ লয় । কিন্তু মধ্যে এই যে কতকগুলি বৎসর কাটিয়া গিয়াছে, ইহারই মধ্যে ত দেখিতেছি বইয়ের পাতা হইতে