পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

位。W。 যেটুকু স্নান বিষঃ আলো আসছে, তারই সন্মুখে স্বরমাকে যেন একটা অস্পষ্ট ছায়ামুৰ্ত্তির মত মনে হ’ল বীরেশ্বরের। শাস্তকণ্ঠে বীরেশ্বর বলল, ওখানে দাড়িয়ে কে ?— সুরমা কি ?” মরমী সন্ত্রস্ত হ’ল না, বিচলিত হ’ল না, মুদূর রহস্তলোকবাসিনীর মত নিঃশব্দে যেমন দাড়িয়েছিল, তেমনি দাড়িয়ে রইল । বীরেশ্বর ধীরে ধীরে সুরমার কাছে এসে দাড়িয়ে তার মাথাটি বুকের উপর টেনে নিয়ে স্নিগ্ধ কণ্ঠে বলল, “কি হয়েছে তোমার সুরমা ? আমায় বলবে না কি ? সুরমা বলল, “কই, কিছুই ত হয় নি ! আমি ত বেশ ভাল আছি ।” ‘কোথায় ভাল আছ তুমি ? শরীর এত খারাপ হ’ল কি করে ?” সুরমা সংক্ষেপে বলল, লা, ও কিছু নয়।’ ‘স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে তোমার । অথচ তুমি বল্‌ছ, কিছুই হয় নি—আমি ত এ-কথা বিশ্বাস করতে পারি নে।’ ‘আমি জানি, আমার কিছু হয় নি, তুমি বিশ্বাস না করলে কি হবে ? 'না, বলো লক্ষ্মীট, ডাক্তার ডাকতে হবে—অম্লখ যদি সত্যিই কিছু হ’য়ে থাকে, তার ব্যবস্থা ত আমার করা দরকার ” ব্যবস্থা করবে, ব্যবস্থা ? কি ব্যবস্থা করতে পার তুমি ? মরে গেলে আবার একটা বিয়ে করবে, এই ত তোমাদের পেশা ? মরমীর কণ্ঠস্বর দৃঢ়, সতেজ । বীরেশ্বর সহসা কোনো উত্তর খুজে পেল না এ-কথার। যে কথা বলুবে ব’লে ভেবেছিল, সব কোথায় গোলমাল হ’য়ে গেল। প্রাণপণ চেষ্টায় সে শুধু বলল, “এখানে তোমার ভাল লাগছে না সুরমা, কোথাও চেঞ্জে যাবে কি ? সেই নির্জন ঘরের মধ্যে স্বরম খিল্‌খিল্‌ ক’রে হেসে উঠল । বলল, ‘চেঞ্জ ? কিসের চেঞ্জ ? না, সে সব দরকার নেই, এইখানেই বেশ আছি।” বীরেশ্বর কোন কথা না বলে আস্তে আস্তে সুরমার "প্রবাসী; ఏ983 কাছ থেকে সরে দাড়াল । তারপর শাস্ত বি.এ কণ্ঠে বলল, ‘তাই হ’বে সুরমা, এইখানেই থাক ? আরও যেন কিছু তার বলুবার ছিল, কিন্তু সে কথা আর সে বলতে পারল না—ভারাক্রাস্ত হৃদয়ে বীরেশ্বর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । সুরমার হাসিটা বীরেশ্বর ভুলতে পারল না, ঐ রকম অদ্ভুত হাসি ছিল অণিমার—মন যখন তার ক্ষুব্ধ হ’ত, তখন সে ঐ ভাবে হেস উঠত, শাণিত ক্ষুরধারের মত সেই হাসি, বিড়াতের কষাঘাতের মত সেই হালি-মনের এবং ঘরের বিরস নিস্তব্ধতাকে কেটে খণ্ড খণ্ড ক’রে দেয় যেন সেই হাসি । নির্জন ছাদের উপর পায়চারি করতে করতে বীরেশ্বর কিছুতেই অণিমার হাসির সঙ্গে সুরমার হাসির অদ্ভুত সাদৃশ্বের কথা ভুলুতে পারে না ! ইঞ্জি-চেয়ারটা বারান্দর এক পাশে টেনে নিয়ে চাকরকে চা আনবার কথা ব’লে দিয়ে বীরেশ্বর তন্ময় হ’য়ে ভাবতে লাগল । "এ-ও কি কথনও সম্ভব হয় ?—একজনের স-ঙ্গ অfর এক জনের সাদৃশু—এও কি সম্ভব ? মানুধের মনগড়া কল্পনার শক্তি কি এত বেণী ? “কিন্তু মা ওকে অণিমা বলে ডাক্‌লেন কেন ? অার, অস্পষ্ট সন্ধ্যায় তারার মান আলোয় কেঃ কি ক’রে সুরমাকে মা বলে চিনৃতে পারল । কই, আমার ত তেমন মনে হয় নি কখনও ! কিন্তু ঐ দিনের সেই হাসি, ওঃ, ভাবতে পারা ঘfয় না একেবারেই !’ টি-পয়ের উপর চাকর কথন চা দিয়ে গেছে, বীরেশ্বরের সে খেয়াল নেই। সমুখের নারকেল গাছের একটি মাত্র পাতা অকারণে দুলছে । বীরেশ্বরের মন পড়ল ঠিক এই রকম সময়টাতে অণিমা এসে তার কাছে বসত। মাথার মধ্যে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কত গল্প সে করত—কই, এখানে ত সুরমার দেথা পাওয়া যায় না । তবে, আর সাদৃগু কি ক’রে সম্ভব ? 'না, ওসব একেবারে বীজে কথা ! কোথাও ভিত্তি নেই ওর! এই সব পাগলামি চিন্তা যত কম হয়, ততই ভাল ! খুব কাজের মধ্যে থাকা দরকার, যাতে এক মুহূৰ্ত্তের জন্তও ওসব চিন্তা মনে না আসে, সেই রকম ব্যবস্থার দরকার –বীরেশ্বর এই রকম ভাবৃতে ভাবতে