পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| মাঘ সুরমাকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে তার মাথায় মুখে কপালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বীরেশ্বর বলতে লাগল, ‘অণিমা, কতদিন পরে তুমি এলে! আমার জীবনে যে কোনো মুখ নেই অণিমা ! তুমি আস নি ব’লে আমার জীবন শ্রীহীন—দেখ, মনে আমার সুখ নেই অণিমা ! কত ঘুরে বেড়ালাম, কত তীর্থ, কত দেশ–কোথাও ত তোমাকে দেধুতে পাই নি । আজ এতদিন পরে তুমি দেখা দিলে । আমি বঁাচলাম অণিমা, তুমি এসেছ, তোমাকে এইবার সব বুঝিয়ে দিয়ে আমি বিদায় নেব। আমি আবার বেরিয়ে পড়ব অণিমা,—তোমার ছেলে, তোমার সংসার তুমি বুঝে নাও, এ সব বোঝা আমার বইবার শক্তি নেই :-বীরেশ্বরও যেন স্বপ্নাবিষ্ট, কথার তরঙ্গ যেন তার বুকের মধ্যে তোলপাড় করছে । অশ্রীসজল চোখে বীরেশ্বর তার হদয়কে নিঃশেষে উজাড় ক’রে দিতে চায় ] বীরেশ্বরের বাহুবন্ধনের মধ্যে সুরমা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কঁদিছে, নিস্তব্ধ রাত্রে শিশির ঝ’রে পড়ছে বাইরে ঘাসের উপর । বীরেশ্বরের কথায় তার স্বপ্নের বেরি কেটে গেছে—সে বে সুরমা এই বোধ যখন তার ফিরে এল, তখনও বীরেশ্বর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈরাগ্য 位之。 ব’লে চলেছে, “আমার জীবনে যে কোনো মুখ নেই অণিমা —কোনো মুখ নেই।” সুরমার সমস্ত মনের মধ্যে একসঙ্গে কারণ যেন উচ্চরবে হাহাকার ক’রে উঠল। তখন তার চোথের দৃষ্টি হয়েছে শাস্ত, প্রকৃতির স্বপ্নবিষ্ট উগ্রতা কেটে গেছে । বীরেশ্বরের দিকে শাস্ত ভাবে তাকিয়ে সে বলল, “আমিই তোমার সেই অণিমা ! মনে আমার কোনো ক্ষোভ নেই আর f দিদি আমীকে দেখা দিয়েছেন আজ, তাকে আমি স্পষ্ট দেখেছি ।” রাত্রি ভোরের দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিন ভোরে কেষ্ট ঠাকুমার বিছানা ছেড়ে দিয়ে তার বাবার দরজায় এসে ধাক্কা দিয়ে তাদের জাগিয়ে তোলে। প্রতিদিনের অভ্যাস মত কেষ্ট একটা কোট গায়ে দিয়ে এসে বাইরের দরোজায় ধাক্কা দিচ্ছে । ডাকছে, 'মা, ওমা, ওঠ—দরজা খুলে দ{ও ।” ‘এই যে, ঘাই বাবা’—ব’লে সুরমা বিছানা ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলতে গেল। এতক্ষণ পরে বীরেশ্বর নিশ্চিন্ত মনে ভাল ক’রে ঘুমবার চেষ্টা করতে লাগল। মহৰ্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈরাগ্য পরলোকগত পণ্ডিত প্রিয়নাথ শাস্ত্রী [ v পণ্ডিত প্রিয়নাথ শাস্ত্রী কর্তৃক প্রায় ৩• বৎসর পূর্বে লিখিত ] আজ মহর্ষিদেবের বৈরাগোর ও তত্ত্বজ্ঞানের কথা কিছু বলি-বৈরাগ্য ন জন্মিলে আত্মানন্দের আস্বাদ পাওয়া যায় না, যেমন দুঃখের জ্ঞান না হইলে সুথের জ্ঞান হয় না, অন্ধকারে না পড়িলে আলোকের শুভ্র রশ্মির রমণীয়তা উপলব্ধ হয় না। সংসারে মহৰ্ষির বৈরাগ্য জন্মিয়াছিল, এমন কি যে-ব্রাহ্মধৰ্ম্ম-প্রচারে তিনি জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন সেই ব্রাহ্ম সমাজের লোকেদের অনেকের মধ্যে ধৰ্ম্মভাব ও নিষ্ঠাভাব দেখিতে না পাইয়৷ তাহার বৈরাগ্য তীব্রতর হইল। তিনি সমাজের কৰ্ম্ম হইতে অবসরগ্রহণ করিতে ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। তিনি বলিলেন, “প্রকাশ হ’ল না যে, কোথায় ছিলাম, এখানে কেন আসিলাম । দুঃখ ও পরিতাপ যে আপনার কােজ আপনি ভুলে রয়েছি। কোথায় ছিলাম, কেন এখানে আসিলাম, আবীর কোথায় যাইব, অস্তাপি আমার নিকট প্রকাশ হইল না । অদাপি এখানে থাকিয়া ব্রহ্মকে যতটা জানা যায় তাহ আমার জানা হইল না । আর আমি লোকের সঙ্গে হো-হো করিয়া বেড়াইব না, বৃথা জল্পনা করিয়া আর সময় নষ্ট করিব না। একাগ্রচিত্ত হইয়া একাস্তে র্তাহার জন্ত কঠোর তপস্তা করিব। আমি বাড়ি হইতে চলিয়া যাইব, আর ফিরিব না । শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য জামাকে