পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ S 。 প্রবণসী ১৩৪১ কবিতা গান করিতেন—“যোগী জাগে,--ভোগী রোগী কোথায় জাগে । ব্ৰহ্মজ্ঞান ব্ৰহ্মধান ব্রহ্মানন্দ রস পান প্রতি ব্রহ্মে ধার সেই জাগে । “ইয়ারব আসাম বরাক রোজ কাসনএ কৗস্ত । জানমা সোথং বপোসাঁদ কে জানানএ কৗস্ত ॥ *যে-দীপ রাত্রিকে দিন করে সে-দীপ কহয় ?•••আমার ত তাতে প্রাণ দগ্ধ হ’ল । জিজ্ঞাসা করি তাহা প্রিয় হ’ল কায় ?” যে-রাত্রে মহর্ষিদেব ঈশ্বরের ঘনিষ্ঠ সহযাস অনুভব করিতেন, মত্ত হইয়া অতি উচ্চৈস্বরে বলিতেন, “আজ আমার এ সভাতে দীপ আনিও না । আজিকার রাত্রিতে সেই পূর্ণচন্দ্র আমার বন্ধু এখানে বিরাজমান।” তিনি রাত্রি ত এইরূপ আননে কাটাইতেন, দিনের বেলায় গভীর ব্রহ্মচিস্তায় নিমগ্ন থাকিতেন, প্রতিদিন দুই প্রহর পর্যন্ত তিনি দৃঢ় আসনবদ্ধ হইয়া একাগ্রচিত্তে আত্মার মুল তত্বের আলোচনা ও অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত থাকিতেন । এই সাধনবলে তিনি এই সিদ্ধাস্তে উপনীত হইলেন যে, যাহা মুল তত্ব উহার উন্ট ভাবনা মনেতেও স্থান পাইতে পারে দl, তাহ; কোন মনুষ্যের ব্যক্তিগত সংস্কার নহে, কালনিৰ্ব্বিশেষে সৰ্ব্ববাদিসম্মত । মুল তত্বের প্রমাণিকত আর কাহারও উপরে নির্ভর করে না, তাহ। আপনি আপনার প্রমাণ, তাহ স্বতঃসিদ্ধ, যেহেতুক আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞাতে প্রতিষ্ঠিত । এই মুল তত্বের উপর নির্ভর করিয়া উপনিষদের পূৰ্ব্ব ঋষিরা যলিয়া গিয়াছেন— দেবথ্যৈষ মহিমাতু লোকে যেনেদং ভ্রামাতে ব্ৰহ্ম চক্ৰং । পরমদেবেরই এই মহিমা যাহার দ্বারা এই বিশ্বচক্রঃ দ্ৰাম্যমান হইতেছে । কোন কোন পণ্ডিত মোহে মুগ্ধ হইয়া বলেন, প্রকৃতির স্বভাবেতে জড়ের অন্ধশক্তিতে কেহ কেহ বা বলেন কোন কারণ ব্যতীত কেবল কালেরই প্রভাবে এই প্রকাও জগৎ চলিতেছে, কিন্তু আমি বলি পরমদেবেরই এই মহিমা যাহার দ্বারা এই বিশ্বচক্র চলিতেছে। “স্বভাৰ মেকে করায় বদন্তি কালস্তু যান্তে পরিমহ মাত্রাঃ দেবস্ত্যৈ মহিমা তু লোকে যেনেদং প্রাম্যতে ব্ৰহ্ম চক্ৰং যদিদং ফিঞ্চ জগৎ সৰ্ব্বং প্রাণ এজতি নিঃস্থতং । --যাহ কিছু এই সমুদয় জগৎ প্রাণস্বরূপ পরমেশ্বর হইতেই নিঃস্থত হইয়াছে এবং প্রাণ-স্বরূপ পরমেশ্বরকে অবলম্বন করিয়া চলিতেছে। এই দেবতা বিশ্বকৰ্ম্ম মহাত্মা সৰ্ব্বদা লোকদিগের হৃদয়ে সন্নিবিষ্ট হইয়া আছেন। মূলতত্ত্বের এই অকাট্য সত্যসকল ঋষিদিগের পবিত্র হৃদয়ের উচ্ছ্বাস । সম্মুখে সে বৃক্ষ যে আছে তাহাক দেখিতেছি ও স্পর্শ করিতেছি, কিন্তু সেই বৃক্ষ যে-আকাশে আছে সেআকাশকে আমরা দেখিতেও পাই না, স্পর্শ করিতেও পাই না। কালে কালে বৃক্ষের শাখা হইতেছে, পল্লব হইতেছে, ফুল হইতেছে ফল হইতেছে, এ সকল দেখিতেছি কিন্তু তাহার সেই মূল কারণকে দেখিতে পাই না, বৃক্ষ যে-জীবনীশক্তির প্রভাবে মুল হইতে রস আকর্ষণ করিয়া আপনাকে পুষ্ট করিতেছে, যে-শক্তি তাহার প্রতি পত্রের শিরায় শিরায় কাৰ্য্য করিতেছে, সেই শক্তির প্রভাব আমরা দেখিতেছি কিন্তু সেই শক্তিকে আমরা দেখিতে পাই না এয সৰ্ব্বেষু ভূতেষু গুঢ়োত্মান প্রকাশতে । এই গৃঢ়পরমাত্মা সৰ্ব্বভূতে ও সৰ্ব্ব বস্তুতে আছেন । কিন্তু তিনি প্রকাশিত হন না । ইন্দ্রিয়সকল বাহিরের বস্তুই দেখে, অস্তরের বস্তুকে দেখিতে পায় না—ধিক ইন্দ্রিয় সকলকে । “পরাঞ্চিখানি বাতৃণ স্বয়স্থস্তস্মাৎ পরাঙ পশুতিনান্তরাত্মন্‌ কশ্চিদ্বার: "s:গ নমস্ক আবৃত চক্ষুরমূতত্ব মিচ্ছনৃ। স্বয়ম্ভু ঈশ্বর ইক্রিয়দিগকে বহিমুখ করিয়াছেন, সেই হেতু তাহারা বাহিরেই দেখে, অন্তরাত্মাকে দেথে না । কোন ধীর অমৃত তত্বকে ইচ্ছা করিয়া, মুদ্রিত চক্ষু হইয়া সৰ্ব্বান্তর্গত এক আত্মাকে দেখেন । উপনিষদের এই উপদেশ শ্রবণ করিয়া, মনন করিয়া নিধিধ্যাসন করিয়া ঐ ব্রহ্মযজ্ঞভূমি হিমালয় হইতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঈশ্বরকে দেখিতে পাহলেন । চৰ্ম্মচক্ষুতে নয় জ্ঞানচক্ষুতে । মহর্ষির প্রতি উপনিষেদের আদেশ এই—“ঈশবাস্ত মিদং সৰ্ব্বং ” ঈশ্বরের দ্বারা এই সকল আচ্ছাদন কর । তিনি ঈশ্বরের দ্বারা এই সকল আচ্ছাদন করিলেন । এবং বলিলেন— বেদাহামেতং পুরুষং মহাস্তুং আদিত্য বর্ণং তমস: পরস্তাত । আমি এই তিমিরাতীত আদিত্য বর্ণ মহা পুরুষকে জানিয়াfছ— “বাদ আজি মুর ব! এফাকু দহমু অঞ্জ দিলে খেৰ ; কে বথুর্ষেদ রসদয়ন গোবার অাখের সোদ * —এখন অবধি জ্যোতি আমার হদয় হইতে পৃথিবীতে ছড়াইব । যেহেতুক আমি সুর্য্যেতে পৌঁছিয়াছি ও অন্ধকার বিনাশ হইয়াছে । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের এই বৈরাগ্য ও সাধনের ফলই ব্রাহ্মধৰ্ম্মের পূর্ণাঙ্গতা ও ব্রাহ্মধৰ্ম্মের ব্যাখ্যান ।