পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঘ আসিয়াছে— ঐবিমল মিত্র খবরটা গ্ৰামময় রাষ্ট্র হইয়া গিয়াছে । মতি মল্লিক বৃদ্ধ অথৰ্ব্ব মানুষ । বাতে ভাল নড়িতে পারেন না বলিয়া দাওয়ায় বসিয়া দড়ি পাকাইতেন ; কয়েক দিন হইল তাহাকেও আর দেখা গেল না। বলেন— ই যাপু, প্রাণ অম্নি সস্তা নয়—খাই-না-খাই ঘরে পড়ে থাকব, তা ব’লে বাইরে বেরুচ্ছি নে— নন্দ কলুর ডোবাটার পাশের দিকে একটু জঙ্গল মতন। কয়েকটা শাড়া আর আসগাওড়া গাছ জন্মিয় বহুদিন ইষ্টতে জায়গাটি আগম । তথাপি বর্ষার দিনে ডোবায় ধন জল ভরিয়া উঠিত, পাড়ার বৌ-fধরা ওই ড়োবা হইতে কলসী-কলসী জল বহিয়া লইয়া বাইত ; ভয় বলিয়া কোন দিন কিছু ছিল না। কিন্তু খবরটা জনাজানি হইবার পর হইতে ঐদিকে আর কেহ মাড়ায় ন, ••বিকাল হইতে-না-হইতে গ্রাম যেন খা-খা করিতে থাকে! রাত্রে সারা গ্রাম যখন নিশুতি—অন্ধকারের তন্দ্র ভেদ করিয়া কত বিকট শব্দ সকলের কানে আসে—সকলেই গুনতে পায় যেন কাছাকাছি পোয়াটাক পথ দূরেই সারা পল্লী চকিত সঙ্গস্ত করিয়া দিয়া শব্দ হইতেছেফেউ ফেউ— শব্দটা কানে আসিতেই সকলের ঘুম ভাঙিয়া যায়। জানালা দরজা বন্ধ করিয়া দিলে গ্রীষ্মকালে ঘরের ভিতর থাকা যায় না, কিন্তু উপায় নাই। ঘরের ভিতর গরমে বন্ধ থাকিবে তবু অপঘাতে কেহ প্রাণ দিবে না ! সন্ধা ইহতেই সকলে শয্যাগ্রহণ করে, আবার ওদিকে রৌদ্র উঠিয়া বেলা হইলে তবে সকলে বিছানা ছাড়িয়া, উঠে । দিনের আলো থাকিতে থাকিতে যে-যাহার কাজ সারিয়া লয়—সন্ধ্যাবেল বাহির হইয়াছে কি অমূনি গলার টুটি চাপিয়া ধরিয়া প্রাণটি বাহির করিয়া লইবে । প্রথম প্রথম দু-এক জন বিশ্বাস করিতে চায় নাই । শশিনাথ ছেলেবেলা হইতেই ডানপিটে, বলিত,—খ্যা, বাঘ অমূনি বললেই হ’ল কি না-ও বাঘন্টাঘ নয়, বুলি অমেরতো–কুদো শ্বালু-ট্যাল হবে আর কি— কিন্তু এক দিন সকলেই বিশ্বাস করিল । গ্রামের চৌকীদার গিরিধারীকে কয়েক দিন ধরিয়া পাওয়া যাইতেছিল না । চারিদিকে খোজ পড়িল । পরের দিন দেখা গেল বিলের ধারে শুক্নো নলুথাকড়ার গাদার ধারে মরিয়া পড়িয়া আছে। কতকগুলি শকুনি শেয়াল দেহটি থাইয়া অৰ্দ্ধেক নিঃশেষ করিয়া দিয়াছে । অমুত বলিল,—এ যদি সেই শালার কীৰ্ত্তি না হয় ত এই দিককার গোফ আমি কামিয়ে ফেলে দেব—দিব্যি করলাম— - খবরটা যে মিথ্যা নয় তাহার প্রমাণ পাওয়া গেল আর এক দিন। নিত্যানন পিওন গ্রামে গ্রামে চিঠি বিলি করিয়া দিয়া পোষ্টাপিসে ফিরিয়া যায়। পোষ্টাপিস সেই গাজনায়। ফিরিতে তাহার রাতই হইত। সেইদিন সন্ধ্যাবেলা জলাহাটির ধানক্ষেত হইতে ডাঙ্গার উপর উঠতেই কি রকম একটা গো গো শব্দ নিত্যানদের কানে আসিয়াছিল । - নিতানন্দ বলিল,—বুলি অমেরতা, ভয় ত জীগর, কোনও কালে নেই ভাই—কিন্তু এই তোর গা ছুয়ে বলছি, সেই শব্দ না শুনে যেন ঠিক থর থর ক'রে কঁপিতে লাগলাম, বুঝলি—পাশে ছিল একটা তেঁতুলগাছ, আর কিছু নেই— পেছন পানে কেবল ধানক্ষেত আর সম্মুখে কেবল ছাড়াছাড়া জঙ্গল—দুগা বলে গাছের ওপর উঠে গে পড়লাম—তার পর দেখি কি জানিস্—যেখানটায় ঢালু জায়গাতে একটুখানি জল জমেছে, ঠিক সেথেনে একটা ছাগল ধীরে চিবোচ্ছে—তোকে বলবো কি-যেমন তেমন নয়-মাপলে যদি পুরোপুরি দশ হাত না হয় ত••• মতি মল্লিক ঘরের ভিতর বসিয়া পথের লোককে জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন, কাল কাকে নিলে গা, পাচুর মা ?