পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:মাম ও বউ কত দিন বলিয়াছে—বাড়িতে তোমার কে শত্তর আছে শুনি যে বাইরে যাবে ঘুমুতে ? প্রসন্ন ঠাকুর বলিত,—ঘুমুই কি সাধ করে ?-- সে কথা সত্য ! শীত লাই, গ্রীষ্ম লাই, বর্ষা নাই, প্রসন্ন ঠাকুর যে মন্দিরের ভাঙা দাওয়ার উপর গুইয়া থাকে তাহা সাধ করিয়া নয়। তাহার কারণ আছে । সে-কারণ সকলকে প্রকাশ করিয়া বলা যায় না ! চুপি চুপি প্রসন্ন ঠাকুর বউয়ের কানে কানে বলিত,— চল্লিশ ভরি সোনার গয়না ঠাকুরের গায়ে আছে—এই তুভিক্ষের বাজারে—এ-দেশের যে আকালে লোক—এর সব পারে— চল্লিশ ভরি সোনীর লোভে যে এ-দেশের লোক ঠাকুরের ‘গায়ে হাত দিবে তাহ বউ বিশ্বাস করিত না । কিন্তু প্রসন্ন সে-কথা শুনিবার পাত্র নয় । মানুধে কি না পার ঐ পয়সার জন্ত লোকে যখন নিজের বীপকে খুন করিতে পারে—তখন পাথরের দেবতা কোন ছার 1 মানুষে সব পারে । দুপুরবেলা সেই আড্ডায় আসিয়া প্রসন্ন ঠাকুর বসিল । বলিল,—একটা উপায় তোমরা ক’রে ফেল শশি, তোমরা হচ্ছ জোয়ান লোক, গায়ে ক্ষমতা আছে—আমি ত আর পারি নে,•••রাতের বেলা দাওয়ায় শুয়ে থাকি, কোন, দিন টেনে নিয়ে যাবে বাঘে,”সেইটিই ভাল হবে ?... শশিনাথ বলিল,—শিগিরই একটা ব্যবস্থা করছি ঠাকুর মশাই—কিন্তু দাওয়ায় শোওয়া তোমার আর চলবে না—বাড়িতে ঘরে গিয়ে গুতে হবে—মন্দিরের দরজায় তালা দেওয়া থাকে ত, তবে আবার তয় কিসের তোমার, শুনি ? প্রসন্ন ঠাকুর বলিল,—চোর-টোয়—বুঝলে না,—বলা যায় কি, কীর মনে কি আছে ? —চোর ? অমৃত ভাবিতেছিল । বলিল—চোর হাত দেবে ঠাকুরের গায়ে। বল কি ঠাকুর মশাই ? দেবতার গায়ে হাত ?...কুষ্ঠ হবে না ? হাত যে থ’লে পড়বে—তার fক গতি হবে ?...জয় মা সারদেশ্বরী—কি ধে বল ঠাকুর মশাই ! জার চোরের কি বাঘের ভয় নেই ভেবেছ ? و ويصدنيزون বাঘ আসিয়াছে দেবতা না-হয় যদি রেহাই দেয়, বাঘ ত আর ছাড়বে না তPবলে—? উপস্থিত সকলেই সেই কথা বলিল । চোরই হোক।--আর যাহাই কোক বাঘের ভয় করে না, এমন প্রাণী ত ত্রিভুবনে নাই ! প্রাণের মায়া সকলেরই আছে |•••প্রাণ অমন কাহারও সস্তা হয় --- সেদিন সত্য সত্যই মন্দিরের দাওয়ায় আর শোওয়া হইল না । পুরোহিত বলিয়া বাঘ ত আর তাহাকে ছাড়িয়া দিবে না ! বাঘের যদি অত বুদ্ধিই থাকিবে, তবে আর ভগবান তাহাকে বাঘ করিয়া স্বষ্টি করিয়াছেন কেন! প্রসন্ন ঠাকুর সেদিন বাড়ি আসিয়া গুইল । রাত্রিবেলা দুই প্রহরে শশিনাথ আসিয়া অমৃতকে ডাকিল,—ও অমেরুতে, অমেরুতে, অমেরুতে রে, ও — উঠে পড়— অমুত ধড়ফড় করিয়া বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িয়ছিল । আগে হইতেই সমস্ত ব্যবস্থা ঠিক হইয়৷ ছিল । বাহিরে অসিয়া অমৃত বলিল—লোহার ডাগুটি নিয়েছিস্ত ? সমস্ত ঠিক্‌ ৷ নিঝুম পল্লীর দ্বিপ্রহরের নিদ্রা–তন্দ্রাচ্ছন্ন আকাশ । বাঘের ভয়ে সারা পৃথিবী যেন অবশ হইয়া আছে । যেযাহার বাড়ির দরজা জানাল বন্ধ করিয়া অঘোরে ঘুমাইতেছে। কোথায় এতটুকু টু-শব্দ নাই—নিস্তব্ধতার সমুদ্র এখন নিটোল নিস্তরঙ্গ ! তালা ভাঙিয়া মন্দিরে ঢুকিতে হইবে। তা শশিনাথ ওস্তাদ লোক ! তালা ভাণ্ডিতে তাহার দেরি হইল না ; দরজা খুলিয়া শশিনাথ আর অমৃত ভিতরে চুকিল । ফস করিয়া একটা দেশলাই-কাটি জালিতেই ঘরের ভিতরটা আলোময় হইয়া উঠিল । কিন্তু বিস্ময়ের উপর বিস্ময় -••শশিনাথ দেখিল— অমৃতও দেখিল ।•••দেখিয়া দুই জনের চক্ষুই কপালে উঠিল । এমন ঘটনা যে ঘটিবে তাহা দু-জনের মধ্যে কেহই কল্পনা করিতে পারে নাই। শশিনাথ অমৃতর দিকে চাহিল, অমৃত চাহিল শশিনাথের দিকে । দেশলাই-কাটিটি পুড়িয়া নিঃশেষ হইয়া গেল।-- ...