পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যশ্চায়ম্ আত্মনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিজ্ঞানের পথে মানুষের শক্তি যে আশ্চর্য্য উন্নতি লাভ করেছে তার তুলনা নেই। বহু শতাব্দীর চেষ্টায় জ্ঞানসাধনা যে ফল লাভ করেছিল এই অল্পকয়েক বৎসরে মানুষ তার চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর হয়েছে। শুধু যে নুতন তথ্য আবিষ্কার করেছে তা নয়, পূৰ্ব্বে বিজ্ঞানের যে ভূমিকা ছিল তা পর্যন্ত নুতন করে তৈরি করেছে। সভ্যতার প্রথম যুগে মানুষ সত্যকে খুজেছিল বাইরে ; আহার বাসস্থান প্রিয়জনের সঙ্গ ও শত্রুর আক্রমণ থেকে আ সুরক্ষণ, এই দিকেই তার শক্তি ধাবিত হয়েছিল। এই চেষ্টীর ভিতর দিয়ে বাহা প্রকৃতির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে । নানা প্রক্রিয়ার অনুবৰ্ত্তী হয়ে প্রকৃতির সঙ্গ তার এই প্রথম দ্বন্দ্ব, তার বুদ্ধির ও শক্তির লীলার এই প্রথম আরম্ভ । সঙ্কীর্ণ সীমার মধ্যে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি তখন নিবিষ্ট ছিল—যতটুকু ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ তাঁরই আবেষ্টনে তার সকল পরীক্ষা সকল আশঙ্কা ছিল আবদ্ধ । সেই এক দিন স্বল্প পাথেয় নিয়ে মানুষ জ্ঞfনর সাধনায় প্রবৃত্ত হয়েছিল, তার পর বহু পথ অতিক্রম ক'র মহাবিশ্বের বে-পরিচয় প্রচ্ছন্ন আছে গভীরে উৰ্দ্ধে, দূরে নিকটে, ক্ষুদ্রে বৃহতে, মানুষ এক দিন সেই পরিচয় পেয়েছে—তাঁর শক্তির সীমা এপন কল্পনা করাও fয় না ; মানুষ যে বড় তীতে কোনো সন্দেহ নেই—সে কথা ময়ে আমাদের উৎসব করবার কারণ আছে । কিন্তু কী আশ্চর্যা, মানুষের যখন এই অপরিসীম উন্নতি ঠিক সেই সময়ে তাব এ কী পরিচয়, এ কী হানাহানি, এ কী অসমান্ত হিংস্রতা ! মানুষের প্রতি মানুষের অন্তহীন শক্ৰতা ! সমস্ত যুরোপথণ্ডে মানব-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এ কী অভিবান ! গৌরব করব কিসের ? এই থেকে বুঝতে হবে, হওয়াটাই বড়ো কথা, পাওয়াটা নয়। পাওয়ার দিকে জানার দিকে সংগ্রহের দিকে জয়ী হয়েছে মানুষ, বাইরের দিকে যত ঐশ্বর্য সে জড়ো করেছে— তার সমস্ত সাধনা চেষ্টা সে দিয়েছে বাইরের পাওয়া ও কাজের দিকে, বিশ্বশক্তিকে অগ্নি"ন্ত কং স্বশক্তি:ক বড়ো করার দিকে । প্রাকৃতবিজ্ঞানীর অসীম মনকে বিস্তৃত করে দিয়েছেন, পৃথিবীর দেশে দেশে তারায় তারায় বুদ্ধিকে মুক্তি দিয়েছেন । কিন্তু ভুলে যাই, আরেক অসীম আছে, যা’র পথ রুদ্ধ হ’লে বাইরের ঐশ্বৰ্য্য অপরিসীম হ’লেও দরিদ্রা ঘুচতে চায় না । বাইরের দীনতায় তো শুধু অল্পবস্ত্রের দুঃখ, কিন্তু অস্তরের দীনতায় দেখা দেয় সৰ্ব্বনেশে দানবিক হিংস্ৰতা । সভ্যতা আপনি আপনার বিষ উৎপন্ন করছে ; বুদ্ধির যোগেই মানুষ মরবে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রত্যহ মানুষ প্রখরতর অস্ত্র আবিষ্কার করছে—এমনি ক’রে সে প্রচণ্ড দক্ষতায় জোর বিনাশের পথে যাচ্ছে। আকাশে আলোকে যিনি আছেন, যিনি আছেন “আত্মনি,” তাকে অস্বীকার ক’রে মানুষের কী পরাভব প্রত্যহ তা দেখতে পাচ্ছি। সে অসীম তো বস্তুব্যক্ত নয়, তাকে উপলব্ধি করা যায় কিন্তু তাকে তো সঞ্চয় করা যায় না । অন্তরতম তার উপলব্ধি আপনার মাঝখানে, যেখানে “হওয়ার” জায়গা। বাইরের শক্তিতে আমরা ধন পাই, অস্তরের সত্য পাই মুক্তি—সে আরেক ঐশ্বর্য । সেই ঐশ্বৰ্য্যকে পেয়েছিলেন আমাদের দেশের সাধকেরা ; বিজ্ঞান যেমন পেয়েছে দেশগত কালগত অসীমকে তেমনি আমাদের দেশের ঋষি পেয়েছিলেন আত্মগত অসীমকে । কত বড়ো সাহসের সঙ্গে তাঁরা বলেছিলেন, আমরা ব্রহ্মের মধ্যে আপনাকে পাব। অসীমের মধ্যে পরম পুরুষের মধ্যে আপনার ব্যক্তিরূপকে দেখে মুক্তি লাভ করব। বলেছিলেন— বেদাহমেতং পুরুষং মহস্তম্। দেশবিদেশে কত তথ্য অীজ আবিষ্কৃত হয়েছে—সে তো বুদ্ধিগত দৈহিক জগতের । কিন্তু এ কী কথা ! মহান পুরুষক দেখেছি, যার বাহিরের ধৰ্ম্ম নেই, আপনাতে যিনি আপনি আলোকিত । এ তে বস্তুর জগতের কথা নয়, আমার দেহ শু!কাশে