পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N○。 ఏ98S; থাকিত । কয়েক হাত গৰ্ত্ত কাটিয়া চারি দিকে গোল করিয়া ইটের গাথনি তোলা হইয়াছে। ভিতরের মাটি কাটিয়া তোলার সঙ্গে সঙ্গে এই গাথনি নীচে নামিতে থাকিলে তারই সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখিয়া উপর হইতে গাথিয়া চলা হয়। ইদারা-স্বষ্টির এ-সমস্ত কলকৌশল কিছুই কালুর অজানা নয় । দ্রোণাচার্য্যের অস্ত্যজ শিষ্যের মত কেবল অখণ্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণের দ্বারা সে সব শিখিয়া ফেলিয়াছে। সাবধানে সে ইদারার মধ্যে নামিয়া যাইত । তলার ভিজা নরম • মাটিতে পা দিয়া শিহরিয়া উঠিত । পিপাস্তু ক্ষুধাৰ্ত্ত কীটের মত মৃত্তিকার এই ক্ষতের মধ্যে সে বোধ করিত অপরিমেয় উল্লাস। মাংসের মত কোমল মুত্তিকায় দুই হাতের দশটা আণ্ডল ঢুকাইয়া দিয়া সে খাবলা খাবলী মাটি তুলিয়া ফেলিত। তার পর আঙল ব্যথা করিতে গকিলে ইটের আবেষ্টনীতে পিঠ দিয়া দাড়াইয়া সে দেখিত স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখিত এমনি একটি বিস্ময়কর সৃষ্টির অবাধ অধিকারের । কালুর এ-স্বপ্ন হয়ত সফল হঠত না । হয়ত সে মাধবের মতই ঘরের চালে ধানের ক্ষেতে দিনমজুরী করিয়া মরিত। কিন্তু হারাণ মরিয়া গেলে মধু তাহকে বাপের ব্যবসায়ে নিজের সঙ্গী করিয়া লইল । এত দিনে কালুর স্বপ্ন দেখিবার অভ্যাস বন্ধ হইয়াছে। পেটে আর তাহার প্লীহা নাই, মাথার জমজমাট বোকামিও সাফ হইয় আসিয়াছে। কিন্তু তাহার আদিকালের সেই স্বষ্টির প্রেরণা আজও হইয়া আছে অক্ষয় । সকালে পূব দিকের গাছের ডগা পর্যন্ত সূৰ্য্য উঠিলে সে কোদাল তুলিয়া লয়, চকচকে ফলটি বারবার মাথার উপর হইতে নামিয় আসয় মাটিতে আমূল প্রোথিত হইয়া যায়। দেখিতে দেখিতে পাশের ঝুড়িটি ভরিয়া ওঠে । পিঠ বহিয়া বুক বহিয়া দরদর করিয়া ঘাম ঝরিতে থাকে। হাতের ও বুকের মাংসপেশীগুলি এক সময় ব্যথা করিতে থাকে, কোমর ধরিয়া যায়। স্বর্য উঠিয় আসে আকাশের মাঝখানে । মধু বলে, চালাবি ?" ‘তামুক খাঁ কালু, একটানা কাহাতক অন্ত এক জন বলে, “তোর যুস্তনায় কাজ করা ভার বাপু, তোকে দেখিয়ে বাবু মোদের অলিসে কয় ? কালু সিধা হইয়া দাড়াইয়া কোমরের টনটনানিতে মুখ বাকাইয়া বলে, ‘বাবুকে দু-কোপ কোদাল চালাতে বলিস, ভিৰ্ম্মি যাবে’খন P মাটির স্তর-বিভাগের বৈচিত্রো কালু অবাক হইয়া যায়। এটেল মাটি, বালি মাটি, ধুসর পাটল কালো রঙের মাটি, কত রকমের মাটিই যে পর-পর থাকে-থাকে সাজানো আছে! পৃথিবী যেন তাহার সহিত তামাশা করিতে ভালবাসে । কোদাল বসে না এমনি শক্ত কঁকির-মেশানো মাটিতে খুঁড়িতে আরম্ভ করিয়া পাচ-ছয় হাত নীচে হয়ত বালি-মেশানো আলগা ঝুরঝুরে মাটির দেখা মেলে, আরও খানিকট খুড়িয়া পুনরায় শক্ত মাটি পাওয়া না গেলে সেখানে কুপ-খননই বন্ধ করিয়া দিতে হয় । মাটির বর্ণ ও প্রকৃতির বৈচিত্র্য ছাড়া আরও অজস্র বিস্ময় কালুর জন্ত মাটির তলে সঞ্চিত হইয়া থাকে। পনর হাত খুড়িয়া গাছের শিকড়ের দেখা পাইয়া কৌতুহলভরে উপরে উঠিয়া সে চারি দিকে তাকায় । চারি পাশের গাছগুলির মধ্যে যে রসিক তরুটি রসদের সন্ধানে এত নীচে শিকড় পঠাইয়াছে, সেটিকে বাছিয়া লইবার চেষ্টা করে । কোনদিন অনেক নীচে মাটির হাড়ি-কলসীর ভাঙা টুকরা দেখিতে পায়, কোনদিন তাহার কোদালের ফলায় উঠিয়া আসে মানুষের হাতে তৈরি ইট, মানুষের ব্যবহৃত লোহার জিনিষের মরিচ ! কালু আশা করে এক দিন এমনিভাবে সে গুপ্ত ধনের সন্ধান পাইবে । টাকা ও মোহর ভরা কলসীর গায়ে কোদাল ঠেকিয়া টং করিয়া একটি শব্দ হইবে। সে সাঙ্কেতিক আওয়াজ সে চিনিতে পরিবে চোখের পলকে । বুঝিতে পরিবে, কলসীটি একক নয়, সে আর ছ’টি কলসীর নকিব কোদালের ঘা খাইয়া সাড়া দিয়াছে । সাত কলসী মোহর। মাটির বুকে গোপন-করা যত গুপ্ত ধনের রূপকথা কালু শুনিয়াছে, সব সাত কলসী মোহরের, সোনার চকচকে মোহর, সাত কলসীর এক কলসী কম নয়। এত মোহর দিয়া সে কি করিবে কালু তাহা জানে না । কল্পনায় ধনী হইতেও সে একান্ত অক্ষম। দশ-বিশ টাকার ব্যবহার সে জানে, তার বেশী নয়। তবু,