পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭২০ কলিকাতায় ছুটি লইয়া আছেন। অরুণের মাতা তাহার জন্মগ্রামের মেয়ে, তাহীকে দাদা বলিতেন, ছেলেবেলায় একসঙ্গে খেলাধুলা করিয়াছেন। সেই সম্পর্কে অরুণ র্তাহাকে মামাবাবু বলে । হেমবাবু যুববিয়সে কলেজে পাঠের সময় ব্রাহ্মসমাজের সম্পর্কে ও প্রভাবে আসেন । একবার ব্রাহ্মধৰ্ম্ম গ্রহণ করিবেন ঠিক করিয়াছিলেন। পরে হিন্দুসমাজে বিবাহ করিলেও ব্রাহ্মসমাজের সামাজিক সংস্কার আধুনিক আদর্শ নিজপরিবারে প্রতিষ্ঠা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন । এ-বিষয়ে র্তাহার স্ত্রী স্বর্ণময়ী তাহার সাহায্যকারিণী । বিবাহের পর তিনি স্ত্রীকে মেম রাখিয়া ইংরেজী শিখাইয়াছিলেন, তাহা বুথ হয় নাই । দিল্লী সিমলার উচ্চতম অফিসার-সমাজে তিনি নিঃসঙ্কোচে সসম্মানে মিলিতে পারিয়াছেন । দুই বৎসর পূৰ্ব্বে সিমলাতে ঠাও লাগিয়া হেমবাবুর জর ও পেটের অসুখ হয়। দিল্লীতে নামিয়া পেটের অসুখ কমিল, কিন্তু জর ছাড়িল না। কলিকাতায় আসিয়া প্রথমে কিছু সুস্থ হইয়াছিলেন। কিন্তু জর একেবারে ছাড়িতেছে না। ডাক্তারেরা আশ্বাস দেন, শীঘ্রই সুস্থ হইয়া উঠিবেন, আর একটু বল পাইলেই চেঞ্জে গেলে সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করিবেন। বস্তুতঃ, রোগ যে কি, তাহ ঠিকৰূপ নিৰ্দ্ধারিত হয় নাই । শয়নগৃহের সম্মুখে ঢাকা বারান্দায় এক লম্বা চেয়ারে পিঠে বালিশ ঠেলান দিয়া হেমবাবু গুইয়াছিলেন । ফাঙ্কনের শেষে বেশ গরম পড়িয়ছে, সন্ধ্যায় ঘরে থাকিতে আর ইচ্ছা করে 국 | বারানার সামনে বড় খোলা ছাদ জুড়িয়া নানা ফুলে গাছ-জুই, বেল, গোলাপ, এষ্টির, ডালিয়, ক্রিসেনথিমাম্। কন্তদের সহায়তা ও উৎসাহে বিছানাতে শুইয়া হেমবাবু এই সুন্দর ক্লফ-গার্ডেন তৈরি করিয়াছেন । অরুণ বারান্দায় প্রবেশ করিতেই চন্দ্রা চেচাইয়া উঠিল— বাবা, অরুণদা এসেছেন। হেমবাৰু একটু উঠিয়া বসিয়া বলিলেন—এস, অরুণ এস, ওরে শীল, তোর অরুণধার জন্তে একটা চেয়ার দে । অরুণ ধীরে বলিল—আমি এই মোড়াতে বসছি, কেমন আছেন মামাবাবু ? "প্রবাসীস্টং ఏ98్పు শীলা ফুলের টবে জল দিতেছিল । বাঝরি নামাইয়া পিতার নিকট চুটিয়া আসিল । হাতে একটি ফুল। —বাবা, দেখ, কি সুন্দর নীলফুল, দেখ অরুণ-দা—কি নাম বল ত ? —কোন বিলিতি ফুল হবে । শীল একটি লম্বণ নাম বলিল । মুখস্থ । —অরুণ-দ, তোমার ত বাটন-হোল নেই । —তোমার মাথায় গোজ, বেশ দেখাবে। খোপাতে গুজিবার ইচ্ছা হইলেও, ফুলটি শীলা পিতার চেয়ারের পাঙ্গে ছোট মাৰ্ব্বেল টেবিলের উপর ফুলদানির পুষ্পগুচ্ছে গুজিয়া দিল । হেমবাবু অতি সৌর্থীন প্রকৃতির মানুষ ! অহস্থতায় র্তাহার শুচিত ও সৌন্দর্য্যবোধ আরও স্তন্ম প্রবল হইয়াছে । তাহার শয্যা, আসবাব, গৃহ সব সময়ে পরিষ্কার থাকা চাই । জানালায় রঙীন সিল্কের পদা, নীল দেওয়ালে রাফা য়লের ‘মাতৃমূৰ্ত্তি, মাইকেল এঞ্জিলোর ‘অদামের জন্ম কোরো-র ‘লাওস্কেপ' ইত্যাদি কয়েকখানি ছবি যথাযথ টাঙানো ; চেয়ারে রঙীন রেশমের ঝালরওয়ালা বালিশ, টেবিলে স্থচের সূক্ষ্ম কাজ-করা সাদা আচ্ছাদন, চারি দিকে শোভন পরিচ্ছন্নতা । তাহার স্ত্রী-পুত্র-কন্ত সকলকে তাহার নিকট পরিষ্কার পরিচ্ছদে থাকিতে হয়, সকলে বেশে থাকে, সুচারু জীবন যাপন করে, ইহাই তাহার বাসনা । তাহার সম্মুখে ভৃত্যরাও ময়লা কাপড়ে আসিতে পারে না । হেমবাৰু স্নেহকণ্ঠে বলিলেন—ওরে অরুণকে কিছু খেতে দে । --না, আমি এই থেয়ে আসছি । —ত হোক, কিছু ফল খাও, উমা ! —না, মামাবাবু! শীলা হাসিয়া বলিল-বাব, অরুণদা কি লাজুক । চন্দ্র বড়দিদির নিকট ছুটিল, খাবার আনিতে । উমা মিষ্টি ও ফল লইয়া আসিলে অরুণ আর আপত্তি করিল না । হেমবাবু বলিলেন—তুমি খাও অরুণ। °戀 রোগে ভুগিয়া তাহার অন্তর যেমন সকলের হৃদয়ের প্রেম : সব ফুলের নাম তাহার