পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মলন্তন জীবনায়ন *RN○ ভাঙিতে নয়, আরও মজবুত করিতে । কোন অখ্যাত অরুণ বি-এ ক্লাসে উঠিলেই, সুন্দরী মেয়ে দেখিয়। জন্মগ্রাম হইতে এক সরলা শঙ্কিত বালিকা ঘেদিন সালস্কৃত গৃহবধুরূপে এই গৌরবময় বনিয়াদী পরিবারে আসিয়াছিল, ওই পূজার অঙ্গনে বরণডালার প্রদীপশিখায় সেদিন এই বংশের মহিমা মর্য্যাদা রক্ষার ভার যে তাঁহারই হস্তে সমর্পণ করা হইয়াছিল । অরুণ ও প্রতিমার জীবনে সেই মহিমার অক্ষুন্ন রূপ দেখিয়া না-ঘাইতে পারিলে ঠাকুমা শান্তিতে মরিতে পারিবেন না ! দ্বিতীয় পুত্রের উপর তিনি কিছু আশা করেন না । বিলাত হইতে সে মদ্যপ, অনাচারী, হিন্দুধৰ্ম্মদ্বেষী হইয়া আসিয়াছে । কেহ কেহ বলে, সে বিলাতে বিবাহ করিয়াও অtসিয়াছে । ঠাকুমা তাহা বিশ্বাস করেন না, তবে তাষ্ঠীর বিবাহেরও কোন চেষ্টা করেন নাই । সে শুধু তাহার মৃত্যু পৰ্য্যস্ত বাটিয়া থাকুক অরুণ ও প্রতিম{কে তিনি জীবনের সমস্ত আশা ও সেচ দিয়া জড়াইয়াছেন । এ-বংশের আদশানুসারে তাহীদের মানুষ করিতে হইবে । তাহfর ঘথন পিতার মৃত্যুর পর ঠাকুমার সহিত বাস করিতে আসিল, তাহদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা লইয়। মাতা ও পুত্রে বিবাদ বাধিল । প্রেতিমার বিলাত-ফেরৎ বাবা তাহাকে কোন মেমসাহেবের স্কুলে ভৰ্ত্তি করিয়া দিতে চাহিলেন, আর ঠকুমার ইচ্ছা, প্রতিমা সংসারের কাজকৰ্ম্ম করে, খুব-জোর কোন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ-পশুিতের নিকট সংস্কৃত শ্লোক শিক্ষা করে । এ-বংশের কোন মেয়ে কথনও গাড়ী করিয়া স্কুলে বায়ু নাই । শেষে রফা হইল প্রতিম কলিকাতার কোন বাঙালী মেয়েদের স্কুলে পড়িবে, বাড়ির গাড়ী তাহাকে পৌছাইয়া দিয়া আসিবে । স্কুলে গিয়া প্রতিমা কোন দুরন্তপন, বেহায়াপনা শিখে নাই, বেশ শাস্ত, বাধ্য মেয়ে, তবে মাঝে মাঝে বড় একগুঁয়েমি করে । অরুণের জন্ত ঠাকুমার বড় ভাবন । ঘরে তাহার মন নাই, তাহার বহু বন্ধু, তাহার বনিয়াদী বংশের ছেলে বলিয়া মনে হয় না। তাহার শরীরও রোগা, টো-টো করিয়া ঘোরে, বাগানে এক বসিয়া থাকে, প্রতিমার মত আবদার করে না, মন খুলিয়া কথা বলে না, তাহার মনে কিসের দুঃখ ? তাহাকে তিনি ঠিক বুঝিয় উঠতে পারেন না । ঠাকুমা তাহার বিবাহ দিবেন, গরিব বনিয়াদী ঘরের মেয়ে আনিবেন । তাহীকে বিলাত যাইতে দিবেন না । ঠাকুমার চোখে জল আসিল । রেখাঙ্কিত কপোল অশ্রুতে ভিজিয়া গেল । মাদুর হইতে উঠিয়া তিনি হষ্টদেবতাকে প্রণাম করিলেন । ঠাকুমা চলিয়া গেলে অরুণ হাতমুখ ধুইয়া জামা বদলাইয়া খোলা জানালীর কাছে এক চেয়ার টানিয়া বসিল । স্তব্ধ জ্যোৎস্নারাত্রি স্বপ্নের কুহেলিকাজড়ান । স্কুলের বই পড়িতে ইচ্ছা করিল না । মন যেদিন বিষয় বা আনন্দপূর্ণ থাকে, সে ডায়েরি লেখা বা রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থ খুলিয়া পড়ে। মামীমার নিকট হইতে রবীন্দ্রনাথের শাস্তিনিকেতন পুস্তিকাগুলি লইয়া আসিয়াছে । উপদেশগুলি একটু সুর করিয়া মৃদুস্বরে পড়িতে বসিল, যেন মহান কবিতা । সব বুঝিতে পাৰিল না, গভীর কথাগুলির তরঙ্গ ঘাতে তাহরে অস্তরের কোন গোপনগুহার হুপ্ত জলে চঞ্চলত জাগিল । উপদেশের শেষে প্রার্থনা সে ভক্তির সহিত পাঠ করিল, এ যেন তাহার অব্যক্ত আত্মার ভাষাহীন বেদনার বাণী । ভাবগভ ডায়েরি লেখা হইল না । কয়েকটি অংশ ডায়েরিতে চুকিল । “জ্ঞান, প্রেম ও শক্তি এই তিন ধারা যেখানে একত্র সঙ্গত সেইখানেই আনন্দতীর্থ। আমাদের মধ্যে জ্ঞান, প্রেম ও কৰ্ম্মের যে পরিমাণে পূর্ণ মিলন সেই পরিমাণেই আমাদের পুর্ণ আনন্দ ।” তাহার নীচে অরুণ লিখিল—জ্ঞানের সাধন করিতে হইবে সত্য কি জানিবার জন্ত, শক্তির সাধনা করিতে হইবে মানবকল্যাণের জন্ত, কিন্তু প্রেমের সাধনা কিসের জন্ত ? সৌন্দর্ঘ্যের জন্য ? বেদনার জন্ত ? কবি বলিতেছেন, জ্ঞান প্রেম ও শক্তির সমন্বয় করিতে হইবে তবে আনন্দতীর্থে পৌছান যায়। এ বিষয় জয়স্তর সঙ্গে আলোচনা করিতে হইবে । শাস্তিনিকেতন হইতে ডায়েরি বন্ধ করিয়া অরুণ প্রতিমার ঘরের দিকে চলিল ।