পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

מצף সারদামন্দিরে ছুটয় আসে ; রাত্রির অন্ধকারে গ্রাম হইতে গ্রামস্তিরে শিক্ষা দিয়া ফেরে ; পিঙ্গল জ্যাকেট পরিয়া নেত্রীর আদেশের সঙ্গে তাল রাখিয় ডিল করে। এখানকার ছেলের গ্রামের পথ তৈরি করে, পুষ্করিণীর পঙ্কোদ্ধার করে, নৈশবিদ্যালয় চালায়, আনন্দ-উৎসব করে। এই নির্ভয় নিরলস, কৰ্ম্মনিপুণ, আনন্দসুন্দর ছাত্রছাত্রীদের দেথিয়া সত্যই তৃপ্ত হইতে হয়। বাংলার অতি অল্প বিদ্যালয়েই এইরূপ দৃষ্ঠ দেখা যায়। এখানে একটি পরিপূর্ণ সমাজের ছবি চোখে পড়িল । ছেলেমেয়ের সকলেই আশ্রমকে ভালবাসে, ইহার সকল কাজেই তাহারা চুটিয়া আসে, উৎসাহের সহিত যোগ দেয়, অধ্যবসায়ের সহিত কৰ্ম্ম সার্থক করে ও আপনার আনন্দদ্বারা তাহাকে সুন্দর করিয়া তোলে। এখানে তাহারা শুধু বিদ্যাই লাভ করিতেছে না, নবজীবনের দীক্ষালাভ করিতেছে ! এখানকার বিদ্যালয় দুইটির কৰ্ম্ম মাত্র বিদ্যাদানেই পর্য্যবসিত নহে ; বাহিরের বৃহত্তর সমাজ যেমন নানা চেষ্টার ভিতর দিয়া নানাভাবে আত্মপ্রকাশ করিয়া পূর্ণ, এখানকার এই ক্ষুদ্র বিদ্যালয়সমাজও তেমনই বিদ্যালাভের ব্যবস্থা, সমাজসেবা, আনন্দ-উৎসব ও সঙ্গীতের ভিতর দিয়া আপনার প্রাণশক্তির বিকাশ করিয়াছে। বিদ্যালয়ের এই সমাজ-রূপ সাধারণত: , আমাদের চোখে পড়ে না ; আমরা বিদ্যার একটি খণ্ড রূপ দেখি, ইহার উদার ও মহত্তর রূপ দেখিতে পাই না। এই জন্তই আমাদের বিদ্যালয়গুলি অধিকাংশ স্থলেই নিছক বিদ্যালাতেরই কেন্দ্র হইয়া দাড়ায়, সেগুলির কোন অধ্যাত্মজীবন বা সত্তা থাকে না । তাহার ফলে সেখানে বিদ্যালাভ করা যায় বটে কিন্তু জ্ঞানলাভ করা যায় ন, সেখানে চরিত্রগঠনের বা জীবনবিকাশের কোন সহায়তা পাওয়া যায় না । যেমন খাদ্যদ্রব্য জীর্ণ করিতে হইলে খাদ্য ছাড়াও অন্তান্ত বস্তুর প্রয়োজন হয়, তেমনই বিদ্যাকেও "বোমা, 'ఏ08S সার্থক করিতে হইলে বিদ্যালয়ে অন্তান্ত নানা আয়োজন করিতে হয়, বিদ্যালয়কে একটি ক্ষুদ্র অথচ সৰ্ব্বাঙ্গপূর্ণ সমাজে পরিণত করিতে হয় । এই আশ্রমে সেই বিদ্যালয়-সমাজকে প্রত্যক্ষ দেখিলাম । তাহার জন্তই ইহার শিক্ষা সার্থক হইতেছে। আমি যথন সেখানে গিয়াছিলাম তখন অবকাশ ; বিদ্যালয়ের সাধারণ কাজ বন্ধ ; কিন্তু ছেলেমেয়েদের কাজের অবকাশ ছিল না । সেখানে তখন শিক্ষাশিবির বসিয়াছিল। দ্বিপ্রহরে দেখি এক দল ছেলে ধূলাকাদা মাখিয়া ঘৰ্ম্মাক্ত দেহে গান করিতে করিতে ফিরিল ; জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম ছেলের এবার গ্রামের একটি জীর্ণ পয়ঃপ্রণালী সংস্কার করিবার ভার লইয়ছে। তাহদের দলে কয়েক জন যুবককেও দেখিলাম। শুনিলাম আশ্রমের মহৎ আদর্শ ধীরে ধীরে আর সকলের মধ্যেও বিস্তৃত হইয়াছে এবং তাহাকে কেন্দ্র করিয়া এক দল অনুরাগী-মণ্ডলী গড়িয়া উঠিতেছে। মনে হইল ইহাই ত ভাবী কালের বিদ্যালয়ের মুৰ্ত্ত প্রতীক । একদিন যখন ধৰ্ম্মবোধ প্রবল ছিল, তখন দেবায়তনগুলিকে কেন্দ্র করিয়াই পল্লীসমাজ গড়িয়া উঠিয়াছিল ; তাহার পর নানা কারণে আজ দেবায়তনগুলি তাঁহাদের আকর্ষণ হারাইয়াছে, ফলে পল্লীসমাজ কোন প্রাণকেন্দ্র খুজিয়া পাইতেছে না। অথচ পল্লীসমাজের সংস্কার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিতে হইলে সেই প্রাণকেন্দ্র সন্ধান করিয়া বাহির করিতে হইবে । সত্যকার বিদ্যালয়ের চেয়ে ভাল কেন্দ্র আর কি হইতে পারে ? দেশের বিদ্যালয়গুলি যেদিন প্রাণহীন প্রতিষ্ঠান না-হইয়া নবজীবনের তীর্থস্থল পূজামন্দির হইয়া উঠিবে, সেদিন দেশ আপনার প্রাণের সন্ধান পাইবে । এইখানে বাংলার এই অখ্যাতনামা নিভৃত পল্লীটিতে দুইটি বিদ্যায়তন দেখিলাম যাহা সত্যসত্যই নবজীবনের তীর্থস্থল পূজামন্দির হইয়া উঠিতেছে ।