পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র জুড়াল ? তাহার পর তাহার সঙ্গীতাদি অসাধারণ উৎসাহের দহিত চলিতে লাগিল।” “একদিন আমি দীর্ঘকাল পরে যখন দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের নিকটবর্তী হইতেছি, তখন দেখি এই সাধুপুরুষ র্তাহার সরল বালকোপম ভাবে তীর-ধনুক হাতে নিকটের গাছগুলার থেকে কতকগুলা কাক তাড়াইবার চেষ্টা করিতেছেন । তাহকে ঐ অবস্থায় দেখিয়া আমি চমকিত হইলাম। বলিলাম, ‘কি হচ্ছে ? তীরন্দাজ হয়েছেন ? তাহাতে তিনিও আমাকে এত দিন পরে আসিতে দেখিয়া সমান বিস্মিত হইলেন ও তীর-ধনুক ফেলিয়া দিয়া দৌড়িয়া আমাকে জড়াইয়া ধরিলেন। র্তাহার এত অনন্য হইয়াছিল, যে, তিনি ভাবাবেগের আতিশয্যে সংজ্ঞাহীন হইয় পড়েন । আমি তাহীকে ধীরে ধীরে তাহার কক্ষের মধ্যে লইয়া গেলাম, বিছানায় গুয়াইলাম, এবং যত ক্ষণ পর্যন্ত না র্তাহার জ্ঞান হইল তত ক্ষণ অপেক্ষা করিয়া রহিলাম । যখন তিনি আবার কথা কহিতে পারিলেন তখন তিনি র্তাহার সঙ্গে আলিপুরের “চিড়িয়াখানায়" বাইবার প্রস্তাব করিলেন। তাহার কয়েক জন শিষ্য র্তাহাকে সিংহ দেখাইতে লইয়া যাইবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন । তিনি সিংহগুলা দেখিতে পাইবার চিন্তীয় আনন্দ যে-ভাবে প্রকাশ করিয়াছিলেন, তাহার সরলতা অতি মধুর। তিনি বার-বার আমাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, ‘তুমি কি সিংহগুলিকে দেখতে ভালবাস না ? মা-দুর্গার বাহন সিংহগুলিকে ? আমি হাসিয়া বলিলাম, ‘আমি অনেক বার 'তাদেরকে দেখেছি।’ তাঁহাতে তিনি উত্তর দিলেন, তাদেরকে আর একবার দেখতে আমার সঙ্গে যাওয়া খুব মজ নয় কি ? আমি বলিলাম, ‘স্থা, নিশ্চয়ই খুব মজা ; কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাকে আর একটা কাজে যেতে হবে। আমি কিন্তু আপনার সঙ্গে মুকিয়াস ষ্ট্রীটের মোড় পর্য্যস্ত যাব ; তার পর নরেনকে তার ইস্কুল থেকে ডেকে পাঠাব, সে আপনাকে সঙ্গে ক’রে জ'তে নিয়ে যাবে।' পরে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত নরেন্দ্রনাথ তখন মেট্ৰপলিটান ইন্সটিটিউশুনে কাজ করিতেন। “শেষে সেইরূপ ব্যবস্থাই হইল, এবং এক জন যুবা শিষ্য একখানা ছেকড়া গাড়ী ডাকিয়া আনিলেন। আমার যত দূর মনে পড়িতেছে, তিনিও গাড়ীতে আমাদের সঙ্গে উঠিলেন । কিন্তু গাড়ীতে উঠিয়া রামকৃষ্ণ আমার বামদিকে বসিবার জিদ ধরিলেন। আমি প্রথম প্রথম র্তাহার উদেহু বুঝিতে পারি নাই। কিন্তু যখন গাড়ীটা চলিতে আরম্ভ করিল, তখন তিনি চাদর দিয়া বাঙালী নববধূদের মত মাথায় বোমূটা দিলেন। আমি উহাকে সেরূপ করিবার কারণ পরমহংস রামকৃষ্ণ 聯 bras জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, “দেখছ না, আমি এখন বেী হয়েছি ; আমার বরের সঙ্গে যাচ্ছি।' এই বলিয়া তিনি র্তfহার হাত দিয়া আমার কোমর জড়াইয়া ধরিলেন, এবং উপবিষ্ট অবস্থাতেই আনন্দে নৃত্যের ভঙ্গী করিতে লাগিলেন । এই সময় তাহার ভাবাবেশ হইল। তথন যাহা দেখিলাম, তাহা কখনও ভুলিব না। তাহার সমগ্র মুখমণ্ডল অসামান্ত আধ্যাত্মিক জ্যোতিতে দীপ্তিমান হইয়া উঠিল, এবং সম্পূর্ণ সংজ্ঞহার হইবার পুৰ্ব্বে তিনি আধ আধ স্বরে বলিতে লাগিলেন, ‘মা, ওমা, আমাকে সংজ্ঞাহীন কারো না মা । ওমা, আমি চিড়িয়াখানায় সিংহ দেখতে যাচ্ছি । ওমা, আমি গাড়ী থেকে পড়ে যেতে পারি। এই যাওয়াআসাটা শেষ হওয়া পৰ্য্যস্ত আমাকে বেশ ভাল থাকতে দাও । অতঃপর তিনি আমার বাহুতে ভর দিয়া বাহঞ্জনশুষ্ঠ হইলেন। কয়েক মিনিট পরে তিনি আবার তাহার বালকোপম সরল ভাবে কথা বলিতে লাগিলেন । মুকিয়াস স্ট্রীটের মোড় পোছিবার পর নরেনকে ডাকা হইল। তিনি তৎক্ষণাৎ আসিলেন এবং তাছার গুরুদেবকে জ,তে লইয়া গেলেন । এখানে বলা দরকার, যে, মেট্ৰপলিটান ইন্‌ষ্টিটিউশুন তখন মুকিয়াস স্ত্রীটে অবস্থিত ছিল।” 鬱 শাস্ত্রী-মহাশয়ের প্রৰন্ধের শেষ তিনটি বাক্য উদ্ধত করিতেছি । ] “My acquaintance with him, though short, was fruitful by strengthening many a spiritual thought in me. I owo him a debt of gralitude for the sincere affection he bore towards me. He was certainly one of the most remarkable personalities I have conc across in life.” - তাৎপর্য । “তঁহর সহিত আমার পরিচয় অল্প কলিস্থায়ী হইলেও, তাহ! এই ফল দান করিয়াছিল, যে, তাহ। আমার অনেক আধাত্মিক চিন্তাকে পুষ্ট করিয়ছিল । তিনি আমার প্রতি যে অকপট স্নেহ হৃদয়ে পোষণ করিতেন, তাহার জন্ত আমি কৃতজ্ঞতখণে ঋণী । আমি জীবনে যে-সকল ব্যক্তিত্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অসাধারণ মানুষদের সংস্পর্শে আসিয়াছি, তিনি নিঃসন্দেহ তাহাদের মধ্যে এক জন ।” এই প্রবন্ধটিতে শাস্ত্রী-মহাশয়ের ইংরেজী প্রবন্ধের কোন কোন অংশের তাৎপৰ্য্যাধুরপ অনুবাদ দেওয়া হইয়াছে। সুতরাং ইহাতে পরমহংসদেবের নিজস্ব বচনভঙ্গীয় আভাস পাওয়া যাইবে না , শাস্ত্রীমহাশয়েরও বাংলা ইহা নহে । চেকোশ্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগ শহরের প্রসিদ্ধ চিত্রকর ডোরাকের অঙ্কিত তৈলচিত্রের কোটোগ্রাফ হইতে পরমহংস রামকৃষ্ণের ছবি দিলাম। ফোটোগ্রাফটি ব্রহ্মচারী গণেন্দ্রনাথের সৌজন্তে প্রাপ্ত। ] -oxos - -- -- -*. - - - بسه