“মক্তব-মাদ্রাসার বাংলা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গত ১৩৩৯ সালের ভাদ্র মাসের প্রবাসী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ মক্তব দাসার বাংলা ভাষা বিষয়ে যে প্রবন্ধটি লিথিয়াছিলেন তাঁহারই লোচনা করিয়া জনৈক মুসলমান পত্ৰলেখক কবিকে একটি চিঠি ন। নিম্নলিখিত পত্রট তাহারই উত্তর স্বরূপে লিখিত । পত্রলেখকের সব কি ছিল তাহ জানিলে কবির উত্তরটি বুঝিবার পক্ষে অধিকতর বধা হইবে এই জন্থ উহার চিঠি হইতেই কয়েকটি পংক্তি তুলিয়া তেছি । “বাংলার মুসলমান যেদিন হতে বুঝতে পেরেছে বাংলা তার নিজের ধা সে-দিন হ’তে সে তার ভাষায় নিজেদের হামেশা বোলচালের .একটা শব্দ ক্রমশ: এ্যাবজয়ব করে নিচ্ছে ।" "মুসলমান ঘরে মা’কে ‘আৰ্ম্ম বলে । লিখতে বসে ঠিক ‘আন্ম বললে তার মা ডাকার সাধ মেটে না। প্রাণের ভাষাকে কলম যদি Fল ল ক’রে তর্জমা করতে শুরু করে তবে অচিরে সাহিত্য একটা ষ্টাচাড়া ভাষার অভিনয় মাত্র হবে ।” હૈં বিনয় নিবেদন, সৰ্ব্বপ্রথমে বলে রাখি আমার স্বভাবে এবং ব্যবহারে ন্দু মুসলমানের দ্বন্দ্ব নেই। দুই পক্ষেরই অত্যাচারে আমি মান লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ হই এবং সে রকম উপপ্রবকে সমস্ত [শেরই আগৌরব বলে মনে করে থাকি । ভাষা মাত্রেরই একটা ইতিহাসমূলক মজ্জাগত স্বভাব ছে, তাকে না মানলে চলে না। স্কটল্যাগুের ও ওয়েলসের লাকে সাধারণত আপন ঘরে ঘরে স্বজন পরিজনের মধ্যে ধ্বদাই যে সব শব্দ ব্যবহার করে তাকে তারা ইংরেজী ষিার মধ্যে চালাবার চেষ্টা মাত্র করে না । কেননা, তারা ই সহজ কথাটি মেনে নিয়েছে যে, যদি তারা নিজেদের ভ্যন্ত প্রাদেশিকত ইংরেজী ভাষায় ও সাহিত্যে চালাতে চায় হলে ভাষাকে বিকৃত ও সাহিত্যকে উচ্ছ,খল করে লবে। কখনো কখনো ববৃন্স (Burns) প্রভৃতি বিখ্যাত স্কচ লখক যখন কবিতা লিখেছেন তখন সেটাকে স্পষ্টত স্কচ যিারই নমুনারূপে স্বীকার করেছেন। অথচ স্কচ ও ওয়েলস্ ংরেজের সঙ্গে এক নেশনের অন্তর্গত । আয়রল্যাণ্ডে একদা আইরিশে ব্রিটিশে ‘ব্ল্যাক্ য়াও ট্যান্” নামক বীভৎস খুনোখুনি ব্যাপার চলেছিল, কিন্তু সেই হিংস্রতার উত্তেজন ইংরেজী ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে নি। ওয়েলসবাসী ও আইরিশরা অনেকে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্ত এখন তাদের প্রাচীন কেলটিক্ ভাষা অবলম্বন করতে আরম্ভ করেছেন । কিন্তু তাদের কবি ও লেখকের তাদের রচনায় যে ইংরেজী ব্যবহার করেন সে অবিমিশ্র ইংরেজীই। তাদের লিখিত ইংরেজীর মধ্যে পারিবারিক বা প্রাদেশিক ভাষার শব্দ আরোপ করবার চেষ্টা মাত্র তারা করেন নি । এ থেকে ঐ সকল জাতির সভ্য মনোভাবেরই প্রকৃষ্ট পরিচয় পাই । আজকের বাংলা ভাষা যদি বাঙালী মুসলমানদের ভাব স্বম্পষ্টরূপে ও সহজভাবে প্রকাশ করতে অক্ষম হয়, তবে তার বাংলা পরিত্যাগ করে গ্রহণ করতে পারেন। সেটা বাঙালী জাতির পক্ষে যতই দুঃখকর হোক না, বাংলা ভাষার মূল স্বরূপকে দুববিহারের দ্বারা নিপীড়িত করলে সেট আরো বেশি শোচনীয় হবে । ইংরেজীতে সহজেই বিস্তর ভারতীয় ভাষার শব্দ চলে গেছে । একটা দৃষ্টাস্ত fungle—সেই অজুহাতে বলা চলে না, তাই যদি হ’ল তবে কেন “অরণ্য” শব্দ চালাব না । ভাষা খামখেয়ালি। তার শব্যনিৰ্ব্বাচন নিয়ে কথা কাটাকাটি করা বৃথা । বাংলা ভাষায় সহজেই হাজার হাজার পালি আরবি শব চলে গেছে । তার মধ্যে আড়াআড়ি বা কৃত্রিম জেদের কোন লক্ষণ নেই। কিন্তু যে-সব পার্সি আরবি শব্দ সাধারণ্যে অপ্রচলিত, অথবা হয়ত কোনো এক শ্রেণীর মধ্যে বন্ধ, তাকে বাংলা ভাষার মধ্যে প্রক্ষেপ করাকে জবরদস্তি বলতেই হবে। হত্য অর্থে খুন ব্যবহার করলে বেখাপ হয় না ; বাংলার সৰ্ব্বজনের ভাষায় সেটা বেমালুম চলে গেছে। কিন্তু রক্ত অর্থে খুন চলে নি, তা নিয়ে তর্ক করা নিফল । উর্দ ভাষায় পারসি আরবি শব্দের সঙ্গে হিন্দী ও সংস্কৃড়
পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।