পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

పిచి ఆ ఎSBS সৈনিক হইয়া যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়াছিল। একটি সাংঘাতিক যুদ্ধের দৃশ্য দেখিয় তাহার মনের রাজ্যে একেবারে ওলটপালট ঘটিয়া গেল। ঐ যুদ্ধে তাহার প্রিয়তম বন্ধুর মৃত্যু ঘটে । মৃত বন্ধুটির ক্ষতবিক্ষত দেহের বীভৎস দৃশু তাহার মনকে এমন নাড়া দিল যে, সেই আঘাতে তাহার মন একেবারে বিকল হইয়৷ গেল। সে ভুলিয়া গেল চাষবাসের কথা, ক্যানাডার জীবনযাত্রার কথা । গাধার ছবিকে বলিতে লাগিল ঘোড়ার ছবি, শেয়ালকে বলিল কুকুর, লাঙ্গলের বর্ণনা দিতে পারিল না । তাহার সত্তার এক অংশ যেন অতীতের গর্ভে চিরতরে বিলীন হইয়। গিয়াছে ; তাহার মনের এক অংশ যেন ছিড়িয়া গিয়া কোথায় ছিটকাইয়া পড়িয়াছে ; তাহাকে আর খুজিয়া পাওয়া যাইতেছে না । এমনি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে । অতীতে সে যাহা করিয়াছে, দেখিয়াছে, শুনিয়াছে তাহার কোন কথাই তাহার মনে নাই । অতীতের মানুষ আর বৰ্ত্তমানের মানুষটি যেন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ; তাহাদের কোথাও যোগ নাই । রোগী কিছুতেই তাহার অতীত জীবনের কথা মনে করিতে পারে না । অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার সাহায্যে পূর্বের স্মৃতি আবার ফিরিয়া আসে, অতীত ও বৰ্ত্তমানের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়া যায়। ক্যানাডার সৈনিকটি তাহার পূর্বস্তৃতি ফিরিয়া পাইয়াছিল । অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতি আর চেতনার ক্ষেত্রে জাগে না । অপ্রীতিকর চিস্তাকে চেতনার ক্ষেত্র হইতে নিৰ্ব্বাসন করিবার প্রাণপণ চেষ্ট হইতে অনেক সময়ে এই স্মৃতিলোপ ঘটিয়৷ থাকে । রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের বীভৎস দৃশ্ব ও গৃহের চিন্তাকে চাপ দিবার চেষ্টা করিতে গিয়াই বহু সৈনিক এই মানসিক ব্যাধির দ্বারা আক্রাস্ত হইয়াছে । গৃহে বহু বিপদের মধ্যে অসহায় স্ত্রীপুত্রকে ফেলিয়া আসা সহজ ব্যাপার নহে। চক্ষের সম্মুখে মানুষের মাথা উড়িয়া যাইতেছে, নাড়িভুড়ি বাহির হইয় পড়িতেছে—সেও কি দুঃসহ দৃশু ! এই-সব অপ্রীতিকর স্মৃতিকে জোর করিয়া দাবাইয়া রাখার চেষ্টা অনেক সৈনিকের মনকে বিকল করিয়া দিয়াছে । মনঃসমীক্ষণে ( Psychoanalysiss extra on of Fifs (Dissociation) "আমরা যাহাকে চেতনা বলিয়া থাকি তাহা আমাদের সত্তার অংশমাত্র-অতিক্ষুদ্র অংশমাত্র । যে-কোন একটি সময়ে আমাদের সত্তার প্রায় সবটুকু অংশ দৃষ্টির আড়ালে থাকে। চেতনা সত্তার উপরিভাগে থেলিয় বেড়ায়-ইহা এবং সত্তা এক নহে । আমাদের পক্ষে যত কিছু চিস্ত করা, স্মরণ করা অথবা দর্শন করা সম্ভবপর তাহাদের অতি অল্প অংশ কোন একটি সময়ে আমাদের চেতনার ক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে পারে ” —Outline of Modern Knowledge. তাহা হইলে বুঝিতে পারা গেল, আমার মনের যে-অংশ চেতনার আলোকে আলোকিত হইয়া আছে তাহাই আমার সত্তার সবটুকু নয়। সেই অংশ আমার সমগ্র সত্তার অতি ক্ষুদ্র ভগ্ন অংশ । আমার অবশিষ্ট সত্তা সকল সময়েই দৃষ্টির বাহিরে লুকাইয়া থাকে। সমুদ্রের উপর দিয়া প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বরফের পাহাড় অনেক সময়ে ভাসিয়া যায়। পাহাড়ের খানিকট অংশ জলের উপরে জাগিয়া থাকে—বাকী অনেক— খানি থাকে সমুদ্রের ভিতরে দৃষ্টির বাহিরে। আমার মনের যে-অংশ চেতনার ক্ষেত্র অধিকার করিয়া থাকে তাহী সমুদ্রের উপরে ভাসমান বরফখণ্ডের মত--তাহ আমার সবটুকু নয় । আমার মনের প্রায় সবটুকুই গুপ্ত হইয়া আছে আমার চেতনার বহির্ভাগে। উহাকে আমি জানিতে পারিতেছি না, দেখিতে পারিতেছি না। উহা সমুদ্রের তলদেশে লুকায়িত বরফের পাহাড়ের মত । আমাদের মনের গোপন কক্ষে, অস্তরের অতল প্রদেশে যে-সকল ইচ্ছা বিদ্যমান আছে তাহারা সৰ্ব্বদাই চেষ্টা করিতেছে চেতনার রাজ্যে আসিবার জন্য । কিন্তু অস্তরের সকল ইচ্ছাকে চেতনার ক্ষেত্রে আমরা স্থান দিতে পারি না । কোন -চিন্তা ভাল এবং কোন চিন্ত মন্দ তাহার সম্বন্ধে আমাদের মনে একটা বোধ আছে । যে-ইচ্ছাকে আমি মন্দ ইচ্ছা বলিয়া মনে করি, যে-ইচ্ছাকে মনে স্থান দিলে আমি নিজের কাছে ছোট হইয়া যাই, সেই ইচ্ছাকে দূরে ঠেলিয় রাখিবার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি । সেই অশুভ চিন্তা যখন চেতনার ক্ষেত্রে আসিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে তখন তাহাকে তাড়াইবার জন্ত আমিও প্রাণপণ চেষ্টা করি । মনের মধ্যে ইচ্ছার সহিত ইচ্ছার, প্রবৃত্তির সহিত প্রবৃত্তির সংগ্রাম সৰ্ব্বদাই চলিতেছে । ‘পূজা তার সংগ্রাম অপার, সদা পরাজয়, তাহা না ডরাক তোমা। আমি সন্ন্যাসধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইয়াছি— স্ত্রীলোকের সঙ্গে একাসনে বসা আমার পক্ষে অধৰ্ম্ম । কিন্তু অস্তরে আমার মধ্যে যে আদিম পুরুষ রহিয়াছে সে নারীর অধরমুধ পান করিবার জন্য পিপাস্ক হইয়া আছে। তাহাকে কত বুঝাইতেছি, কত শাসাইতেছি—কিন্তু কোন ধৰ্ম্মকথাই সে শুনিতে চাহে না, কোন শাসনই সে মানিবে না ! সে চায় রমণীর প্রেম, সে চায় নারীদেহের সৌন্দর্য্য । আমার সন্ন্যাসধৰ্ম্মের বাধ ভাঙিয়| সেই আদিম পুরুষ আপনাকে প্রকাশ করিতে চায়। কিন্তু আমি তো তাহাকে স্বীকার করিতে পারি না ! আমার মধ্যে যে বৈরাগী-মানুষ একতারা বাঞ্জাইতেছে সে বলিতেছে, নারীর সৌন্দৰ্য্য ক্ষণস্থায়ী ; নারীর প্রেমে শান্তি নাই। দেহের জন্য দেহের যে বাসনা সেই উন্মত্ত বাসনা অগ্নিশিখার মত জালাময়ী ; তাহা আমাদিগকে দগ্ধ করে, স্নিগ্ধ করে না। লোকলজ্জা আমাকে বলিতেছে, ছিঃ ছিঃ, সামান্য ইন্দ্রিয়স্রোতে যদি ভাসিয়া যাও তবে সমাজে মুখ দেখাইবে কেমন করিয়া ? লোকের নিকট চিরকাল কলঙ্কী হইয়া রহিবে । তোমাকে দেখিয়া রাস্তার লোকে হাসিবে, আত্মীয়-স্বজন বিন্দ্রপ করিবে । এমনি করিয়া একদিকে আমার মধ্যে আদিম পুরুষের উদ্দাম কামনা এবং