পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏՀԵ এই বলিয়া ভুলাই— আমি উহাকে ভগ্নীর মত ভালবাসি, ভায়ের মত ভালবাসি, বন্ধুর মত ভালবাসি । আমি যদি এখন উহাকে ত্যাগ করি তবে সে মনে নিদারুণ ব্যথা পাইবে । অথচ সে-সব ক্ষেত্রে নিষ্করণ হওয়ার মত করুণ। আর নাই । যেখানে মিলনের কোন আশাই নাই, পরিণয় যেখানে অপরাধ, সেখানে প্রিয়জনের নিকট হইতে সরিয়া আসা 'নছ্বতা সন্দেহ নাই ; কিন্তু তাহাকে আমি বন্ধুর মত ভালবাসি -- এই ভাবে নিজেকে ভুলায় রাখিয়া প্রিয়জনকে অঁাকড়াইয় থাকা আরও নিষ্ঠুরতা। কারণ বিচ্ছেদের দিন সুখন একান্তই আসিবে তখন ভালবাসার জনকে মিলনের আনন্দ যত বেশ করিয়া দিয়াছি বিচ্ছেদের বেদনাও তত বেশী করিয়া দিব । তাহা ছাড়া নিৰ্ম্মল ভালবাসার মুখোস পরিয়া যাহার হৃদয়ে বাসা লইয়াছে তাহারা কখন যে গভীর রত্রে অতর্কিত মুহূত্তে অকস্মাং ছদ্মবেশ খুলিয়। ফেলিয়া নিজমূৰ্ত্তি ধারণ করিবে-কে বলিবে ? মনের ক্ষেত্রে ভালবাসা চিরদিন যে সীমাবদ্ধ থাকিবে তাহার নিশ্চয়তা কি ? মানুষের মধ্যে যে আদিম যৌনপ্রবৃত্তি রহিয়াছে স্থনিবার তাহার আকর্ষণ । যে-কোন মুহূৰ্ত্তে ভালবাসা মনের ক্ষেত্র ছাড়াইয় দেহের ক্ষেত্রে অবতরণ করিতে পারে । এই জন্যই আমাদের মনকে ভাল করিয়া জানিবার প্রয়োজন আছে। প্রহরীর উপর একান্ত ভাবে সবটুকু ছাড়িয়া দিয়া আমরা নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি না । কারণ, নিজেই যেখানে নিজের সঙ্গে শক্রতা করি সেখানে প্রহরী কি করিবে ? বিতাড়িত ইচ্ছাকে ছদ্মবেশ পরাইয় প্রহরীকে ভুলাইয়া যখন চেতনার ক্ষেত্রে আসিতে দিই তখন সেই ফকির পথ রুদ্ধ করিবে কে ? এই ফাকির পথেই ত পাপ আসিয়া মনের মধ্যে বাস গ্রহণ করে । সদর দরজায় প্রহরী পথ আগুলিয়া আছে—পাপ তাই আত্ম-প্রবঞ্চনার খিড়কির দরজা দিয়া চোরের মত অস্তরে আসিয়া আশ্রয় লয় ; তাহার পর এক অতর্কিত মুহূর্তে আমাদের দুর্বলতার সুবিধা লইয়া সে অস্তরের শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলি হরণ করে। মানুষের পর্তনের ইতিহাস এই আপনাকে ভুলাইবার ইতিহাস। প্রহরী যে-সকল ইচ্ছাকে নীতিবির্গহিত বলিয়া দূরে সরাইয় দেয় তাহারা নিঃশেষে শূন্ততার অন্ধকারে মিলাইয়া যায় না— মনের চোরাকুঠুরীতে গিয়া আশ্রয় লয়। রাতের বেলায় আমরা যখন ঘুমাইয় পড়ি প্রহরীর চক্ষুও তখন ঘুমে মুদিয়া আসে সে ঝিমাইতে থাকে। চেতনার ক্ষেত্রে আসিবার এই ত উপযুক্ত সময় প্রহরী ঝিমাইতেছে ! দিনের বেলায় যাহার অতন্দ্র চক্ষু এড়াইয়া চেতনার ক্ষেত্রে প্রবেশ করিবার কাহারও উপায় ছিল না, রাতের বেলায় সে ঘুমাইভেছে ? দিবসের বিতাড়িত ইচ্ছাগুলি চোরাকুঠুরী হইতে বাহির হইয় ".fএবং নিশ্চিন্তু মনে চেতনার ক্ষেত্রে আসিয়া উপস্থিত হয়। বিড়াল যখন ঘুমায় ইন্দুর তখন "প্ৰবাচনী ট ఏSBS মহোল্লাসে নৃত্য করে ; গৃহস্থ যখন নিদ্রামগ্ন তখনই ত তস্করের গৃহ প্রবেশের সময় ! দিবসে প্রহরীর তাড়নায় যে-সকল বাসনা অপূর্ণ থাকিয় যায় রাত্রে স্বপ্নে সেই সকল সাধ আমরা মিটাইয়া থাকি। তখন বাধা দিবার কেহ থাকে না । এই সব স্বপ্ন এমন সব মূৰ্ত্তি ধারণ করিয়া আমাদের চেতনার আলোকে ভাসিয়া উঠে যে ঘুম ভাঙিয়া গেলে লজ্জায় আমরা অভিভূত হইয়া পড়ি । অত্যন্ত সাধুপুরুষ বলিয়া যাহাদের খ্যাতি আছে তাহারাও স্বপ্নে অনেক ঘৃণ্য কাজ করিয়া থাকেন । কিন্তু মনোবিজ্ঞান র্যাহার আলোচনা করেন তাহারা ইহার মধ্যে বিস্ময়ের হেতু খুজিয় পাইবেন না । আমরা কেহই নিষ্কলঙ্ক দেবত! নহি । আমাদের সকলের প্রকৃতির মধ্যেই আদিম যুগের বর্বর মাল্লফট এখনও লুকাইয় আছে । সভ্যতার প্রলেপটুকু একটু সরাইয় ফেলিলেই সকলের ভিতর হইতেই বুনে মানুষের কদৰ্য্য মুক্তিটা বাহির হইয় পড়ে । আদিম যুগের বন্য প্রবৃত্তিগুলিকে চাপিয়া রাখিবার জন্য আমাদের চেষ্টার বিরাম নাই । কিন্তু চাপা দিলেই তাহারা যে নিঃশেষ হইয়া যাইবে এমন কোন কথা নাই । বস্তুতঃ, আমরা তাহাদিগকে চাপিয়া রাখিবার যন্ত চেষ্টাই করি না, তাহারা সময়ে সময়ে আত্মপ্রকাশ করে । তাহীদের এই আত্মপ্রকাশের সুযোগ মিলে স্বপ্নে । তথন প্রহরীর চোখে নিদ্রা ঘনাইয়। আসে । আমাদের ভিতরের বন্ত শূকরট। তখন দন্ত উচাইয়া নিৰ্ভয়ে খেলা করিতে থাকে, সপ নিঃশঙ্ক চিত্তে বিষ উদগীরণ করে, শকুনিটা অখাদ্য বস্তু কুণ্ঠ বর্জন করিয়া উদরে পূরিয়া দেয়, নিলজি ছাগট। অতল হইতে চেতনার ক্ষেত্রে জাগিয় উঠে । স্বপ্ন আমাদের সমগ্র রূপটিকে চেতনার আলোকে প্রকটিত করে । আমাদের চেতনার বাহিরে অস্তরের বিপুল অন্ধকারময় প্রদেশে যে-সকল ইচ্ছ। তরঙ্গিত হইতেছে প্রহরীর সতর্কতার জন্য জাগ্রত মুহূৰ্ত্তগুলি তাহাদিগকে প্রকাশ করিতে পারে না । স্বপ্নের রহস্যময় লোকে মনের অতল হইতে তাহারা জাগিয়া উঠে অনাবৃত মূৰ্ত্তি লইয়। আমরা স্বপ্নলোকের নিজের সেই অনাবৃত রূপ দেখিয়া লজ্জাম শিহরিয়া উঠি সত্য, কিন্তু সেই লজ্জার মধ্য দিয়া জানিতে পারি নিজের স্বরূপকে স্বপ্নের এই দিক দিয়া একটা বিপুর সার্থকতা আছে । স্বপ্নের কষ্টপাথরে আমাদের যথার্থ চেহারাটার যাচাই হইয়া যায়। স্বপ্নের দর্পণে আমাদের মনের সত্যিকারের রূপটি প্রতিফলিত হইয় উঠে। এথানে একটি কথা। স্বপ্নে নিজের কদৰ্য্য ইচ্ছা সব সময়েই যে অনাবৃত রূপ লইয়া আত্মপ্রকাশ করে এমন নহে। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আদিম ইচ্ছা ছদ্মবেশে অথবা বিকৃত মূৰ্ত্তি লইয়া স্বপ্নলোকে দেখা দিয়া থাকে। আমরা আমাদিগকে যত ভাল মনে করি আমরা ঠিক তত ভাল নই। আমাদের মনের কোণে অনেক কলুর্য,