পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ .مسيب অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত একটা বড় নদী, ওপারেও সুন্দর গাছপাল, নীল আকাশ-এপারেও অনেক ঝোপ বন...কিন্তু যেন মনে হ’ল সব জিনিষটা আমি ঝাড়লন্ঠনের ভেকোণ কাচ দিয়ে দেখচি...নানা রঙের গাছপাল, নদীর জলের ঢেউয়ে নানা রং...ওপারট লোকজনে ভর, মেয়েও আছে, পুরুষও আছে . গাছপালার মধ্যে দিয়ে একটা মন্দিরের সরু চুড়ে ঠেলে আকাশে উঠেছে ..আর ফুল যে কত রঙের আর কত চমৎকার তা মুখে বলতে পারিনে, গাছের সারা গুড়ি ভরে যেন রঙীন ও উজ্জল থোবা থোবা ফুল...হঠাৎ সেই নদীর এক পাশে জলের ওপর ভাসমান অবস্থায় জ্যাঠামশাইদের ঠাকুর-ঘরট। একটু একটু ফুটে উঠল তার চারিদিকে নদী, কড়ি কাঠের কাছে কাছে সে নদীর ধারের ডাল তার খোক খোকা ফুলম্বন্ধ হাওয়াম দুল্চে .ওদের সেই দেশটা যেন আমাদের ঠাকুর-ঘরের চারি পাশ ঘিরে ..মধ্যে, ওপরে, নীচে, ডাইনে, বায়ে আমার মন আনন্দে ভরে গেল --কায় আসতে চাইল :-কি জানি কোম্ ঠাকুরের ওপর ভক্তিতে ..আমার ঘোর কাটল একটা টেগমেচির শব্দে । আমায় সবাই মিলে ঠেঙ্গচে । সীতা আমার ডান হাত জোব করে ধরে দাড়িয়ে আছে...পুরুতষ্ঠাকুর ও পুলিন ংেগে আমার কি বলচে...চেয়ে দেখি আমি ভোগের লুচির থালার অত্যন্ত কাছে প দিয়ে দাড়িয়ে আছি ..আমার কোচ। লুটুচ্ছে উচু করে সাজানো ফুলকো লুচির রাশির ওপরে। তারপর যা ঘটল । পুরুতষ্ঠাকুর গালে চার-পাচটা চড় কসিক্ষে দিলেন ..মেজকাকা এসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধেতে বললেন । জ্যাঠাইম এসে নক্ষ-পুলিনদের ওপর আগুন হম্নে বলতে লাগলেন সবাই জানে আমি পাগল, আমার মাথার রোগ আছে, আমাম্ব তারা কেন ঠাকুরদালানে নিয়ে গিয়েছিল আরতির সময় । • • মেঞ্জকাকার মারের ভয়ে অন্ধকার রাত্রে জ্যাঠামশাহ্মদের খিড়কীপুকুরের মাদার-তলায় এক এসে দাড়ালাম। সীতা গোলমালে টের পাঞ্জনি আমি কোথায় গিয়েছি । আমার গ কঁপিছিল ভয়ে...এ আমার কি হ’ল ? অামার এমন হুম কেন ? এ কি খুব শক্ত ব্যারাম ? ঠাকুরের ভোগ আমি ত ইচ্ছে করে ছুইনি ? তবে ওরা বুঝলে না কেন? এখন আমি ৰুি করি ? - - দৃষ্টি প্রদীপ ১৬৭৯ আমি হিন্দু দেবদেবী জানতাম না, সে-শিক্ষা আজন্ম আমাদের কেউ দেয়নি। কিন্তু মিশনরী মেমেদের কাছে জ্ঞান হওয়া পৰ্য্যন্ত যা শিখে এসেছি, সেই শিক্ষা অনুসারে অন্ধকারে মাদারগাছের গুড়ির কাছে মাটির ওপর হাটু গেড়ে হাতজোড় করে মনে মনে বললাম—হে প্ৰভু ষিগু, হে সমাপ্রভু, তুমি জান আমি নির্দোষ—আমি ইচ্ছে করে করিনি কিছু, তুমি আমার এই রোগ সারিয়ে দাও, আমার যেন এ-রকম আর কখনও না হয় । তোমার জন্ম হোক, তোমার রাজত্ব আস্থক, আমেম্। ૨ সকালে স্নান ক’রে এসে দেখি সীতা আমাদের ঘরের বারান্দাতে এক কোণে খুটি হেলান দিয়ে বসে পড়ছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম—দেখি কি পড়ছিস সীতা ?.. সীত৷ এমন একমনে বই পড়ছে যে বই থেকে চোখ না তুলেই বললে —ও-পাড়ার বৌদিদির কাছ থেকে এনেছি—প্রফুল্লবালা— গোড়াটা একটু পড়ে দাখো কেমন চমৎকার বই দাদা— আমি বইখানা হাতে নিম্নে দেখলাম, নামটা প্রফুল্লবালা’ বটে। আমি বই পড়তে ভালবাসিনে, বইখানা ওর হাতে ফেরৎ দিয়ে বললাম--তুই এত বাজে বইও পড়তে পারিস ! . সীতা বললে-বাজে বই নয় দাদা, পড়ে দেখো এখন । জমিদারের ছেলে সতীশের সঙ্গে এক গরিব ভট্টচাৰ্য্যি ধামুনের মেয়ে প্রফুল্লবালার দেখা হয়েছে । ওদের বোধ হয় বিয়ে হবে। সীতা দেখতে ভাল বটে, কিন্তু যেমন সাধারণতঃ ভাইয়ের। বোনেদের চেয়ে দেখতে ভাল হয়, আমাদের বেলাতেও তাই হয়েছে। আমাদের মধ্যে দাদা সকলের চেয়ে গুন্দর— যেমন রং, তেমনই চোখমুখ, তেমনই চুল—তারপর সীতা, তারপর আমি। দাদা যে সুন্দর, এ-কথা শক্রতেও স্বীকার করে—সে আগে থেকে ভাল চোখ, ভাল মুখ, ভাল রং দখল করে বসেছে—আমার ও সীতার জন্তে বিশেষ কিছু রাখেনি। তা হলেও সীতা দেখতে ভাল । তা ছাড়া সীতা জাবার সৌধীন-সৰ্ব্বদা ঘষে মেজে, খোঁপাটি বেঁধে, টিপটি পরে বেড়ান তার স্বভাব। কথা বলতে বলতে দশ বার খোপায় হাত দিয়ে দেখচে খোপা ঠিক আছে কি-না। এ নিয়ে এ-বাড়িতে তাকে কম কথা সহ করতে হয়নি। কিন্তু সীতা বিশেষ কিছু গায়ে