পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ শালগ্রাম বন্ধে জানছিলেন জ্যাঠামশায় নিজে—তিনি বাড়ি ঢুকবার সময়ে জ্যাঠাইমা জলের ঝারা দিতে দিতে ঠাকুর অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেলেন—মেয়েরা শাখ বাজাতে লাগলেন, উলু দিলেন । আমি, সীতা ও দাদা আমাদের ঘরের বারান্দ থেকে দেখছিলাম—অত্যন্ত কৌতুহল হলেও কাছে যেতে সাহস হ’ল না। মাকে মেমে পড়াতে সে-কথা ওঁদের কানে যাওয়া থেকে মামুষের ধারা থেকে আমরা নেমে গিয়েচি ওঁদের চোখে- আমরা খ্ৰীষ্টান, আমরা নাস্তিক, পাহাড়ী জানোয়ার—ঘরেদোরে ঢুকবার যোগ্য নই। বৈশাখ মাসের প্রতিদিন কত কি খাবার তৈরি হতে লাগল ঠাকুরের ভোগের জন্যে – ওঁরা পাড়ার ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্ৰণ ক’রে প্রায়ই খাওয়াতেন, রাত্রে শীতলের লুচি ও ফলমিষ্টান্ন পাড়ার ছেলেমেয়েদের ডেকে দিতে দেখেচি তবুও সীতার হাতে একখানা চন্দ্রপুলি ভেঙে আধখানিও কোনো দিন দেননি । জ্যাঠাইমা এ সংসারের কত্রী, কারণ জ্যাঠামশাই রোজগার করেন বেশী। ফরসা মোটাসোটা, একগা গহনা, অহঙ্কারে পরিপূর্ণ—এই হলেন জ্যাঠাইমা । এ-বাড়িতে নববধুরূপে তিনি আসবার পর থেকেই সংসারের অবস্থা ফিরে যায়, তার আগে এদের অবস্থা খুব ভাল ছিল না—তাই তিনি নিজেকে ভাবেন ভাগ্যবতী । এ-বাড়িতে তার ওপর কথা বলবার ক্ষমতা নেই কারও। তার বিনা হকুমে কোনো কাজ হয় না। এই জ্যৈষ্ঠ মাসে এত আম বাড়িতে, বেীদের নিয়ে থাবার ক্ষমতা নেই, যখন বলবেন খাওগে, তখন খেতে পাবে। জ্যাঠামশায়ের বড় ও মেজ ছেলে, শীতলদা ও সলিলদার বিম্নে হয়েচে, যদিও তাদের বয়েস খুব বেশী নয় এবং তাদের বেীমেদের বক্ষেস আরও কম-দুই ছেলের এই দুই বেী ও বাড়িতে গলগ্রহ হয়ে আছে এক ভাগ্নেবে তার ছেলেমেয়ে নিম্নে, আর আমার মা আমাদের নিয়ে—এ ছাড়া ভুবনের মা আছে, কাকীমারা আছেন—এর মধ্যে এক ছোটকাকীমা বাদে আর সব জ্যোঠাইমার সেবাদাসী । ছোটকাকীমা বাদে এইজন্যে যে তিনি বড়মানুষের মেয়ে—তার ওপর জ্যাঠাইমার প্রভুত্ব বেশ খাটে না । প্রতিদিন খাওয়ার সময় কি নিল্পজ কাণ্ডটাই হয় । রোজ রোজ দেখে সয়ে গিয়েচে যদিও, তবুও এখনও চোখে কেমন ঠেকে। রান্নাঘরে একসঙ্গে জ্ঞাগ্নে, জামাই, ছেলেরা খেতে , দৃষ্টি-প্রদীপ לרע বসে । ছেলেদের পাতে জামাইয়ের পাতে বড় বড় জামবাটিতে ঘন ফুধ, ভাগ্নেদের পাতে হাত ক’রে ফুধ । মেয়েদের থাবার সময় সীতা ভায়েবে এরা সবাই কলায়ের ভাল মেখে ভাত খেয়ে উঠে গেল—নিজেদের দল, স্থই বেী, মেয়ে নলিনীদি, নিজের জন্তে বাটতে বাটতে জুধ আম বাতাসা । নলিনীদি আবার মধু দিয়ে আমদুধ খেতে ভালবাসে-মধুর অভাব নেই, জ্যাঠামশাই প্রতি বৎসর আবাদ থেকে ছোট জালার একজাল মধু নিয়ে আসেন—নলিনীদি দুধ দিয়ে ভাত মেখেই বলবে মা আমায় একটু মধু দিতে বলে না সন্ধুর মাকে ? কালেভত্রে হয়ত জ্যাঠাইমার দয়া হ’ল--তিনি সীতার পাতে দুটো আম দিতে বললেন কি এক হাত ফুধ দিতে বললেন—নম্ন তে ওরা ওই কলায়ের ডাল মেখে খেয়েই উঠে গেল । সীতা সে-রকম মেয়ে নয় যে মুখফুটে কোন দিন কিছু বলবে, কিন্তু সেও তো ছেলেমানুষ, তারও তো খাবার ইচ্ছে হয় ? আমি এই কথা বলি, যদি খাবার জিনিষের বেলা কাউকে দেবে, কাউকে বঞ্চিত করবে, তবে একসঙ্গে সকলকে খেতে না বসালেই তো সবচেয়ে ভাল ? এক দিন কেবল সীতা বলেছিল আমার কাছে,—দাদা, জ্যাঠাইমারা কি রকম লোক বল দিকি ? মা তাল তাল বাটুন বাটবে, বাসন মাজবে, রাজ্যির বার্সি কাপড় কাচবে, কিন্তু এত ডাবের ছড়াছড়ি এ-বাড়িতে, গাছেরই তো ডাব, একাদশীর পরদিন মাকে কোনো দিন বলেও না যে একটা ভাব নিয়ে যাও । 8 আমি মুখে মুখে বানিয়ে কথা বলতে ভালবাসি। আপন মনে কখনও বাড়ির কৰ্ত্তার মত কথা বলি, কখনও চাকরের মত কথ। বলি । সীতাকে কত শুনিয়েছি, এক দিন মাকেও শুনিয়েছিলাম। এক দিন ও-পাড়ার মুখুজে-বাড়িতে বীরুর ম, কাকীম, দিদি—এরা সব ধরে পড়ল আমাকে বানিয়ে বানিম্নে কিছু বলতে হবে । - ওদের রাম-বাড়ির উঠোনে, মেয়ের সব স্বারাথরের দাওয়ায় বসে । আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে খানিকটা ভাবলাম কি বলব ? সেখানে একটা বঁাশের ঘেরা পাচিলের গামে ঠেলান ছিল । সেইটের দিকে চেয়ে আমার মাথায় বুদ্ধি