পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ গ্রন্থে লিখিত আছে যে, স্থবির নাগসেন রাজা মিলিন্দকে ( Menandar) বুঝাইতেছেন যে তিনি নিজে যদি– “স-উপাদানে ভবিস্সামি—পটিসনাহিস্সামি, সচে অনুপাদানে ভবিসসামি ন পটিসঙ্গহিস্সানীতি”— “আসক্তিযুক্ত হন, তবেই তাহার পুনর্জন্ম হইবে, অনাসক্তিযুক্ত হইলে তাহা হইবে না।” উভয় শাস্ত্ৰই ( হিন্দু ও বৌদ্ধ শাস্ত্ৰ ) স্পষ্ট শিক্ষা দিতেছেন যে, অনাসক্ত হইয়া জগতের হিতের জন্য অদীনবগামী নিষ্ঠুরাচরণ প্রভৃতি পরিত্যাগপূৰ্ব্বক দয়া, মৈত্রী, করুণ প্রভৃতি সদৃবৃত্তিদ্বারা প্রণোদিত হইম কল্যাণ কৰ্ম্ম করিতে পারিলে, তাহার ফল উত্তম এবং তজ্জন্য তদাচরণকারীর পুনর্জন্ম লাভ করিতে হইলেও, সেই কারণে তাহার উত্তম যোনিতে জন্মান্তর পরিগ্রহ হইতে পারে । প্রব্রজিতের পক্ষেও বন্ধনের হেতুভূত কৰ্ম্মসমূহের মধ্যে দুইটি কোটি বা অস্ত ( extremes ) পরিত্যাগ করিবার জন্য বুদ্ধদেব স্বয়ং ধৰ্ম্মচক্রপ্রবর্তনসময়ে তদীয় পূৰ্ব্ব ধৰ্ম্মবৈরী কৌণ্ডিণ্য প্রভৃতি ভিক্ষুপঞ্চকের নিকট যে ধৰ্ম্মদেশনা ( Sermon ) ঋষিপত্তনে বা মৃগদাবে প্রচার করিয়াছিলেন, তাহ হইতে জান৷ যায় যে, এই প্রথম অস্তুটি ‘কামস্থখল্লিকামুযোগো’ অর্থাৎ গ্রাম্য ও পামরজনোচিত কামমুখে ও বিষয়ভোগে আসক্তি এবং দ্বিতীয়টি “অত্তকিলমথাঙ্গুযোগো” অর্থাৎ কঠিন ও কঠোর তপস্যাদিদ্বারা শরীরের ক্লেশোৎপাদন । এই দুইটি অস্তপদ্ধতির কোনটিই ব্রহ্মচৰ্য্য, বিরাগ, সংবর ( ধৰ্ম্মক্রিয়াসম্পাদন ), নিৰ্ব্বেদ, নিরোধ, বিমুক্তি, অভিজ্ঞ, বোধি বা নিৰ্ব্বাণ সম্পাদন করিতে সমর্থ নয়। বরং এই দুই পদ্ধতিই কেবল দুঃখকর, অনার্য্য ও অনর্থযুক্ত পদ্ধতি। তিনি তাহাদিগকে আরও বলিয়াছিলেন'অমং খোসা ভিকখবে মক্সিম পটপদ তথাগতেন অভিসম্বুদ্ধ ক খুকরণী এানকরণী উপসমায় অভিঞ এগয় সম্বোধায় নববানায় সংবস্তুতি ” “তথাগত যে মধ্যম পথের আবিষ্কার করিয়াছেন তাহা চক্ষুকর ও জ্ঞানকর মার্গ—ইহা দ্বারা অগ্রসর হইলে উপশম, অভিজ্ঞ, সংবোধি ও নিৰ্ব্বাণলাভ মুকর।” ইহাই ‘অটুঠজিকোমগ গো-অষ্টোঙ্গিক মার্গ। যথা সম্মাদিটুঠ’ (সম্যক দৃষ্টি-বিষয়ের ঠিক দর্শন ), ‘সন্মা-সংকল্পো" সম্যক সংকল্প—সংকল্প স্থির রাখা ), ‘সম্মা বাচা’ ( সম্যক iাক্য-প্রিন্থ সত্য কথন ), সম্ম কৰ্ম্মন্তে (সম্যক কৰ্ম্মাস্ত— সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার), সন্মা আজীবে’ (সম্যক আজীব—সাধু বৌদ্ধধৰ্ম্মে কৰ্ম্ম ও জন্মান্তরবাদ He উপায়ে জীবিকোপার্জন ), ‘সম্মা বামামো’ ( সম্যক ব্যাঙ্গাম— সাধু উদ্যোগ বা চেষ্ট ), ‘সম্মা সতি’ ( সম্যকু স্মৃতি—ম্মরণ ও ধারণশক্তি ) ও ‘সম্মা সমাধি’ ( পরমতত্ত্বাবগতির জন্য শ্রবণ-মনন-নির্দিধ্যাসন প্রভৃতির সম্পাদন )। ভগবান বুদ্ধের মতে ভিক্ষু ভিক্ষুণীরা ও উপাসক উপাসিকারা যদি এই মধ্যম পন্থা অবলম্বন করিম কৰ্ম্ম করিতে থাকেন, তাহা হইলেই তাহারা স্বাদশ-নিদানাত্মক কাৰ্য্য-কারণ-শৃঙ্খলার বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া জন্ম, জরা, ব্যাধি, মরণ ও পুনর্জন্মের দুঃখ অতিক্রম করিতে সমর্থ হইয়া তথাগতের ন্যায় সম্বোধিজ্ঞানার্জনপূর্বক নিৰ্ব্বাণরূপ পুরুষাৰ্থ লাভ করিয়া কৃতাৰ্থ হইতে পারবেন। বৌদ্ধধর্মের মূল উপদেশ এই ধৰ্ম্মচক্রপ্রবর্তনস্থত্রেই নিহিত আছে। ভগবান বুদ্ধদেবের প্রচারিত ধৰ্ম্ম যে অনেকাংশেই নৈতিক কৰ্ম্মের ধৰ্ম্ম তাহা ইহা হইতে বেশ বুঝা যায় । সাধু ও শুদ্ধ জীবন যাপন করিয়া সৰ্ব্বসত্ত্বের দুঃখ হানির সহায়তা করিতে পারিলেই নিৰ্ব্বাণ-পথ পরিষ্কার হইয়া উঠে। মুক্তির জন্য বুদ্ধের নিকট বৈদাস্তিকের তত্তংভাসকনিত্যশুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-সত্য-স্বভাব প্রত্যকৃচৈতন্য পরমাত্মার জ্ঞান, সাংখ্যের প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেক-জ্ঞান, অথবা পাতঞ্জলের প্রকৃতির অধিষ্ঠাতা ঈশ্বরের জ্ঞানের প্রয়োজন অঙ্গভূত হয় না। ‘চতুরার্যসত্য ঠিক নম্ন কি ? “যাহা কিছু জন্মশীল তাহাই নশ্বর’—ইহা সত্য নয় কি ? এইরূপ ধ্যানই বৌদ্ধের প্রধান ধৰ্ম্মাচরণকৰ্ম্ম । আষ্টাঙ্গিক মার্গে চলিলে চতুরার্যসত্য উপলব্ধি করা যায় এবং সৰ্ব্বশেষে গন্তব্য স্থান নিৰ্ব্বাণে উপস্থিত হওয়া যায়— ইহাই বুদ্ধের বিশ্বাস ও জ্ঞান এবং তিনি সংবোধিলাভের পর ইহাই জীবনের শেষ পয়তাল্লিশ বৎসর প্রচার করিয়া জগতের উদ্ধারকার্ষ্যে জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন । উপরি উল্লিখিত ‘কার্য্য-কারণ-শৃঙ্খলা কথার অর্থ কি ? এবং চতুরার্য্যসত্যই বা কি, তাহার একটু উল্লেখ প্রয়োজনীয়। যে রজনীতে গৌতম বুদ্ধগয়ায় বোধিক্রমের নীচে ( অশ্বখমূলে ) সম্যক্ জ্ঞানলাভসহকারে “সম্বুদ্ধ” হইয়াছিলেন, তাহার প্রথম যামে তিনি প্রাক্তন জন্মসমূহের সর্ববৃত্তাস্ত স্মরণ করিতে পারিয়াছিলেন, দ্বিতীয় ধামে দিব্যচক্ষু লাভ করিয়া বর্তমান কালের সঞ্চভূতের অবস্থা পরিজ্ঞাত হইয়াছিলেন, তৃতীয় যামে সৰ্ব্ববিষয়ের কার্ষ্য-কারণ-শৃঙ্খলার জ্ঞান লাভ