পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮জ্যৈষ্ঠ একটি মেয়ে ఫిలి ঐ একটি লোককেই কেন্দ্র করে। ঐ লোকটি আজ হগেচে । ওর আকাশ, স্বদরের স্বর অকারণ খেলার ডাক। আমার মনে পড়েচে, কালো চুলের রাশি নিয়ে এই চঞ্চলাই একদিন মাথা দুলোতে আর তালে তালে দুলে উঠত পুথিবী, সমগ্র বিশ্বলোক। অগোছালে চুলের রাশি বাধা পড়েচে কৃষ্ণসপিণীর বেণীতে, যার দোলনে ঢেউ ওঠে ঐ একটি লোকেরই বুকে । বিশ্বলোকের কথা কি আজ ও ভুলল ? একটা কিছু ঘটেচে । গৌরী অত্যন্ত প্রবল হয়ে আপত্তি জানায় যদি ওর জা বলে, “তোর কিছু হয়েচে বাপু গৌরী।” আপত্তির ভঙ্গীট। সম্পূর্ণ নতুন, ওর ছেলেবেলাকার মোটেই নয় । এ পর্য্যস্ত ওর তত্বদেহটি ঘিরে রয়েছিল পুপসৌরভের অপূৰ্ব্ব রহস্য ; বঁধনের সে অঁাট যাচ্চে খুলে, ফল সম্ভাবনায় হয়ে আসচে নত, যেন মধ্যাহ্নের ধানের ক্ষেতে কালে মেঘের লঘু ছায় । দিন এল। গৌরীর সেই ডাগর ডাগর চোখ দুটি ভরে উঠল জলে ।...আমি এখানে বসেই শুনতে পাচ্চি নক্ষত্রলোকের চেয়ে বহুদূরে ঐ নীহারিকাপুঞ্জে ঢাকা কোনো এক অচেনা অজানা দেবতার কাছে ও প্রার্থনা জানাচ্চে, “আর যে আমি সইতে পারুচি না ঠাকুর ।---আমায় মুক্তি দাও, মুক্তি *る・・・” কি করুণ আৰ্ত্তনাদ ! গৌরী নিশ্চয় মরতে বসেচে। দেখছিলাম ও মধছিল তিলে তিলে, ক্ষয়ে ক্ষয়ে ; এবার মরবে সত্যি করেই । একটি ঘরে গৌরী আছে শুয়ে । ওর পাশেই বিছানায় ছোট্ট একটি ছেলে,-অতি ক্ষুদ্র মানবক। আমি ঘরের অস্পষ্ট আলোর সুযোগ নিয়ে ওর কানে কানে মৃগুশ্বরে প্রশ্ন করলুম, “গৌরী, তোমার হ’ল কি ?” ও হাসল। আমার চোখে ওর এই স্নিগ্ধ হাসিটি ঠেকলো স্নান। বলল, “আমার ছেলে হয়েচে — ” ব'লে ঐ ছোট্ট শিশুটিকে কাছে টেনে নেবার চেষ্টায় হাত বাড়াল । হাতের রেখামু দেখলুম সৰ্ব্বাঙ্গের স্বকঠিন ব্যথা রূপ নিয়েচে একটা নিবিড় স্নেহে । “দেথেচ, কেমন পিট পিট করে চাইচে । ওর নাকটি হয়েচে ঠিক ওর বীপেরই মত ”—গৌরীর গণ্ডে রক্তোঞ্ছাস খেলল । - 设@一也 কত আশাই ছিল, ওই চম্পকবর্ণে দেখা দেবে শোণিতরাগের লীলায় প্রাণের ব্যঞ্জনা । আজ দেখলুম, শুধু উচ্ছ্বাসই আছে, ব্যঞ্জন নেই, রূপ উপচে ওঠে না, শীতের নদীর শীর্ণতার মত শাস্তু, ধীর, শীতল । ওর চঞ্চল চোখ আজ হয়েচে স্থির, সেখানে নেমেচে কালো গভীরত, একটা কাজল মায়া । মরণ আর কাকে বলব ? আমি স্পষ্ট দেখচি গৌরীর চিতার অগ্নিশিখা উদ্ধমুখী হমেচে । ছেলে কোলে ক’রে গৌরী বাপের বাড়ি ফিরেচে। পিসি-মাস-মায়ের মুখে আর হাসি ধরে না । ভাইবোনের আবদার আজ ও হাসিমুখে সহ করে, বাপকে জল দেবার সময় ভাল করে দেখে জলে কিছু পড়েচে কি-না। গৌরীর পিসি শোনাচ্চেন গৌরীর মাসীকে, “তখুনি আমি বলেছিলুম, ছেলেপিলের মা হ'লে এতটা ঘেন্নাপিত্তি আর থাকবে না । দেখলে ত...” আর ওর মা মনে মনে নীরব প্রণতি জানাচ্চেন, “ম মঙ্গলচণ্ডী, মুখ রেখেচ।” নক্ষত্ৰলোক থেকে আমি থে-গৌরীকে দেখেছিলুম সেগেীরা আজ মরে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে মুছে গেছে। এ গৌরী আর একটি মেয়ে । কি আশ্চৰ্য্য, পিসি মাসী মায়ের দল বুঝতে পারচে না, ও তাদের সেই ছোট গৌরীটি নয়, সেই দেহে অন্য কেউ,— সম্পূর্ণ আলাদা আর একটি মেয়ে ! মানুষের জীবনের কি অদ্ভুত ট্রাজেডি,—এই মরণের অপরূপ রূপ ! শোকাশ্ৰ দিয়ে মাচুর্য এ মরণের তর্পণ করে না । গৌরীকে বারম্বার আমার মনে পড়চে, বারম্বারই তুলনা করচি, প্রাণের সঙ্গে প্রাণীর, চঞ্চলের সঙ্গে শান্তর, অধৈর্ষ্যের সঙ্গে ধৈৰ্য্যের। মনে হচ্চে, ভোরের শিশিরের মরণোৎসব চলচে এমনি অগোচরে, অস্তরালে, সহজ অনাড়ম্বরে । আর আমার চোখ বেয়ে পড়চে জল, বুকভর। দীর্ঘশ্বাস মুক্তি খুজচে মহাকাশে । সমগ্র গৌরলোককে আহবান করে বলতে চাইচে,—সব নবশ্বষ্টিকে তোমরা বরণ করে শঙ্খধ্বনি ক’রে, উলু দিয়ে, লাজ ছড়িয়ে । কিন্তু স্বষ্টির মধ্যে এই যে মহতী বিনষ্টি, এই যে অপরূপ