পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ উছার রাস্তাঘাট এত সুন্দর তাহ আমাদের ধারণাই ছিল না । অবশু আলো ও আঁধার প্রায় সৰ্ব্বত্রই পাশাপাশি বিরাজ করিতে দেখা যায় এবং এখানেও যে সে নিম্নমের ব্যতিক্রম ঘটে নাই তাহার দৃষ্টান্ত অতঃপর যথাস্থানে উল্লিখিত হইবে । যাহা হউক, রেলপথ হইতে এতদুরে অবস্থিত এরূপ বদ্ধিষ্ণু শহরের প্রথম দৰ্শন যে একেবারে চমকপ্রদ তাহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। যেন হঠাৎ এক স্বপ্নরাজ্যে আসিয়া পড়িলাম । আমিরাকদলের নিকট আমাদের মোটর কোম্পানীর আপিসে অপর সহযাত্রীদের গাড়ীগুলি আসিয়া ন মিলিত হওয়া পৰ্য্যস্ত আমাদের তথায় অৰ্দ্ধঘণ্ট। কাল অপেক্ষা করিতে হইল । তৎপরে আরও দুই মাইল দূরবত্তী শহরের প্রাস্তসীমাস্থিত ডাল হ্রদ সংযুক্ত প্রণালীর গাগ্রিবল নামক অংশের দিকে আমাদের গাড়ীগুলি চলিতে লাগিল । কারণ সেখানেই জলবক্ষে আমাদের বfর দিন আবাসের ব্যবস্থা করা হইয়াছিল । নিমেষে নেডু হোটেল, পোলো ময়দান, ডাল গেট প্রভৃতি অতিক্রম করিয়া নিদিষ্ট স্থানে আসিয়া মোটরের গতিরোধ হইল এবং স্থলযান হষ্টতে জলধানে অধিষ্ঠিত হইবার আয়োজনে সকলে ব্যাপৃত হইয়া পড়িলাম । তখনও বর্ষণের বিরাম নাই, তবে প্রকোপ কমিয়াছে। উপরোক্ত প্রণালীর গাগ্নিবল নামক অংশটি ডাল-ত্বদের প্রায় মোহনায় অবস্থিত । এপানে নানা শ্রেণীর বহু বঞ্জর তীরে সংলগ্ন আছে, তন্মধ্যে আমাদের চার জনের উপযুক্ত একটি বজরা পছন্দ করিয়া মালপত্র তাহাতে স্থানান্তরিত করিলাম। সিক্ত বসনে তপন আমর। প্রায়ু কম্পমান ; যে পৰ্য্যটকের দলে চার-পাচ জনের কম ছিলেন তাহারা সম্পূর্ণ একটি বজরার অধিকারী হইতে পারিলেন না, অপর যাত্রীর সহিত কোন বজরার আংশিক অধিকারী হিসাবে বাসস্থান পাইলেন মাত্র । বজরাগুলি নানা শ্রেণীর আছে । তন্মধ্যে আমাদের বজরাটি অত্যুচ্চ শ্রেণীর না হইলেও মূল্যবান আসবাবপত্রে মুসজ্জিত পাচটি কামরা ও দুটি স্নানকক্ষবিশিষ্ট্র ছিল। প্রত্যেক বজরী-সংশ্লিষ্ট আরও দুটি করিয়া তরণী পাওয়া যায়, উহার একটি পাকশাল ( kitchen boat ) ও অপরটি শিকাড়া নামে অভিহিত হইয়া থাকে। শিকড় বলিতে মধ্যস্থলে ছত্রীবিশিষ্ট জলীবোট বা ডিঙ্গী বুঝায় । উহাড়ে যাত্রীরা স্বেচ্ছামত জলবিহার ও মাঝিরা ইতস্তত: ఫి 3-3 কাপুর স্পেশালে কাশ্মীরের পথে 를 গমনাগমন করিয়া থাকে। কারণ মূল বজরাটি তীরে শুঙ্খলাবদ্ধ ভাবেই থাকে, সচরাচর গতিশীল নহে । আর পাকশালাটি রন্ধনাদি ও ইজি বা মাঝিদের বাসস্থানরূপে ব্যবহৃত হইম থাকে। উহাঙ্গের অঙ্ক বাসস্থান নাই। - ইতঃপূৰ্ব্বে কাঙড়ি নামক জিনিষটির সহিত পরিচিত ছিলাম না। অদ্য বজরায় অধিষ্ঠানকালে প্রথমেই উহা পরিলক্ষিত হইল, গলদেশবিলুম্বিগ প্ৰজলিত অঙ্গারবিশিষ্ট বেত্ৰমণ্ডিত মুখপাত্র বিশেষ। ঘথন হিমঋতুতে এ-প্রদেশ তুষারাচ্ছন্ন থাকে তখন ইহাই সৰ্ব্বদা দরিদ্র কাশ্মীরীদের বক্ষস্থলে বিরাজ করে । শ্রীনগর শহরে প্রায় পাচ-ছয় হাজার মুসলমান-জাতীয় ইজির বাস । ইহাদের ব্যবসায় নৌচালনা এবং সম্পত্তির মধ্যে নিজ নিজ বজরা কিংবা ডোঙা । উহারই ভাড়ায় তাহার। জীবনযাত্র নির্বাহ করিয়া থাকে। ইহার ধূৰ্ত্ত এবং ভুলিয়াও সভ্য কথা বলিতে চায় না। অনেকে বাবুচির কাজ ও শিপিয়াছে । ইহাদের রমণীরা পুরুষ অপেক্ষা কৰ্ম্মপরায়ণ ও স্বশ্ৰী, কি ও তদ্রুপ স্বশীল নহে । আমাদের প্রায় তিন দিকই গিরিমালা পরিবেষ্টিত । উহাজের উচ্চ চুড়াগুলি ডাল-হ্রদের স্বচ্ছ নীরে প্রতিফলিত হইয় এক অপরূপ দৃশ্বের স্বষ্টি করিয়াছে। ডাল গেট হইতে এই প্রণালীর মোহন পৰ্য্যস্ত প্রায় দেড় মাইলব্যাপী প্রশস্ত পাযাখমম বাঁধ-সংযুক্ত রাস্তাটি ( Strand ) আধুনা দুই বৎসর যাবৎ প্রস্তুত হইয়া ক্যারান বুলভার নামে অভিহিত হইয়াছে এবং রাস্তার অপর পাশ্বেই প্রাচীন হিন্দুমন্দির-শোভিত্ত শঙ্করাচাৰ্য্য বা তথ ত-ই স্থলেমান নামক পাহাড়টি বিরাজমান । ইদানীং এই রাস্তার ধারে মুন্দর স্বন্দর দ্বিতল বাড়ি প্রস্তুত হইয়াছে, তাহা ভাড়া পাওয়া যায়। আহারাজি কোনও প্রকারে সমাধা করিয়া বিশ্রামস্থখের ইচ্ছা ছিল, কিন্তু বিছানাপত্র, এমন কি বাঙ্গপেটরার অভ্যস্তরস্থ পরিধেয় বস্থাদি পৰ্য্যস্ত বৃষ্টির জলে ভিজিয়া গিস্কাছে । বেল প্রায় দুইট পৰ্যন্ত বর্ষণের পর আকাশ মেঘমুক্ত হইলে পীতবস্ত্রাদি বজরার ছাদে প্রসারিত করিয়া শিকাড়া সাহায্যে হ্ৰদৰক্ষে বিচরণের জন্ত প্রস্তুত হইতে লাগিলাম। এই হ্রদে তরঙ্গ না থাকায় এইরূপ জলবিহারে কোনরূপ বিপদাশঙ্কা নাই । অবশু বৃহত্তর উলার-হ্রদের কথা স্বতন্ত্র, কারণ উহাতে বাত্যাবিতাড়িত স্কয়ঙ্গের স্বাক্ট হয় ।