পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অ-সহযোগ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের একটি পুরাতন চিঠি রবীন্দ্রনাথ আমাকে গত ৬ই বৈশাখ এই চিঠিখানি লেখেন ---প্রবাসীর সম্পাদক । ] S শান্তিনিকেতন শ্রদ্ধাস্পদেষু ১৯১৬ থেকে ১৯১৭ খৃষ্টশক পর্যন্ত আমেরিক ও য়ুরোপে বক্তৃতায় নিযুক্ত ছিলুম। সেই সময়ে সংবাদপত্রযোগে খবর পাওয়া যেত,—মহাত্মাজী অসহযোগ প্রচার করচেন, একথা স্বীকার করব, আমার সেটা ভালো লাগে নি। তার কারণ, যেমন খিলাফতের লক্ষ্য ভারতবর্ষের বাইরে, অসহযোগের লক্ষ্য প্রায় তাই । ইংরেজরাজের সঙ্গে কোমর বেঁধে সহযোগই চালাই বা অসহযোগই জাগাই, তাতে আমাদের সাধনা কেন্দ্ৰভ্ৰষ্ট হয় । ওটা কলহ মাত্র, সেই কলহের পরিণামে সার্থকতা নেই। মহাত্মাজী দেশের লোকের মনে যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, অত বড়ো প্রভাব অপর পক্ষকে তারস্বরে অস্বীকার করবার নঙৰ্থক উদ্দেশে খরচ হয়ে যাচ্চে, এই কথা কল্পনা করে আমার মন পীড়িত হয়েছিল । সেদিন আমার মনে এই একান্ত কামনা জাগছিল যে মহাত্মাজী নিজের চারদিকে দেশের বিচিত্র শক্তিকে আহবান করবেন দেশের বিচিত্র সেবার কাজে । কারণ, দেশের শিক্ষা স্বাস্থ্য পূৰ্ত্তকাৰ্য্য বাণিজ্য—এই কৰ্ত্তব্যগুলিকে প্রবল বলে অকৃত্রিম নিষ্ঠার সঙ্গে চালনা করাই যথার্থ দেশকে লাভ করা, জয় করা । সকলে মিলে কেবল চরকায় স্বতে কাটায় দেশচিত্তের সম্পূর্ণ উদ্বোধন হ’তে পারেই না । জানি এই সঙ্কল্পে বাধার সম্ভাবনা যথেষ্ট ছিল—তখন সেই বাধার সঙ্গে সংগ্রাম করা সার্থক হ’ত । এতদিন ধরে সংগ্রাম ত যথেষ্টই হ’ল, দুঃখের তো অস্ত নেই। তার পরিবর্তে আজ রক্তহীন সাদা কাগজ পাওয়া গেল। সেই কাগজে শূন্তত যথেষ্ট কিন্তু রচনা কতটুকু ? সেই সময়ে আমি জগদানন্দকে ধে চিঠি লিখেছিলুম আমাদের কোনো প্রাক্তন ছাত্র সেটি কপি করে রেখেছিল । আজি দৈবাৎ সেই কপি আমার হাতে পড়েছে। লেখাটি আপনার কাছে পাঠালুম। প্রকাশ করার প্রয়োজন আছে যদি মনে করেন তবে ছাপাবেন । সংক্ষেপে আমার বলবার ছিল এই ষে পরের সঙ্গে অসহযোগ নিয়ে আন্দোলন না করে নিজেদের মধ্যে পরিপূর্ণ সহযোগের জন্যে দেশের বহুধা শক্তিকে একত্র করতে পারলে তাতে স্বরাজের যে রূপ অভিব্যক্ত হ’ত, সেই রূপটি হ’ত সত্য । ইতি ৬ বৈশাখ ১৩৪১ আপনাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক জগদানন্দ রায়কে লিখিত রবীন্দ্রনাথের চিঠি De Duinev Huizen N. H. সবিনয় নমস্কার নিবেদন— হল্যাণ্ডে একটি সুন্দর জায়গায় সুন্দর বাড়ীতে এসেচি। অদূরে সমুদ্র ; চারিদিকে বাগান ফলে ফুলে স্বরম, পার্থীর গানে মুখরিত। শরতের স্বৰ্য্যালোক এই মনোহর জায়গাটির উপর সোনার কাঠি ছুইয়ে দিয়েছে। যিনি গৃহকত্ৰী তিনি আন্তরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাদের যত্ন করচেন স্বতরাং দেবে মানবে মিলে যখন আমাদের আতিথে নিযুক্ত হয়েচেন তখন ক্রটি কোথাও থাকতে পারে না। প্যারিসে আমরা র্যার আতিথ্যে ছিলুম তিনিও আমাকে একান্ত স্বত্বে সমাদর করেচেন। তিনি খুব ধনী অথচ আহারে বিহারে সন্ন্যাসীর মত। মামুষের কল্যাণের জন্যে তার মনে যে সব সঙ্কল্প আছে তাতেই অহরহ তার সমস্ত শক্তি ব্যয় করচেন। এখানকার যারা বড়লোক মামুষের ইতিহাসকে সমস্ত ভাবীকালের মধ্যে প্রসারিত করে তারা দেখেন। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, দেশকালের ক্ষেত্র আমাদের পক্ষে অভ্যস্ত ছোট হয়ে গেছে, এই জন্যে আমাদের শক্তিকে আমরা বড়ো করে ফলাতে পারিনে। শক্তি যেখানে রস পাম্ব না, খাদ্য পায় না, সেখানে মরুভূমির গাছপালার মত ৰেবল প্রচুর কণ্টক বিকাশ করে।