পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ শেখার শক্তি আর থাকে না । মনোবিজ্ঞানও এ-কথার সমর্থন করে । এ-কথা যেন কেহ মনে না করেন যে, আমি তপস্যার কথা অস্বীকার করিতেছি । ভাল সাহিত্য চর্চা করিতে তপস্যার প্রয়োজন ; শিশুদেরও ভাল সাহিত্যে প্রবেশ-অধিকার দিতে হুইবে । কিন্তু যাহা প্রাণ মন দিয়া চাই, যাহা ভালবাসি, যাহার রস কিছু অনুভব করিতে পারিয়াছি আমরা তাহারই জন্ত তপস্যা করি । সাহিত্যের রসবোধ জাগ্রত হইবার পূৰ্ব্বেই যদি নীতিশিক্ষার মুখবাদান শিশুচিত্তে ভীতির সঞ্চার করে তবে সে শিশুসাহিত্যকে দূর হইতেই নমস্কার জানায় । আমাদের দেশের অতি অল্প লোকেই যে পর-জীবনে লেখাপড়ার চর্চ রাখে, ভাল ভাল বইয়ের সহিত পরিচয় রক্ষা করে, তাহার কারণ শৈশবের এমনই একট। ট্র্যাজেডি । বর্ণপরিচয়ে বিপত্তির প্রভাব জীবনের ক্ষেত্রে অনেক দূর পর্য্যস্ত গড়ায় । অথচ কথাটা আমরা তেমন করিমু ভাবি না । ব্যাপারটা মুন্সে এই যে, যাহাকে লইয়া আমাদের কারবার, তাহার মনের খবর আমরা বিশেব রাখি না । শিশুসাহিত্যরচনার একমাত্র মাপকাটি শিশুমনের ক্রমবিকাশ ও সেই ক্রমবিকাশের প্রতোক পৰ্য্যাম্বের অস্থযায়ী প্রয়োজন । যেমন দেহের বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যের প্রয়োজন হয়, তেমনই মনোবিকাশের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রকারের সাহিত্যের প্রয়োজন হয়। দেহ একবার পুষ্ট হইলে তখন খাদ্যের ভেদাভেদের বিশেষ আবশ্যকতা থাকে না, কিন্তু সেঅবস্থায় পৌছাইবার পূৰ্ব্বে এ-বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার হয়। মনের ক্ষেত্রেও তাহাই ঘটে। সেইজন্যই এই শ্রেণীর সাহিত্য-রচনার এত সতর্কত চাই । এতক্ষণ শিশুসাহিত্য কথাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করিয়াছি ; উপরে যাহা বলিলাম তাহাতে বোঝা যাইবে ইহার মধ্যে শ্রেণী-ভাগ ও স্তর-ভাগ আছে, মনোবিকাশের ক্রম-অনুযায়ী এই শ্রেণী-ভাগ ও স্তর-ভাগ হয় । আমাদের দেশে সাধারণতঃ যৌবন বিকাশ হয় ষোল-সতের বৎসর বয়সে ; তাহার পূর্ব পর্যন্ত কালকে মোটামুটি তিনটি ভাগে আমরা ভাগ করিতে পারি ; পাচ-ছয় বৎসর পর্য্যস্ত অবস্থা শৈশব, পাঁচ-ছয় হইতে এগারবার বৎসর পর্য্যস্ত অবস্থা বাল্য ও তাহার পরে যৌবনারম্ভ \నిశి=- ఫి 滎 শিশুসাহিত্য ఫ్చి 3 পৰ্য্যস্ত কালকে কৈশোর বলা যাইতে পারে। স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে এই হিসাবে এক-আধ বৎসর কম-বেশী হইতে পারে, তলে মোটামুটি ভাবে এই হিসাব ঠিক বলিয়া লওয়া যাইতে পারে। এ-ক্ষেত্রে এ-কথা বলা প্রয়োজন যে, এই ভাগগুলি পরস্পরবিচ্ছিন্ন নহে, অর্থাৎ এক অবস্থা হইতে অন্য অবস্থার বিকাশ ক্রমশগতিতে হয় বলিয়া তাহদের কোন একটির সঠিক সীমা ও স্বপরিস্ফুট সীমা নির্দেশ করিতে পারা যায় না। তবে এ-কথাও ঠিক যে প্রত্যেক অবস্থারই এক একটা বিশেষত্ব আছে । কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালে উভয় অবস্থারই কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া বাক্ষ । শৈশবে শিশুর জগৎ একান্তই তাহার আপনাকে লইয়া ; তাহার খেলাধুলা সকল কিছুরই কেন্দ্র সে নিজে । সে যখন খেলার সঙ্গী চায় সে তাহার নিজের আনন্দের জন্ত, আত্মতুষ্টি, আত্মঅভিপ্রায় সিদ্ধ করিবার জন্য। ইহাকে স্বার্থপরতা বলিতে পারি, কিন্তু সে স্বার্থপরতা জীবনরক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। পরবর্তীকালে স্বাভাবিক বিকাশ লাভ করিলে শিশুচিত্ত এই স্বকৃত স্বার্থপরতা হইতে ধীরে ধীরে মুক্তিলাভ করে, স্বার্থপরতার গণ্ডি ধীরে ধীরে বিস্তৃততর হইয়া পরার্থপরতা দেখা যায় ; শিশু সামাজিক জীব হইতে শেখে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই বিকাশের পথে বহু বাধাবিঘ্ন আসে; একদিকে হয় স্বার্থপরতা রক্ষা করিবার চেষ্টা চলে, না-হয় অসময়ে শিশুরু সামাজিক করিবার, ভদ্র করিবার প্রয়াস দেখা দেয় । তাহাকে নানারূপ নীতি শিক্ষা দেওয়া হয় ; অবিকশিত চিত্ত শিশুর নিকট এই শ্রেণীর শিক্ষার কোন মূল্য নাই ; ঠিক এই বয়সটায় সে নীতিবিধানের উদ্ধে। এই বয়সে মনের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের যোগ অভ্যস্ত বিকশিত অর্থাৎ পরবর্তী বয়সে ইন্দ্রিমবিকার ঘটিলে যে মানসিক নানাবিধ উপাধিদ্বারা আমরা অর্থ নির্ণয় ও বিচার করি, সেগুলির তখনও স্বষ্টি না হওয়াতে তখন প্রত্যক্ষ অনুভূতির মূল্য অনেক বেশী হয়। শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে মনোজগতের এই ব্যাপারটার মূল্য অনেকখানি । এই জন্তই শিশুসাহিত্যে প্রত্যক্ষ অনুভূতির খোরাক যথেষ্ট পরিমাণে থাকা প্রয়োজন । আমাদের দেশে শিশুসাহিত্যে ভাল ছবি থাকে না ; যাহ থাকে তাহা অত্যন্ত নিকৃষ্ট শ্রেণীর । অথচ চোখের সাহায্যে শিশু যেপরিমাণে শিক্ষালাভ করে, অন্য ইন্দ্রিমের সাহায্যে বোধ কৰি