পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t* কিষ্কিন্ধ্যার রাজ্য দান করিবেন । বালীর স্বার্থ, আপনার জীবনরক্ষা ; রামের স্বার্থ সীতার উদ্ধার । এইখানে স্বার্থে স্বার্থে বিরোধ রহিয়াছে । কিন্তু বালী বলিতেছেন, সীতার উদ্ধারের জন্য র্তাহাকে বধ করিবার প্রয়োজন ছিল না । তাহাকে বলিলে তিনি অনায়াসে সীতাকে উদ্ধার করিয়া রামের হস্তে সমর্পণ করিতে পারিতেন । রাম স্পষ্ট করিয়া এ-কথার উত্তর দেন নাই । উত্তরট বোধ হয় এই যে, তিনি যখন নিঃসহায় অবস্থায় সীতার অন্বেষণে বনে বনে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন, তখন তাহারই ন্যায় রাজ্যভ্ৰষ্ট ও নিঃসহায় সুগ্ৰীবের সহিত তাহার আগে সাক্ষাৎ হয়, অবস্থাসাম্যের জন্য সহজেই উভয়ের সখ্যবন্ধন হইয়াছিল। আমি মৃগ্রীবকে যে প্রতিশ্রুতি দিমাছি, তাহ কদাপি ভঙ্গ করিতে পারি না”—-এই উক্তিতে ঐ উত্তর অসুস্থত আছে । তারপর সহায়শূন্য বনবাসী ব্রহ্মচারী রামের সহিত দুৰ্দ্ধৰ্ষ বানরপতি বালী যে সখ্যবন্ধনে আবদ্ধ হইতে সম্মত হইতেন, তাহারই বা নিশ্চয়ত কি ছিল ? আর একটা কথা। পিতার প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য রাম বনবাসী হইয়াছিলেন । তিনি কি নিজের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিতে পারেন ? সত্যপালন রামায়ণের মূলমন্ত্র , উহার মুখ্য অর্থ, যে-বাক্য একবার উচ্চারিত হইয়াছে, তাহা কার্য্যে পরিণত করিতেই হইবে । ৩ । বালী বলিতেছেন, তিনি বানর ; বানরের মাংস ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিমের অভক্ষ্য ; অতএব রাম তাহাকে নিরর্থক হত্য করিয়াছেন । রাম এই অভিযোগের স্পষ্ট উত্তর দেন নাই ; বোধ হয় দেওয়া প্রয়োজন বোধ করেন নাই । ৪। বালীর সর্বাপেক্ষ গুরুতর অভিযোগ, রাম ধৰ্ম্মযুদ্ধের একটি সুবিদিত নিয়ম উল্লঙ্ঘন করিয়া তাহাকে বধ করিয়াছেন। রাম এই অভিযোগের উত্তরে যাহা বলিয়াছেন, তাহ দুই ভাগে বিভক্ত । প্রথমতঃ, তিনি বালীকে কেন বধ করিলেন, তাহার কারণ প্রদর্শন করিয়াছেন । তৎপরে ধৰ্ম্মযুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করিয়া তাহার যে প্রত্যবায় হয় নাই, তাহাই বুঝাইতে প্রমাস পাইয়াছেন। আত্মসমর্থনের এই দুই ভাগ পৰস্পরবিরোধী। ( ক ) বালী কনিষ্ঠ ভ্রাতার জীবদ্দশায় তাহার পত্নী ఎ98S রুমাকে শয্যাসঙ্গিনী করিয়া মহাপাপে লিপ্ত হইয়াছেন ; মৃত্যুই উহার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত। এজন্য রাম স্বয়ং রাজা বা রাজা ভরতের প্রতিনিধিরূপে বালীকে বধ করিয়াছেন । এই যুক্তি বিচারসহ নহে। যদি মনে করি, বালী অনাৰ্য্য, একটা অনাৰ্য্য জাতির অধিপতি, তবে আর্য্যধৰ্ম্মনীতির দ্বারা তাহার বিচার করা কিরূপে দ্যায়সঙ্গত হইতে পারে? “কনিষ্ঠ ভ্রাতা পুত্রতুল্য, তাহার পত্নী পুত্রবধুস্থানীয়া”— ইহা আর্য্যজাতির ধৰ্ম্মশাস্ত্রের কথা । অনায্যের ইহা গুনে নাই, শুনিলেও মানিত না । বালীর কার্য্য কিষ্কিন্ধ্যায় পাপাচার বলিয়া গণ্য হইলে বানরের তাহার নিন্দ করিত, রাজ্যে বিদ্রোহ হইত। কবি নিন্দ বা বিদ্রোহের কোনই আভাস দেন নাই । যাহার রামের এই যুক্তিটির অনুমোদন করেন, তাহারা বলুন ভারতবর্ষের আইনে যখন জাল করিবার অপরাধে প্রাণদণ্ডের ব্যবস্থা ছিল না, তখন ইংলণ্ডের বিধান মতে ঐ অভিযোগে নন্দকুমারকে ফাসি দিয়া হেষ্টিংস ও ইম্পী কি কুকৰ্ম্ম ফরিয়াছিলেন ? ফলতঃ আয্য ও অনাধ্য, সভ্য ও অসভ্য, প্রবল ও দুৰ্ব্বল--ইহাদিগের সংস্পর্শে ও সংঘর্ষে ন্যায়ধৰ্ম্মের এই প্রকার ব্যভিচার অহরহই ঘটিম থাকে । আবার আমরা ধরিয়া লই, বালী সত্য সত্যই পঞ্চনখ বানর, অর্থাৎ পশু । তবে তাহার প্রতি শাস্ত্রোক্ত বিধির প্রয়োগ কি একটা অধৌক্তিক, হাস্যঞ্জনক ব্যাপার নহে ? পশুদিগের কি বিবাহপ্রথা বা গম্যাগম্য বিচার আছে ? একটা বানর “সনাতন ধৰ্ম্ম” ত্যাগ করিয়াছে, ইহার অর্থ কি ? (খ ) রাম ধৰ্ম্মযুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছেন, এখন আমরা এই অভিযোগের উত্তর পাইতেছি । বালী শাখামূগ, পশু । তিনি মৃগয়ার কথা তুলিয়াছেন, রামও মৃগয়ার দৃষ্টাস্ত দ্বারাই আত্মসমর্থন করিতেছেন। মৃগয়াতে ধৰ্ম্মযুদ্ধের কোন বিধানই প্রযোজ্য নহে। বালী একটি নিষেধবচন উল্লেখ করিয়া রামের নিন্দ করিমাছেন ; রাম আরও কয়েকটি নিয়মের প্রতি ইঙ্গিত করিয়া বলিতেছেন, পশুবধে সেগুলি নিয়তই লভিঘত হইতেছে, তাহাতে মৃগয়াকারীদিগকে কোনও দোষই স্পর্শ করিতেছে না। রামায়ণের কবি অনাৰ্য্য জাতিসমূহকে বানর ভল্লুক ইত্যাদি নামে আখ্যাত করিয়াছেন । কিন্তু তাহার বর্ণনা হইতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, ইহার প্রকৃতপক্ষে পশু ছিল